| বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
আগামী শনিবার ২৬ মার্চ বাংলাদেশের একান্নতম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার সূচনা করে। হানাদার বাহিনীর এই হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তখনই দুর্বার প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বেতারে ঘোষিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তার এই ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ ৯ মাসের মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকা হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শাহাদাত বরণ করেন, অসংখ্য মানুষ আহত হন, বহু মা-বোন সম্ভ্রমহারাহন, সম্পদ-সম্পত্তির বেশুমার ক্ষতি হয়। এত কিছুর বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, যার প্রতীক্ষায় যুগযুগ ধরে অপেক্ষায় ছিল দেশের মানুষ। স্বাধীনতা যে কোনো জাতির জন্য পরম আকাঙ্খার বিষয়, আত্মপ্রতিষ্ঠার অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন, অর্থনৈতিক মুক্তি, বৈষম্যের অবসান ইত্যাদি ছিল স্বাধীনতার লক্ষ্য। এইসব লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যাশা নিয়েই জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বিপুল ত্যাগ ও মূল্যে স্বাধীনতার স্বপ্নের বন্দরে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছিল। শুরুতেই স্বাধীনতার তিনটি মৌলিক লক্ষ্যের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল।
এই তিনটি মৌলিক লক্ষ্য হলো, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এবং সাম্য, এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার, সুশাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত ছিল। গতবছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ছিল মানুষের স্বপ্ন। সেই লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে। এখন পর্যন্ত এই অঙ্গীকার-প্রতিজ্ঞা কথারকথাই হয়ে আছে রাজনীতি এখনো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানমূলক ধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উল্টো দোষারোপের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। গণতন্ত্র এখনো সোনার হরিণ। সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য নিখোঁজ প্রায়। অর্থনৈতিক মুক্তি সুদূর পরাহত। সবচেয়ে গভীর উদ্বেগের বিষয় এই যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিকে বিভক্ত করার এক সর্বনাশা তৎপরতা চলছে। জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভবপর হয়েছিল। বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন। স্বাধীনতা তখনই সুরক্ষিত থাকে যখন জাতি ইস্পাতকঠিন ঐক্যে দৃঢ়বদ্ধ থাকে। যারা জাতিকে বিভক্ত করতে তৎপর তারা মূলত স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করে তুলছে। স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
আমাদের রাজনীতি, নির্বাচন, শাসন ইত্যাদিতে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব আমরা বিশেষভাবেপ প্রত্যক্ষ করছি, এটা জাতির ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর উদ্বেগময় অশনিসংকেত। ক্ষমতা যখন মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় এবং ক্ষমতার জন্য কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা যখন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, তখন জাতির ভবিষ্যত নিয়ে শংকা জাগা স্বাভাবিক। বলা হয়, জনগণই দেশের মালিক, ক্ষমতার উৎস, অথচ বাস্তবতা হলো, জনগণের মালিকানা হাতছাড়া হয়ে গেছে। তারা আর এখন ক্ষমতার উৎস নয়। দেশে এখন একতরফা ও জোর-জবরদস্তিমূলক শাসন চলছে। এ ধরনের শাসনে জনগণের প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও মঙ্গল সাধিত হতে পারেনা। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিও দ্রুতায়িত হতে পারেনা। দেশবাসী এখনও স্বস্তি লাভ করছে না, জননিরাপত্তা অভাব নেই এবং সর্বোপরি আমাদের জাতীয় ঐক্য নেই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্য দেখতে চাই। আমাদের জাতি বিশ্বে সংগ্রামী জাতি হিসেবে নন্দিত। এ জাতির অন্তর্গত মানুষ শতশত বছর ধরে জাতীয় প্রতিষ্ঠা, স্বশাসন ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম ও যুদ্ধ করেছে তার অতীত অত্যন্ত উজ্জ্বল। জাতির ইতিহাসের মধ্যেই প্রেরণা রয়েছে, দিক-নির্দেশনা রয়েছে, ঐক্যবদ্ধ জাতি স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল, ঐক্যবদ্ধ জাতিই তার আকাঙ্খা ও প্রত্যাশাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। জাতিকে ফের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করতে হবে সব ধরনের দুর্নীতি, অপকর্ম ও অপরাধ নির্মূল করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে একটা গণজাগরণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। একান্নতম স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় ঐক্য ও পরমকরুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করি।
Posted ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh