| বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর থেকে সব ধরনের পণ্যের মূল্য কেবল বেড়েই চলেছে। যেমন পাইকারি ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম এ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ১১ বার এবং ১২ বার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দফা বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য তিন টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে চার টাকা ১৪ পয়সা। বিইআরসি একই সঙ্গে জানিয়ে রেখেছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য আরো এক দফা বাড়ানো হবে। অন্যদিকে লাফিয়ে বেড়েছে গাসের মূল্যও। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৭৪ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু জ্বালানি পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়নি। গ্যাসের আমদানি যেমন বাড়ানো হয়নি তেমনি কাটেনি গ্যাসের সংকটও। দেশের বহু এলাকার বাসাবাড়িতে দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাসের অভাবে চুলা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। গৃহিণীরা রান্না করতে পারছেন না। শিশুদের পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থজনেরাও থাকছেন খেয়ে না খেয়ে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রচন্ড সংকট এবং বিক্রির মাধ্যমে নগদ অর্থপ্রাপ্তিতে ঘাটতি ও বিলম্বের পাশাপাশি নানামুখী সমস্যার কারণে দেশে শিল্পখাতের উৎপাদন শুধু কমেনি, আশংকাজনকভাবে ক্রমাগত কমেও যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে জানানো হয়েছে, শিল্পে উৎপাদন হ্রাসের হার বর্তমানে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ, উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেক পরিমাণে। খবরে কয়েকটি শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য-পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গাজীপুরে বিদ্যুতের চাহিদা যেখানে ৩৬৭ মেগাওয়াট সেখানে সরবরাহের পরিমাণ ১৮৭ মেগাওয়াট। একইভাবে গাজীপুরে গ্যাসের চাহিদা যেখানে ৬৩ কোটি ঘনফুট সেখানে জোগানের পরিমাণ ৪০ কোটি ঘনফুট।
অন্য সব শিল্প এলাকায়ও চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমাণ অনেক কমই দেখা গেছে। যেমন নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে চার-পাঁচ ঘণ্টা। একইভাবে নরসিংদীতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা এবং ভালুকায় আট থেকে নয় ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। সাভারের হেমায়েতপুরে বিদ্যুতের চাহিদা যেখানে ১২ মেগাওয়াট সেখানে সরবরাহের পরিমাণ মাত্র চার মেগাওয়াট। এসব এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতিও অত্যন্ত নিম্নমুখী। যেমন নারায়ণগঞ্জে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টাই গ্যাসের চাপ থাকে শূন্যের কাছাকাছি। ওদিকে ৬৩ কোটি ঘনফুটের চাহিদার বিপরীতে গাজীপুরে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ৪০ কোটি ঘনফুট। এভাবেই গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি ও সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পের উৎপাদন যেমন কমেছে তেমনি কমে গেছে দেশের অর্থনৈতিক আয়ও। সব মিলিয়েই সংকটে বিপর্যস্ত হয়েছে শিল্প খাত। শিল্পের প্রতিটি খাতেই উৎপাদন কমেছে আশংকাজনক পরিমাণে। সম্প্র্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে কমে পণ্য রফতানি হয়েছে ৩৯০ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের।
অক্টোবর মাসে মোট হিসাবে রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকার সভাপতি বলেছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সব শিল্পকারখানারই উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এলসি বা ঋণপত্র খোলার বিষয়ে আমদানি নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তীব্র সংকটে রয়েছে। একই কারণে সমাজেও অসন্তোষ দেখা দেয়ার এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার অভাব সৃষ্টি হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্যই সরকারের উচিত খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশি জোর দেয়া, যাতে কোনো কারণে সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি না হতে পারে। তেমন অবস্থার নিশ্চয়তা দেয়া গেলে পরিবেশ যেমন স্বাভাবিক থাকবে, শিল্প-কারখানাগুলোতেও বর্ধিত পরিমাণে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। যে কোনো পন্থায় গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। একই সঙ্গে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে ভবিষ্যতের জন্যও।
Posted ৪:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh