| বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২
এক কোটির অধিক বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে অর্থ উপার্জন দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন, একথা সরকারসহ বিভিন্ন মহল স্বীকার করেন। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম প্রধান রেমিট্যান্স লাভকারী দেশ এবং বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াল ছোবলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি মন্দাবস্থায় থাকার সত্ত্বেও বাংলাদেশী শ্রমিকরা গত বছর ২২ হাজার কোটি ডলার রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছে বলে ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২২ এ উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক সংখ্যা ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার।
কিন্তু সরকারী হিসাবের বাইরেও অসংখ্য বাংলাদেশী বিদেশে কাজ করে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের ১৫৯টি দেশে ৮৮ লাখ ৮৭ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এ সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি। কিন্তু রেমিট্যান্স যোদ্ধা খ্যাত এই প্রবাসীরা দেশে ফিরে কত ধরনের প্রতারণা জালে আটকা পড়ছেন সে খবর খুব কম মানুষই জানেন। সংবাদপত্রে অহরহ খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে প্রবাসীরা বিমানবন্দরে পা রাখার পর থেকে একের পর এক প্রতারণার জালে পড়ছেন। অনেকে এইসব প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হয়েছেন, তাদের অনুপস্থিতিতে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগে কারাযন্ত্রণা ভোগ করেছেন এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
জীবিকার আশায় বা উচ্চতর জীবনের আশায় দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার পর্যায় থেকে শুরু হয় এ প্রতারণা। সরকার এ ব্যাপারে অবহিত। সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সতর্ক করেন এবং দেশে ফিরে প্রবাসী শ্রমিকেরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন তা প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই, কাজের কাজ কিছুই হয়, প্রবাসীদের প্রতারণা জাল আরও বিস্তৃত হয়। বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশেও প্রতারণার শিকার হন, সরকার সেসব দেশের সরকারের প্রতি আহবান জানায় এবং সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসকে নির্দেশ দেয় বিদেশে বাংলাদেশীদের নিয়োগের সঙ্গে জড়িত প্রতারকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওইসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতারণা বন্ধ করতে। কিন্তু প্রবাসীদের অভিযোগ হলো, তারা দিনের পর দিন দূতাবাসে ধর্না দিয়ে কোনো দূতাবাস কর্মকর্তার কাছে তাদের অভিযোগ শোনাতে পারেন না।
সরকারের একটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রয়েছে, তারা শুধু বিজ্ঞপ্তি জারির মধ্যেই নিজেদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখেন। তারা বিদেশ গমনেচ্ছু শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন করতে বলেন, কোন দেশে কী চাকুরির সুবিধা আছে তা যাচাই বাছাই করার কথা বলেন, বিদেশে গমনকালে হয়রানি দূর করা, এবং দেশে ফেরার সময়ও বিমানবন্দরের হয়রানি দূর করার কথা বলে। তাদের উপার্জিত অর্থ বিভিন্ন সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করার কথা বলে, দেশে ফিরলে তাদের নিরাপত্তা দানের কথা বলেন, কার্যত তারা কিছুই করেন না। বিমানবন্দরে এমন কিছু কর্মচারী থাকে, যারা বিদেশফেরত কর্মী দেখলেই তাদের টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা ডেস্কের ব্যবস্থা করার কথা সরকার বলে থাকে, কিন্তু প্রবাসীরা সেই সহায়তা ডেস্ক খুঁজে পায় না অথবা পেলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা পায় না। প্রবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষা প্রদানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান, চিকিৎসা অনুদান, প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা এবং প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের বৃত্তি প্রদান করা কতকিছু সরকারের কর্মসূচির কথা বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন এবং এ দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের। কিন্তু সরকার তা বাস্তবায়িত করে না বলে তারা দেশে ফিরে অন্তত সাত ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। স্বল্পদিনে ছুটিতে দেশে ফিরে অথবা বিদেশে চাকুরি জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে অবস্থান করলেও তাদের জীবন হয়ে উঠছে অতিষ্ঠ, অরক্ষিত, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে তাদের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সেই দায়িত্ব কতটা প্রতিপালিত হচ্ছে?
Posted ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh