| বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
করোনা মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নেমে এসেছিল স্থবিরতা। একই কারণে বাংলাদেশে প্রবাসী কর্মীদের অর্থ প্রেরণ হ্রাস পেয়েছিল মারাত্মকভাবে। দেশের আমদানি ব্যয়ের সিংহভাগই পূরণ করা হয় প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ, অর্থ্যাৎ রেমিট্যান্স থেকে, কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল যে এভাবে রেমিট্যান্স কমতে থাকলে বাংলাদেশের পক্ষে গুটিকয়েক মাস পর জ্বালানি ও খাদ্যের মতো অত্যাবশকীয় পন্য আমদানি করা সম্ভব হবে কিনা। এই আশঙ্কা থেকে সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা প্রবাহ বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
এর মধ্যে অন্যতম ছিল হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ বন্ধ করতে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো ডলারের বিনিময় হার সমন্বয়, বিনা ফিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ এবং ২.৫ শতাংশ হারে প্রনোদনা। এর ফল পাওয়া গেছে এবং গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ প্রবাহ লক্ষ্যনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ২০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এই আয় আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। চলতি এপ্রিল মাসের ১৪ দিনে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৯৫ কোটি ৮৭৮ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে মার্চ ও এপ্রিলের রেমিট্যান্স প্রবাহ দেখে খুব বেশি আত্মতুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।
কারণ ঈদ বা যেকোনো উৎসব উপলক্ষে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়, যা একেবারেই সাময়িক। অর্থনীতিবিদরা বলেন যে উৎসবের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। সাধারণত কোনো দেশের অর্থনীতিতে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা আবশ্যক। ২০২১ সালের শেষদিকে রিজার্ভ এত কমেছিল যে, তিন মাসের আমদানি ব্যয় যোগানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রাও ছিল না। বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মতো হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে, যা দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। করোনা মহামারীকালে বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার যে কমে গিয়েছিল, তাও সত্য। অনৈককে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বা স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে, এটাই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে তা জিডিপির কমবেশি ৬ শতাংশ। তবে বর্তমানে রেমিট্যান্স আয় প্রকৃত অর্থেই বৃদ্ধি পেয়েছে, নাকি সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে তার ভাবমূর্তি চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে রেমিট্যান্স আয়কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে তা নির্ণয় করা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ধরে রাখা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাকালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় প্রবাসীরা যেভাবে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসে তা কাটিয়ে নতুন করে অধিক জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার সাল থেকে যে প্রণোদনা চালু করেছে তা অব্যাহত রাখাও জরুরী, যাতে প্রবাসীরা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে নিরুৎসাহিত হয়। রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় প্রবাসীদের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রা ও দেশে প্রস্থানের সময় সম্মানের সঙ্গে দেখভাল নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে তাদের অর্থ বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ক্ষেত্র সৃষ্টি করা অবশ্য কর্তব্য। আমরা আশা করি, সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় যেমন বাড়বে, তেমনি এই অর্থ বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তবেই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বিকাশ আরও গতি পাবে।
Posted ১:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh