| বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে মতভিন্নতা ছিলো বরাবরই। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তা চরম আকার ধারন করারও নজির রয়েছে। কিন্তু গোটা জাতিকে স্পষ্ট দু’টি ধারায় বিভক্ত করা কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিয়ে ক্যাপিটল হিল দখলের মতো অভিযানের ঘটনা ঘটেনি কখনো। অত্মঘাতি এই ঘটনার খল নায়ক ছিলেন তৎকালিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প। নানা কারণেই জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য সমালোচিত ও বিতর্কিত তিনি। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শুধু তিনিই নন গোটা রিপাবলিকান পার্টিকে ডুবিয়েছেন ট্রাম্প।
মধ্যবর্তী নির্বাচনেও অর্জিত হয়নি কাংখিত সাফল্য তারপরও থেমে নেই তিনি। গত ১৫ নভেম্বর তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। এদিকে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্প এবং তার দলের ধারণা ছিলো ডিমোক্র্যাটদেরকে শোচনীয় পরাজয়ের মুখে ঠেলে দিয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে জয়লাভের। তাদের সে স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেল। সিনেটে পুনরায় সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। অপরদিকে সামান্য কয়েকটি আসনের ব্যবধানে হাউজে বিজয়ের পথে রিপাবলিকান পার্টি। ফলে আগামী জানুয়ারিতে কংগ্রেসের নতুন অধিবেশন কেমন হবে এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতুহল বিরাজমান। ইতোমধ্যে হাউজের স্পিকার হিসেবে রিপাবলিকানরা মনোনীত করেছেন কংগ্রেসম্যান কেভিন ম্যাককার্থীকে। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যানের রাজনৈতিক অবস্থান কঠোর নয় বলেই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যত রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষেত্রে সংশয় যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সম্ভাবনা।
বিশেষ করে বিভক্ত কংগ্রেস সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে শাটডাউন এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে পারে রিপাবলিকানরা। তবে চূড়ান্তভাবে তা কার্যকর করতে পারবে না সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্যের কারণে। নতুন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা চেষ্টা করবে গর্ভপাত অধিকার এবং সন্তান রয়েছে এমন পরিবারে ট্যাক্স ক্রেডিট বৃদ্ধির বিল আইনে পরিণত করার। রিপাবলিকানরা এসব ইস্যুর পাশাপাশি সরকারের ব্যয়, ঋণ এবং বাজেট ঘাটতির বিষয়টি সামনে তুলে নিয়ে আসতে পারে। যা তারা করেছিলো প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ২০১০ সালে। এসব বিতর্কে জড়িয়ে রিপাবলিকানরা হাউজে শাটডাউন ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির হুমকি দিতে পারে। কংগ্রেসের প্রধান কাজ হলো ফেডারেল সরকারের সার্ভিস ব্যয় ও পরিকল্পনার জন্য বাজেট অনুমোদন করা। যেমন সোস্যাল সিকিউরিটি, সামরিক ব্যয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মেডিকেয়ার সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাজেট নির্ধারণ করা। সরকার যাতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনে অসম্মত হলে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের মতো কেন্দ্রীয় সরকার অচলাবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। তবে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট এবং সিনেট সহনশীল হলে প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদন জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন নব নির্বাচিত স্পিকার।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিগত দু’বছর তার শাসনামলে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন। তবে করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতিতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। বিগত ৪০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরণের মূল্যস্ফীতি চলছে। এসব কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে মহল বিশেষের এমন আশংকা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাতের আশংকা ছিলো জনমনে। কিন্তু কার্যত তা ঘটেনি। মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউজে নতুন যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই সহনশীল রাজনীতির পক্ষে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত রাজনীতিতে পুনরায় সহাবস্থান ও সহমর্মিতার বিষয়টি ফিরে আসবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা। ্আমেরিকানরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এখানে উগ্রতা ও বর্ণ বৈষম্যের কোন স্থান নেই। আর এ কারণেই একটি মহান রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে আমেরিকানদের পরিচিতি।
Posted ১:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh