| শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪
সরিষায় যদি ভূত থাকে, তাহলে সে ভূতকে তাড়ানো যায় না বা সেই ভূতের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন। ঠিক তাই হয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, তার ৮০ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাচারের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে মাত্র এক আর্থিক বছরে পাচার হয়েছে ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। অর্থ্যাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থপাচাারের ঘটনা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে এবং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনক হারে। সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসব পাচারের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু তারা পাচার রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেটাই চিন্তার বিষয়। দেশের ব্যাংকগুলোর আর্থিক লেনদেন কঠোর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং একটু বিচ্যুতি ঘটলেই আমানতকারী, ঋণ গ্রহীতা, আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েন। প্রতিটি লেনদেনে ব্যাংক সতর্কতা বজায় রাখে বলেই সকলে বিশ্বাস করে। তা সত্ত্বেও কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতির এত বিরাট ক্ষতি সাধন করছে? ব্যাংকগুলো যদি পাচার রোধে সরকারকে সহযোগিতা না করে তাহলে অর্থ পাচারের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা শুধু কঠিন নয়, বরং অসম্ভব। কারণ একবার যদি অর্থপাচার হয়ে যায়, তাহলে তা ফেরত আনা যায় না। জানা গেছে যে, ইতোমধ্যে যে অর্থ পাচার হয়ে গেছে তার একটি ক্ষুদ্রাংশ ফেরত আনতে সহযোগিতার জন্য দশটি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে। যদি এর মাধ্যমে কিছু হয় তাহলে দেশের জন্য শুভ সংবাদ এবং যারা পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধেও এক সতর্কতা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মনে করে যে পাচার হওয়া বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত আনার ব্যাপারে সরকার যদি আন্তরিক হয়, তাহলে অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সরকার কয়েকটি ক্ষেত্রে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতও এনেছে। কিন্তু তা বিপুলভাবে কেন পারছে না, সেটাই সন্দেহের ব্যাপার। এর কারণ যদি এমন হয় যে, যারা পাচারে জড়িত তারা সবাই সরকারি দলের লোক অথবা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট, তাহলে বলতে হবে যে, সরকার তাদের নিজেদের লোকদের দ্বারা পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে চায় না। পত্রপত্রিকায় নিয়মিতই মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের পুত্রকন্যা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায়, বেগমপাড়া গড়ে তোলা, বহুসংখ্যক অ্যাপার্টমেন্ট ও বাড়ির মালিক হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সরকার মুখ খোলে না। অর্থ পাচারের মতো ঘটনাকেও যদি সরকার রাজনৈতিক দৃষ্টিতে বিচার বিবেচনা করে তাহলে বলতেই হবে যে, সরকার এক সুক্ষ্ম একটি ভিষয়েও জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থকেই বড়ো করে দেখছে। এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
Posted ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh