| বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংবাদিক সম্মেলনে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক ফরিদ আলম। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সফলতা নিয়ে একটি প্রশ্ন করায় সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনটির কতিপয় সদস্য ফরিদ আলমের উপর হামলে পড়েন। তার সেলফোন এবং ম্যানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা। এসময় তার পাশে থাকা অন্যান্য সাংবাদিক ফরিদ আলমকে রক্ষা করেন। দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। তা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারতো। হামালাকারীরা অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন ফরিদ আলমকে। হামলার সময় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজকগণ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও জাতীয় সংসদের একজন্য সদস্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। ফরিদ আলম আক্রান্ত হলে তাদেরকে নিবৃত্ত করতে দেখা যায়নি মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃবৃন্দকে।
এসব চিত্রের ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঘটনার কোন কিছুই লুকানোর সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মতো একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনে নিমন্ত্রিত সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার বিষয়টি একটি নজিরবিহিন ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এতে ফুঁসে উঠে স্থানীয় বাংলাদেশী আমেরিকান সাংবাদিক সমাজ। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশে ক্ষোভ ঝাড়েন তারা। সাংবাদিক ফরিদের উপর হামলার ঘটনাকে কিছুতেই মানতে পারছেন না সাংবাদিকরা। শুধু কি সাংবাদিক সমাজ, সাধারণ মানুষের মাঝে এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সবাই দাবি করছেন হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। স্থানীয় সাংবাদিকগণ প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতি দু’টি শর্তারোপ করেছেন। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনা এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা। অন্যথায় সংগঠনটির সকল প্রকার অনুষ্ঠানাদি ও প্রচার প্রচারণা থেকে সাংবাদিকরা বিরত থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক সমাজ। এসব নিয়ে একটি বিব্রতকর অবস্থা বিরাজ করছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে।
ফরিদ আলমের উপর হামলার ঘটনা এমন একটি সময়ে ঘটেছে যখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদান উপলক্ষে। বিষয়টি নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন তিনি। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভার্চুয়াল সংবর্ধনায়ও অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টি গা সহা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঘটনা অকল্পনীয়। সাংবাদিক কেন? যেকোন মানুষের গায়ে হাত তোলা এদেশের আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবাধ। দেশটির সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতেই নিশ্চিত করা হয়েছে বাক-ব্যক্তি ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক সমাজে কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্টদেরকে সাংবাদিকরা প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। এ নিয়ে সাংবাদিকদেরকে নাজেহাল করার কোন সুযোগ থাকে না। গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা।
অথচ গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের দেশে বসবাস করে সাংবাদিককে আক্রমন করা হয়েছে। প্রশ্ন পছন্দ না হলে উত্তর এড়িয়ে যাওয়া যেতো। তা না করে ফরিদ আলমের উপর হামলা চালানো একটি অপরাধ মুলক ঘটনা। ফরিদ আলম আইনের আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা কমিটি গঠনের কোন সুযোগ নেই। তারপরও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে আতিথ্য গ্রহণ করছেন। ফলে বাংলাদেশে চলমান প্রতিহিংসার রাজনীতির বিস্তার ঘটছে বিদেশে। স্বদেশী কায়দায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা জড়িয়ে পড়ছেন হামলা মামলায়। সাংবাদিক ফরিদ আলমের উপর নগ্ন হামলা তার বর্হি:প্রকাশ মাত্র। আমরা এধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি বন্ধের জন্য দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
Posted ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh