| বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১
করোনা ভাইরাসের সর্বগ্রাসী বিস্তারে গত এক বছরে প্রায় ২৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও করোনা ভাইরাসের আক্রমন প্রতিরোধে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ব্যাপারে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে কিছু মানুষের মধ্যে অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু নিউইয়র্ক সিটিতেই হাসপাতাল ব্যবস্থার আওতাধীন ডাক্তার, নার্সসহ তিন লক্ষাধিক কর্মচারির মধ্যে ৩০ শতাংশ ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এটি শুধু নিউইয়র্ক নয়, বহু দেশেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পক্ষে তারা এক ডোজ ব্যাকসিন নেওয়ার পরও করোনা হয়েছে, দুই ডোজ নেয়ার পর হয়েছে, অতএব ভ্যাকসিন নিয়ে লাভ কি এসব যুক্তি প্রদর্শন করছেন।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এমনটি হতেই পারে। তবে কারো করোনা হোক আর না হোক, যত আগেই করোনা হোক, এক মাস হোক আর এক বছর হোক, কেউ করোনার শিকার হয়ে সুস্থ হয়েছেন তবু ভ্যাকসিন নেয়া জরুরী। এমন কি প্রথম ডোজের পর করোনা হলেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া আবশ্যক। বে করোনা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে গেলে অন্যান্যদের সংক্রমিত করার সম্ভাবনা। তাই সুস্থ হবার পর ইনফেকসাস পিরিওড শেষ হবার পর দ্বিতীয় ডোজ নিন। বিশ্বজুড়ে এখন বেশ কিছু ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে মডারনা, ফাইজার ও জনসন এন্ড জনসন।
বাংলাদেশে দেয়া যাচ্ছে, অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার AZD1222 ভ্যাকসিন নিয়ে নানা কথা উঠলেও বিশেষজ্ঞরা এই ভ্যাকসিন নিরাপদ বলেছেন। তবে মনে রাখতে হবে বৃটিশ গবেষণা থেকে সর্বশেষ যে তথ্য পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী এই ভ্যাকসিন ৬২ শতাংশ কার্যকর। অর্থ্যাৎ এই ভ্যাকসিন নিলে আপনার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ারর সম্ভাবনা শতকরা ৬২ ভাগ কমে যাবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হয়তো আরো কম। যুক্তরাষ্ট্রে এ ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শেষ হবার পর হয়তো এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে। এই কার্যকারিতারর প্রশ্নে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে – এই ভ্যাকসিন এখনো যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদন দেয়া হয়নি। একটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে সংখ্যাটা ৬১ শতাংশ কখনো ১০০ শতাংশ বা পুরোভাগ নয়। এর মানে ভ্যাকসিন নেবার পরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাবে। আর এই ভ্যাকসিন পুরোপুরি কার্যকর হয় দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের দশ দিন পর। সুতরাং এক ডোজ ভ্যাকসিন পাবার পরই যে মাস্ক ইত্যাদি ছুঁড়ে ফেলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে, বাইরে থেকে ঘরে এসে ফুরফুরে মেজাজে কানে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো – তা ঠিক হবে না।
আরব আমিরাতেও অনেকে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন – খুব অল্প কিছু ফাইজার ভ্যাকসিন বাদে ভ্যাকসিন সরবরাহের ৯৫ শতাংশ চীনের সাইনভ্যাক ভ্যাকসিন। এটার কার্যকারিতা ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। ওদের কিছু ভ্যাকসিন রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিন – ওটার কার্যকারিতা আরো কম। এই কথাগুলো বলছি এই কারণে যে – এক ডোজ ভ্যাকসিন পাবার পরই নিজেকে অপরাজেয় ভাবার কোনো কারণ নেই! দু ডোজ ভ্যাকসিন নেবার পরও আপনার কোভিড সংক্রমণ হতে পারে – তবে সেটা ‘মাইল্ড’ হবার সম্ভাবনা বেশি।
কেউ যদি ভ্যাকসিন না নেন বা আক্রান্ত হন, তা হলে তিনি অন্যান্য যারা ভ্যাকসিন নেননি তাদেরকে, বিশেষ করে নিজ বাড়ির লোকজনকে সংক্রমিত করতে পারেন। আগে যদি কেউ করোনা ভ্ডারিাসে সংক্রমিত হয়ে থাকেন তাহলে তাকেও ভ্যাকসিন নিতে হবে। প্রথম ডোজ নেয়ার পর করোনা হলেও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা কিছুতেই উচিত হবে না। তাছাড়া এমন কোন অসুখ নেই যার কারণে করোনা ভ্যাকসিন নেয়া যাবে না। ১৮ বছরের উপরে সবাই তা নিতে পারবেন। গর্ভবতী নারীরাও নিতে পারবেন, ব্রেস্টফিডিং মায়ে’রাও নিতে পারবেন। এখন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে বাছবিচার করার সময় নেই। ৬০ শতাংশ কার্যকারিতা শূন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। যেই ভ্যাকসিনই পাওয়া যায় তা নেয়া প্রয়োজন। ভ্যাকসিন পেলেই মাস্ক ইত্যাদি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ‘যা খুশি তা শুরু’ করাও অসঙ্গত হবে। মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্বও মেনে চলতে হবে।
Posted ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh