| বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক সাহায্য গ্রহিতা রাষ্ট্র। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাহায্য গ্রহণ করে যাচ্ছে এবং সাহায্য গ্রহিতাদের তালিকার শীর্ষভাগে অবস্থান করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭,১০৬ বিলিয়ন ডলার সাহায্য গ্রহণ করে বাংলাদেশ বৈদেশিক সাহায্য গ্রহিতা হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।
গত প্রায় এক দশক থেকে অর্থ্যাৎ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকার বাংলাদেশকে স্বপ্লোন্নত দেশ বা ‘লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি’র মর্যাদা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের কাছে তদবির করছে এবং নিরোই একরফাভাবে ঘোষণা করে যাচ্ছে যে বাংলাদেশ শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র তা বলে না। বাংলাদেশ ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট বা আমদানি ও রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় অনেক বেশি। ফলে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্যে সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যয় করতে হয় এবং করোনাকালে রফতানি খাত অনেক পিছিয়ে ছিল, কিন্তু আমদানি খাতে ব্যয় বরং বেড়ে গিয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়া, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং করোনার ভ্যাকসিন কেনার ব্যয়।
এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং এমন আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছিল যে, বাংলাদেশ অচিরেই শ্রীলংকার পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছে। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ঋণের অর্থ পরিশোধ করার চাপ বেড়ে চলেছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকার রিজার্ভ মোটামুটি ঠিক রেখে এবং বাহুল্য পন্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যয় কিছুটা কমাতে সক্ষম হলেও এখনো ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি, বরং ডলার সংকট বাড়ছে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। কারণ চলতি আর্থিক বছরে আমদানি ব্যয় মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রেকর্ড ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আবারও টান পড়েছে।
রফতানি আয় সাড়ে ১৬ শতাংশ ও রেমিট্যান্স প্রায় ১৭ শতাংশ কমায় এ চাপ আরও বাড়ছে। রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কাও আছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক বছরে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে নেয়া কঠিন শর্তের ঋণ নিয়ে সরকার আরো বিপাকে পড়েছে। বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান যে বিপদে পড়েছে, সেই দৃষ্টান্ত আমাদের সরকারের সামনে রয়েছে।
বিপদ ওই দুই দেশের তুলনীয় না হলেও বাংলাদেশ একেবারে ঝুঁকিমুক্ত নয়। আগে বাংলাদেশ যে বৈদেশিক ঋণ করেছিল তা সাধ্যের মধ্যে ছিল বিধায় পরিশোধে সমস্যা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি মেগা ঋণ করে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মেগা সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়ছে দেশ। ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে কিছু ঋণ হয়তো জরুরী ভিত্তিতে পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে দাতাদের পক্ষ থেকে। বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে, তা থেকে বাঞ্ছিত পরিমাণের ঋণ পরিশোধ করার মধ্য দিয়ে এই চাপকে সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Posted ১২:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh