| বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩
বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রভাব কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর চেয়ে বড় বিষয় হলো এই ভিসা নীতি প্রমাণিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কীভাবে মূল্যায়ন করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জালিয়াতির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বর্তমান আওয়ামী সরকার তাদের গণতন্ত্র প্রীতি ও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যে বাগাড়ম্বর করে আসছিল, সেই জারিজুড়ি যে বিশ্বের কাছেও ফাঁস হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে তাও প্রতিফলিত হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে সরকারের গালে সজোর চপেটাঘাত পড়েছে। তবুও লাজলজ্জার ধারও ধারছে না বাংলাদেশ সরকার, যেন এই ভিসা নীতিও সরকারের একটি অর্জন। তবুও বাগাড়ম্বর চলছে। সরকার প্রধানের কথায় মনে বাংলাদেশ এক পরাশক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ, ইত্যাদি। একথা সত্য যে, বিশ্বের বহু দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির বহু পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশেও যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের আদলে নির্বাচনকে বিরোধী দলবিহীন ও ভোটারশূন্য এবং রাতের বেলায় বাক্স ব্যালট দ্বারা পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করে, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কারণ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর থেকে তাদের বিরোধী সকলের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে সাধারণ মানুষ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, হত্যা করে, গুম করে দলগুলোকে পঙ্গু করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ জানে যে, তাদের প্রতিপক্ষ কেউ নেই। সেক্ষেত্রে ভিসা নীতি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী স্বেচ্ছাচার ও তান্ডব রুখতে কতটুকু সহায়ক হবে সে সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন।
তবে সুশীল সমাজ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আশাবাদী যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত হলে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটবে। কারণ আওয়ামী দু:শাসন দেশের শেকড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এবং জনগণ পরিবর্তন চায়। তবে সুশীল সমাজের ধারণা, সরকার নির্বাচনে বাড়াবাড়ি করলে যুক্তরাষ্ট্রে পদক্ষেপমূলক কার্যক্রম শুধু ভিসা নীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি দিয়ে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই । এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানাতে চেয়েছে বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের নজর আছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আগ্রহ আছে। তারা বোঝাতে চেয়েছে যদি অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তাদের পদক্ষেপগুলো এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আমার আশঙ্কা আছে ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় রকমের চাপ তৈরি হতে পারে। তবে ভিসা নীতি ভীতির সঞ্চার করেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য এবং একটি সতর্কবার্তা। ভবিষ্যতই বলে দেবে ভিসা নীতি আসলে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশে।
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh