| বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
করোনা মহামারিকালে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে অপরাধ প্রবণতা। বিশেষ করে বন্দুকের গুলিতে খুনের ঘটনা পৌছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। বিভিন্ন রাজ্যে, ছোট-বড় শহর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতি দিনই বন্দুক হামলায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। বিগত প্রায় তিন দশকে হত্যাকান্ড ও অপরাধের ঘটনা কমে যাওয়ায় জনগণ ছিলো অনেকটাই স্বস্থিতে। সম্প্রতি খুনের ঘটনা শান্তিপ্রিয় মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে নূতন করে। অবাধে চলছে অস্ত্র বিক্রির রমরমা ব্যবসায়। মহামারি সহ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হতাশা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ কর্মকান্ড। জাতীয়ভাবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ না হওয়ায় নানা ফাঁকফোকড় দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।
২০২০ সালে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে সাড়ে ২১ হাজার মানুষ। ২০১৯ সালের তুলনায় যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর এমনই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এফবিআই। শুধু খুন নয়, আগের চেয়ে বেড়েছে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণও। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে খুনের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে এফবিআই। এফবিআইয়ের রিপোর্ট বলছে, ৭৭ শতাংশ মানুষ খুন হয়েছেন বন্দুকের গুলিতে। ২০১৯ সালে যা ছিল ৭৪ শতাংশ । সহিংস অপরাধের পরিমাণ ২০১৯ সালের চেয়ে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণাংশে অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে আগের চেয়ে। অস্ত্র বিক্রির হার সবচেয়ে বেশি টেক্সাসে। কিন্তু কীভাবে অপরাধ প্রবণতাকে বদলানো সম্ভব, তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট অভিমতে ্পৌছাতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভোটপ্রচারের সময় বলেছিলেন, অস্ত্র বিক্রি নিয়ে তার প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে। এফবিআইয়ের রিপোর্ট সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। নিউইয়র্ক সিটিতেও বৃদ্ধি পেয়েছে অপরাধ প্রবণতা। বিশেষ করে অপরাধীদের দ্বারা গতবছর সিটিতে প্রায় ৫০০ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ১৮১ টি বেশি। ২০১৯ সালে সিটিতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ৩১৯টি। সে বিচারে গত বছর সিটির অপরাধ চিত্রে সবচেয়ে সহিংস বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পুলিশ কর্তৃক মিনেসোটার মিনিয়াপলিসে পুলিশী তৎপরতায় জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার ঘটনার পর সর্বত্র প্রতিবাদ উঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। যদিও বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন যে, কেন হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল বা কী করণীয় ছিল। অনেকে যুক্তি প্রদর্শন করেন যে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীদের অনেক সময় আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধার মুখোমুখি হতে হয়। আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে চারদিক থেকে যে প্রতিবাদ উঠে এবং কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে তা আইনপ্রয়োগকারীদের নৈতিক মনোবল ভেঙে দেয়। ফলে এমনও দেখা যায় যে, অনেক সময় কোন অপরাধ ঘটতে দেখলেও আইন প্রয়োগকারীরা নিজেদেরকে অপরাধ দমন থেকে সরিয়ে নেন। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয় এবং সাম্প্রতিককালে সমগ্র দেশে হত্যাকান্ড বেড়ে চলার মধ্যে পুলিশের নিস্ক্রীয়তাও কম দায়ী নয় বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো, বিশেষ করে মানুষ যাতে আইনকে হাতে তুলে নিতে না পারে সেজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, পুলিশের প্রতি অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা এবং পুলিশের মাঝে স্বল্প নৈতিক মনোবল থাকার কারণে পুলিশ প্রো-অ্যাকটিভ হতে পারে না। কারণ তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তাদের উর্ধতনরা তাদের অ্যাকশনকে সমর্থন করবেন কিনা তা নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। পুলিশ অফিসাররা সাম্প্রতিক জামিন বিধি সংস্কারকেও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির একটি কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য ফ্যাক্টরের মধ্যে স্থায়ীভাবে বিদ্যমান মাদক, অর্থ ও আগ্নেয়াস্ত্রের সমন্বয়ও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে অবদান রাখছে। অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে দারিদ্র ও মানসিক স্বাস্থ্য, মাদকসেবনের মত বিষয়গুলো বিশেষভাবে জড়িত। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বেও হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনকি করোনা মহামারির আগেও দেখা গেছে যে মানুষ বেশি স্পর্শকাতর হয়ে গেছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কলহও হত্যাকাণ্ডে পর্যবসিত হচ্ছে, যা মহামারির সময়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বাইডেন প্রশাসন অতি দ্রুত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এমন প্রত্যাশাই জনগণের। নাগারিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দায় সরকারের উপরই ন্যাস্ত করেছে দেশের সংবিধান।
Posted ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh