| বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতিতে শুধু অবৈধ ইমিগ্রান্টরাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে সমগ্র ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির মধ্যে অস্বস্থির সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধেও তার ভূমিকা ছিল ন্যাক্কারজন, যা ফুটে উঠেছিল দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশ দিয়ে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইমিগ্রেশন হ্রাস এবং ইমিগ্রেশন আইনের কঠোর প্রয়োগের কথা বলতেন।উৎকণ্ঠিত ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ট্রাম্পের উপর এত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল, যে ক্ষোভে বিদায় নিতে হয়েছে ট্রাম্পকে এবং আমেরিকান ইতিহাসে কুখ্যাত এক প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে তাকে। এবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনক্ষমতায় এসেছেন ত্যাগী রাজনীতিবিদ জো বাইডেন।
তার উপর বিশেষ করে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি ভরসা সবচেয়ে বেশি যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক কোটি দশ লাখ অবৈধ ইমিগ্রান্টকে বৈধতা প্রদান করে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা ও নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেবেন। এ ব্যাপারে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল সুস্পষ্ট। গত ২০ জানুয়ারী শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নীতিসহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নীতি পাল্টে দেয়ার কাজ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যে তিনি শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা ঘটানো বড় ক্ষতিগুলোই সংশোধন করবেন না বরং দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ইমিগ্রেশনের উপর ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশ বাতিল করে. বাইডেন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের উপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়াদে ডিপোর্টেশনের আদেশপ্রাপ্ত বিদেশিদের উপর থেকে ডিপোর্টেশন আদেশ স্থগিত এবং শর্তপূরণ সাপেক্ষে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দানের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
কিন্তু অবৈধ ইমিগ্রান্ট বা সামগ্রিকভাবে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটি যেমন আশায় অপেক্ষা করছিল যে, অবৈধদের ঢালাওভাবে বৈধতা দেয়া হবে। কিন্তু বাইডেনের নির্বাহী আদেশে যে ইমিগ্রেশন আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে সকল শ্রেনির অবৈধ বিদেশিদের বৈধতা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অতীতেও তা ছিল না। নতুন প্রস্তাবে আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দেয়ার যে আভাস দেয়া হয়েছে তাতে সকল অবৈধ ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রীনকার্ড পাওয়ার অধিকারী হবেন এমন কিছু বলা নেই। এমন অসংখ্য ইমিগ্রান্ট রয়েছেন, যাদের বসবাসের আইনগত বৈধতা বা কোন লিগ্যাল স্ট্যাটাস নেই, যেমন; যারা ট্যুরিষ্ট ভিসা নিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এদেশে রয়ে গেছেন, যারা স্টুডেন্ট ভিসায় এসে পড়াশোনা শেষ করার পর দেশে ফিরে না গিয়ে বৈধতা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন ক্যাটাগরির আওতা আবেদন করেছেন এবং কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে, তারা জো বাইডেনের প্রস্তাবিত ইমিগ্রেশন আইনের মধ্যে পড়বেন না।
এরই মধ্যে হোঁচট খেয়েছে বাইডেনের ইমিগ্রেশন আইনের একটি অংশ। ডিপোর্টেশনের আদেশপ্রাপ্ত বিদেশিদের ডিপোর্টেশন স্থগিত রাখার জন্য তার আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল টেক্সাসের এক আদালতে এবং আদালত বাইডেনের আদেশকে রদ করে দিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে যে, নতুন প্রশাসনের এমন স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই যে তারা হুট করেই ইতিপূর্বে জারি করা কোন আদেশকে অগ্রাহ্য করবে। এ থেকেই বোঝা যায় যে বাইডেন ইমিগ্রেশন নিয়ে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে যাই বলুন ন কেন এবং ইমিগ্রান্টরা ঢালাও বৈধতা পাওয়ার আশায় বুক বাঁধুক না কেন, বৈধতা লাভের জন্য আইনানুগ পথেই এগুতে হবে, এমনকি তা যদি অবৈধ ইমিগ্রান্টদের প্রতি অ্যামনেষ্টিও ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের সময় ৩০ লাখ অবৈধ ইমিগ্রান্টকে বৈধতা প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু তা নি:শর্ত ছিল না।
Posted ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh