| বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
বিশ্বজুড়ে সর্বণাশা করোনা মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক খবর হচ্ছে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি। করোনাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ই সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থেই এখন দেশের আমদানি খরচ মেটানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও স্ফীত হচ্ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজেদের উদ্যোগে প্রবাসী আয় আসার পথ অনেক সহজ করেছে। প্রবাসী আয় বিতরণে এখন ব্যাংক শাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে। ফলে বিদেশ থেকে পাঠানো আয় দ্রুততম সময়ে সরাসরি চলে যাচ্ছে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনীতি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এ খারাপ সময়েও অর্থনীতিতে সুবাতাস ছড়িয়েছে প্রবাসী আয়। করোনার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো আয় দেশের অর্থনীতিতে বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। গ্রামীণ জনপদে থাকা প্রবাসীদের স্বজনেরা করোনার আর্থিক প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছেন। খারাপ সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমেনি, বরং বেড়েছে।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সদ্য সমাপ্ত ঈদুল আজহার আগে জুলাই মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে তারা ১২৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বসবাসরত তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বাড়তি অর্থ পাঠিয়েছেন। এছাড়া সরকারের নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনা ও করোনায় বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রিত থাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার আপাতত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি মহামারিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে প্রবাসীরা জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। গত জুন মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।
ফলে সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে ওই অংক ছিল এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে।এদিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। জুন মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার; প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ এ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেয়ার অফার দিচ্ছে। ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
যদিও করোনার কারণে কয়েক লাখ প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। যাঁরা প্রবাসে আছেন, তাঁদেরও আয় কমে গেছে। এরপরও বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ে যেন জোয়ার ছিল। দুই হাতে খুলে বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত এক অর্থবছরে প্রবাসীরা যে অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন, সেই অর্থে দেশে সাতটি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, পদ্মা সেতু তৈরিতে ব্যয় হবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রবাসী আয় দিয়ে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো ১০টি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে। বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি, বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের হয়রানি এখনো চলছেই। বিমান টিকিট পাওয়ার জন্য গভীর রাত থেকে অপেক্ষার চিত্র বদলায়নি। প্রবাসী শ্রমিকেরা যেন দেশ ফিরতে বা বিদেশে আসার সময় হয়রানির শিকার না হন, এদিকে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
Posted ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh