যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটিগুলোর মধ্যে নিউইয়র্কে জীবনযাত্রার ব্যয় অধিক। আবাসন, খাদ্যসামগ্রী, সার্ভিসসহ সবকিছুর ব্যয় সাধারণ মানুষের আয়সীমার বাইরে। স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে এই সিটিতে। ফলে নিউইয়র্কের বহু বাসিন্দা বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের যে আটটি স্টেট থেকে লোকজন অন্য স্টেটে পাড়ি জমিয়েছে, তার অন্যতম ছিল নিউইয়র্ক।

নতুন তথ্যে দেখা যায়, এম্পায়ার স্টেট খ্যাত নিউইয়র্ক থেকে গত বছর এক লাখ দুই হাজার লোক অন্য স্থানে চলে গেছে। ইউএস সেনসাস ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা যখন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, তখন রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত টেক্সাস ও ফ্লোরিডায় লোকজন সংখ্যায় বেড়েছে। পরিসংখ্যানে অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুলাই মাসে নিউইয়র্কের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৯.৫৭ মিলিয়ন। অথচ মাত্র ১২ মাস আগে ছিল ১৯.৬৭ মিলিয়ন।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্টেট থেকে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের অন্য স্টেটে চলে যাওয়ার এটিই বড় ঘটনা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ জনবহুল স্টেটের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ০.৫ শতাংশ। একটি জরিপ অনুসারে, ২০২০ সালে কোভিড ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ২০২৩ এর জুলাই পর্যন্ত নিউইয়র্কের জনসংখ্যা ৬৩১,০০০ কমেছে। জনসংখ্যাবিষয়ক কর্নেলস প্রোগ্রামের এক গবেষণা অনুযায়ী, গত কয়েক দশক ধরে নিউইয়র্কে যত লোক এসেছে, তার চেয়ে বেশি লোক অন্যত্র চলে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়া হলো জনসংখ্যা কমার দিক থেকে দ্বিতীয় স্টেট্য। গত এক বছরে ক্যালিফোর্নিয়ার লোক কমেছে প্রায় ৭৫,৫০০ জন। সবচেয়ে বেশি লোকজনের সমাগম হওয়া দুটি স্টেট হলো টেক্সাস ও ফ্লোরিডা। এই দুই সেটটে লোক বেড়েছে যথাক্রমে ৪৭৩,৪৫৩ এবং ৩৬৫,২০৫ জন।

এছাড়া নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া এবং সাউথ ক্যারোলিনাও জনসংখ্যা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে ১১টি রাজ্যে গত বছর জনসংখ্যা বেড়েছে, তার একটি হলো নিউজার্সি। অথচ এক বছর আগেও এখানে জনসংখ্যা কমেছে। গত বছর এখানে ৩০ হাজার লোক এসেছে। জনসংখ্যাবিদ ক্রিস্টি উইলডার এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন মহামারি-পূর্ব অবস্থায় ফিরছে। আর মৃত্যু কমায় জাতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জন্মহার কমলেও মৃত্যুহার কমেছে প্রায় ৯ ভাগ। নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যার ওপর পরিচালিত এক জরিপ ফলাফলে দেখানো হয়েছে যে, নিউইয়র্ক সিটিতে একজন সিঙ্গেল প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিতে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে হলে তাকে বাষির্ক ১ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের বেশি আয় করতে হবে। এ আয় ক’জন নিউইয়র্কবাসীর আছে?

বেশির ভাগ লোকেরই নেই। অতএব তারা উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে নিজেদের মুক্ত করতে নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যা হ্রাসের এ প্রবণতা কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। এর একটি ধীর প্রক্রিয়া সবসময় ছিল, যা কোভিড সংক্রমণের পর ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুসারে সিটির মানুষের আয় সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও ২০২২ সালে তাদের মাথাপিছু আয় হ্রাস পেয়েছে। এর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি যুক্ত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আর্থিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি মানসিক চাপের মুখে পড়েছেন। হতে পারে যে বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক সিটিতে বসবাসে উচ্চব্যয় আরেকটি কারণ।

এখানে বাড়ির দাম এত বেশি যে মধ্যবিত্ত শ্রেনির নাগরিকদের পক্ষে এ সিটিতে বাড়ি কিনতে সক্ষম নয়। সিটি থেকে চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে রাজনীতিকেও দায়ী করেছেন। কেউ যদি রক্ষণশীল হন এবং নিউইয়র্কের উদারনৈতিক রাজনীতি পছন্দ না করেন, তাহলে তাদের পক্ষে এক ধরনের মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে কাটানো ছাড়া উপায় থাকে না। স্টেটের রাজনীতির এই অবস্থার সহসা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও অনেকে নিউইয়র্ক ছেড়ে গেছেন বা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।