| বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ-নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা এবং গত ১৮ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশ বাহিনী যৌথভাবে হামলে পড়ছে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের উপর। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে-এমন বার্তা পেলেন না দেশবাসী ও বিদেশীরা। এছাড়া এমন এক সময় এই হামলা হলো-যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ঢাকায় সফর করছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলও সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছে।
ফলে বাংলাদেশের জন্য আগামীতে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে, এমনটি বলা যাবে না। এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ জানিয়ে হামলাকারীদের বলা হয়েছে জবাবহিদিতার আওতায় আনতে। উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জুলাই বিকালে রাজধানীর বনানীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা করে নৌকার ব্যাজধারীরা। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই রাস্তায় ফেলে তাকে উপর্যুপরি পেটানো হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি এই সফরের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু তাদের চোখের সামনেই হিরো আলমের ওপর হামলা হয়েছে। এটি তাদের কাছে পরিষ্কার একটি বার্তা। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এখানে কিছু বলবে না। এই তথ্য তারা তাদের প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। সেই অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
এসব ঘটনা অভ্যন্তরীণ হলেও বিদেশিদেরও চোখ এড়াবে না। অবশ্যই এটা তাদের কাছে নেতিবাচক বার্তা হিসাবে যাবে। এখানে বিরোধী দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। সেই অবস্থায়ও এই হামলা হতাশাজনক। নিশ্চয়ই প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এই হামলার ভিডিও দেখেছে। পত্রিকায় সংবাদ পড়েছে। গণমাধ্যমের এসব ডকুমেন্টকে তারা রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করবে। ফলে এসব ঘটনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ভালো কিছু নয়। নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থাহীনতা, হিরো আলমের ওপর হামলা এবং একটি নির্বাচনে মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখানে মানুষ ভোট দিতে যায় না এবং ভোটের প্রতি আস্থা নেই। কারণ মানুষের মনে এই ধারণা তৈরি হয়েছে, এখানে ভোটের নামে তামাশা হবে। এ অবস্থা হলে কে ভোট দিতে যাবে। এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় জাতিসংঘ। ঢাকায় নিযুক্ত সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস এব এক টুইট বার্তায় এই উদ্বেগের কথা জানান। সহিংসতামুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ সবার মৌলিক অধিকার।
সেটিকে রক্ষা করা উচিত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত ২৪ মে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের ভিসা দেবে না দেশটি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে-ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এসব বিষয়ে বার্তা দিতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্্েরর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। এরপরই এই হামলার ঘটনা ঘটল। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় নির্বাচনি ও রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে সরকারকে বড় ধরণের মাশুল গুণতে হবে।
Posted ৩:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh