| বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদেশে জন্মগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনুমোদন লাভকারী, অর্থ্যাৎ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী সংখ্যা ছিল ৯২ লাখ, যারা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সময়সীমা অতিক্রম করার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করার যোগ্য। মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ বিদেশি বৈধ ও অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তাদের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব চান এমন নয়। অনেকে গ্রিনকার্ড নিয়ে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করতে পারলেই সন্তুষ্ট। কিন্তু যারা নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে চান তাদের জন্য প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং এবং বেশ কিছু আইনি ধাপ পার হওয়ার পরই তা অর্জন করা সম্ভব। এসব পেরিয়েই সদ্য সমাপ্ত বছরে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিকত্ব প্রদানের রেকর্ড বলে জানিয়েছে ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিটিজেনশিপের আবেদন দ্রুততার সাথে নিস্পত্তি করার পদক্ষেপ জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়ার পর অন্যান্য বছরের চেয়ে গত বছর বেশি সংখ্যক আবেদনকারীর সিটিজেনশিপ অনুমোদিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও যাতে বিবেচনাধীন আবেদন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে বাধাগুলো অপসারণ করা হয় তাহলে আবেদনকারীদের দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করতে হবে না বলে ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ইউএসসিআইএস এর হিসাবে দেখা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ মাস মেয়াদে মোট ৯৬৭,৪০০ জন বয়স্ক ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জনের শর্তাবলী পূরণ করে সমগ্র দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন অফিস ও ইমিগ্রেশন আদালতে অনুষ্ঠিত ন্যাচারালাইজেশন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে আমেরিকান সিটিজেন হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন।
তবে নন-সিটিজেন মা-বাবার সন্তানসহ অন্যান্য ন্যাচারালাইজেশন মিলিয়ে ২০২২ অর্থবছরে মোট ১,০২৩,২০০ জন ইমিগ্রান্ট আমেরিকান সিটিজেন হয়েছে। গত বছর নাগরিকত্ব দেওয়ার সংখ্যাবৃদ্ধি ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস সহ সংশ্লিষ্ট ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, ইমিগ্রেশন মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করা এবং যোগ্য ইমিগ্রান্টদের সিটিজেন হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দানের মাধ্যমে ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার নির্দেশ দেওয়ার পর সিটিজেনশিপ গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর রেকর্ড অনুসারে গত বছরের আগে ১৯৯৬ সালে ১,০৪০,৯৯১ এবং ২০০৮ সালে ১,০৪৬,৫৩৯ জন ইমিগ্রান্ট আমেরিকান সিটিজেনশিপ লাভ করে। অধিকাংশ ন্যাচারালাইজড সিটিজেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে তিন থেকে পাঁচ বছর বসবাসের পর, যা নির্ভর করে তারা কিভাবে বসবাসের বৈধতা লাভ করেছেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে চাকুরি করেছেন, তারা বিশেষ ও দ্রুত ন্যাচারালাইজের প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ পান।
সিটিজেনশিপের আবেদনকারীদের সাধারণত প্রমাণ করতে হয় যে তারা ইংরেজি বলতে, পড়তে ও লিখতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রিনকার্ডধারীরা কোনো ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকারী না হলেও ন্যাচরালাইজড সিটিজেনরা ফেডারেল নির্বাচনে ভোটাধিকার লাভ করেন, আমেরিকান পাসপোর্ট পেতে পারেন, পরিবারের সদস্যদের স্পন্সর করতে পারেন। পাঁচটি দেশের ইমিগ্রান্টরা ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যায় সিটিজেনশিপ লাভ করেছে। দেশগুলো হচ্ছে: মেক্সিকো, ভারত, ফিলিপাইন, কিউবা ও ডোমিনিকান রিপাবলিক। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর কাছে বিভিন্ন পর্যায় ও ক্যাটাগরির ৮৭ লাখ ইমিগ্রেশন আবেদন বিবেচনাধীন ছিল, যার মধ্যে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করা থেকে রাজনৈতিক আবেদন ও ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন অন্তর্ভূক্ত।
বিবেচনাধীন সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন সংখ্যা ছিল ৬৬৬,৪৭৩টি। সিটিজেনশিপের বাধাগ্রলোর আবেদনকারীর ট্যাক্স বকেয়া থাকা সিটিজেনশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান একটি বাধা। অতএব যিনি সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করছেন, তাকে সতর্ক থাকতে হবে যে তিনি যাতে আইআরএস এর সকল পাওনা পরিশোধ করেন। আরেকটি বড় বাধা পারিবারিক ঝামেলা, অর্থ্যাৎ কেউ যদি আমেরিকান স্বামী বা স্ত্রীর মাধ্যমে সিটিজেনশিপ পেতে চান তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা যা বলছেন বা দলিলপত্র জমা দিয়েছেন তাতে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ আবেদন বাতিল হওয়া।
Posted ১:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh