| বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসা নি:সন্দেহে আনন্দের খবর। দেশওয়ারি রেমিট্যান্সপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র সামনে চলে আসায় অনেক জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি যতখানি আশাব্যঞ্জক ঠিক ততখানি দুশ্চিন্তারও বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরো অধিক হতে পারতো বহু আগেই এবং এক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে থাকা সম্ভব হতো যদি বাংলাদেশে প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকতো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ সৌদি আরব থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণের কাছাকাছি চলে এসেছে। মৌলিক যে পার্থক্যটি বিবেচনায় রাখতে হবে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে যেসব বাংলাদেশী রয়েছেন তাদের অধিকাংশই পেশাজীবী, তাদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, ফার্মাসিস্ট ইত্যাদি এবং অবশিষ্টরা দক্ষ, যাদের আয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যারা শ্রমজীবী হিসেবে যান তাদের আয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
সংখ্যার বিচারে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশীর সংখ্যা হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিয়োজিত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম, কিন্তু তারা যথেষ্ট আয় করেন। দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের কথা প্রতিটি সরকার বলে আসছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো অনুকূল পরিবেশ নেই। প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ বান্ধব নীতি সরকারের শিল্পনীতির ফাইলে ও সরকারি মিডিয়ার প্রচারণা এবং মন্ত্রী -আমলাদের বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া বাস্তবে অনুপস্থিত। সরকারি ঘোষণায় আগ্রহী হয়ে ইতিপূর্বে বহু প্রবাসী দেশে গিয়ে তথাকথিত “ওয়ান স্টপ সার্ভিস” পাওয়ার আশা করেছেন। কিন্তু কেউ তা পেয়েছেন এমন নজীর খুঁজে পাওয়া দায়। অনেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশ থেকে ফিরে এসেছেন, দেশে বিনিয়োগ না করার ব্যাপারে তওবা করেছেন, বন্ধুবান্ধবদের বলেছেন তারা ভুলেও যাতে দেশে বিনিয়োগের চিন্তা না করেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, কিংবা মালয়েশিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়াও নয় যে সেসব দেশ থেকে চুক্তিমত চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে পাততাড়ি গুটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে যারা আসেন তারা এদেশে স্থায়ী হওয়ার জন্যই আসেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীদে নব্ব¦ই শতাংশের অধিক সংখ্যকের দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো তাগিদ নেই।
তবুও তার্দে অনেকে উদ্ধৃত্ত অর্থ দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে। তারা জানেন তাদের পর তাদের সন্তানদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগসূত্র ক্ষীণ হয়ে যাবে। বিনিয়োগ সেক্ষেত্রে স্থায়ী যোগাযোগের সূত্র হতে পারে। কিন্তু সে সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায়। বর্তমান সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মধ্যে বেশকিছু পরিচিত মুখ দেশে বিনিয়োগ করেছেন। তারা কে? প্রত্যেকে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত। এবং তাদের অধিকাংশ বিনিয়োগ অর্থনৈতিক খাতে, অর্থ্যাৎ নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অথবা বিদ্যমান ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ে ।
কারণ ব্যাংকে লোকসানের কোনো ঝুঁকি নেই। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের উৎস দেশে বৈধ উপায়ে মুনাফা নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক নন, অথবা নিতান্তই পেশাজীবী নিরীহ প্রবাসী, যার উদ্ধৃত্ত অর্থও আছে, তারা বিনিয়োগ করতে গেলেই বুঝতে পারবেন কত ধানে কত চাল। প্রথমেই বলা হবে মন্ত্রী আমলাদের আত্মীয়স্বজনকে প্রস্তাবিত কোম্পানিতে ডাইরেক্টরের পদে বসাতে। তাদের পছনন্দমত স্থানে, তাদের স্থির করা দামে জমি কিনতে বলা হবে। ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে বলা হবে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বসবাসকারীরা এসব দেশের রীতিনীতি ও আচারআচরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠায় তারা কোনো চাপ, মিথ্যাচার, ঘুষের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেওয়ার মত মানসিক গঠনের মধ্যে থাকেন না। এসব বিষয়ে তিনি যদি তার ওপর মন্ত্রী-আমলাদের চাপিয়ে দেওয়া লোকজনের কথা না শোনেন তাহলে তার জীবন সঙ্গীন হয়ে ওঠার অনেক কাহিনিও জানা যায়। সরকার যদি আসলেই চান যে প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করুক, তাহলে তাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকতে হবে।
Posted ২:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh