| বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট ২০২২
আদম ব্যবসায় একটি অতিশয় পুরনো বাণিজ্য। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ ব্যবসায়। বিশেষ করে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ থেকে মানব ও নারী পাচার একটি লাভজনক ব্যবসায়। বিশ্বের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তির আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মানব পাচার। যুদ্ধ বিগ্রহ, বন্যা-খরা, মহামারির কারণে জীবন ধারণের জন্য দরিদ্র মানুষ বেছে নেয় দেশান্তরীর পথ। সমুদ্র, পাহাড়, পর্বত, বনজঙ্গল পেরিয়ে মানুষ পাড়ি জমাতে চায় উন্নত দেশে। এক্ষেত্রে কোন বাধা বিপত্তিই তাদেরকে আটকাতে পারে না। বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র জন গোষ্ঠি স্রোতের মতো ছুটে যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দিকে।
বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক ও দৈব-দুর্বিপাকে কখনো কখনো দেশান্তরী বা অভিবাসন প্রত্যাশীদের যাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বরাবরই একটি মধ্য স্বত্বভোগী শ্রেনী মুনাফা লুটে থাকে। আর এই মধ্যস্বত্বভোগীরাই হলো আদম ব্যবসায়ী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আদম ব্যবসায়ীরা অমানবিক আচরণ করে থাকে। বেছে নেয় নৃশংস-নির্মম পথ। আদম ব্যবসায়ীরা মূলত একটি মাফিয়া চক্র। এদের আন্তর্জাতিক নেট ওয়ার্ক কাজ করে বিভিন্ন দেশে। সুযোগ বুঝে এরা হয়ে উঠে সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে আদম ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম। করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার কারণে দক্ষিণ আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের দরিদ্র মানুষ মিছিল করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস সীমান্তে আসছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা তারা করছে সীমান্ত অতিক্রমের। ইতোমধ্যে দশ লক্ষাধিক মানুষ টেক্সাস সীমান্ত অতিক্রম করে নিউইয়র্ক সহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। টেক্সাস সীমান্ত অতিক্রমের পূর্বেই তারা খপ্পড়ে পড়ছে আদম ব্যবসায়ীদের। দরিদ্র-নীরিহ মানুষের কাছ থেকে এই চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব। অতীতে এধরণের ব্যবসা গোপনে পরিচালিত হলেও ইদানীং আদিম এ ব্যবসা চলছে প্রকাশ্যে।
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আদম পাচার এখন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। পাচারকারীরা যে শুধু মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করতে ইচ্ছুক লোকজনকে সীমান্ত অতিক্রম করতে সহায়তা করছে তা নয়, সুযোগ বুঝে বহু দূরের দেশ থেকে আগতদের সর্বস্ব লুণ্ঠন এবং নিপীড়ন চালিয়ে তাদের অর্থ ও জিনিসপত্র কেড়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাস সীমান্ত জুড়ে আদম পাচারকারী চক্রগুলো এমন জাল বিছিয়ে বসেছে যে তাদের মাধ্যম ছাড়া কারও পক্ষে সীমান্ত অতিক্রম করাকে অসম্ভব করে তুলেছে। এ প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এসব চক্র যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে দেওয়ার জন্য ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলো থেকে আগতদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৪,০০০ ডলার এবং যদি এশিয়া, আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশগুলোর হয়, তাহলে জনপ্রতি ২০,০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তারা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের ওপারে মেক্সিকোর বড় বড় পাচারকারী অপরাধী চক্রগুলোর কাছে জিম্মি এবং এই বৃহৎ চক্রগুলোকে বড় অংকের অর্থ না দিয়ে কোনো বিদেশিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করাতে পারে না।হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তদন্ত ফলাফল অনুযায়ী ২০১৮ সালে সীমান্তে আদম পাচারের যে ব্যবসা ৫০০ মিলিয়ন ছিল, এখন তা আনুমানি ১৩ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তারা মেক্সিকোর কিছু ভয়াবহ ও সহিংস মাদক পাচারকারী চক্রের সঙ্গেও তারা জড়িত। গত মাসে স্যান অ্যানোনিওতে ট্রেইলার ট্রাকের মধ্যে ৫৩ জন মাইগ্রেন্টের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আদম পাচারকারীদের নৃশংস পাচার নেটওয়ার্কের অংশ ছিল। ২০২১ সালের শুরু থেকে সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবল ঢেউ শুরু হয় এবং ১৭ লাখ বিদেশি সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা চালায়। এই বিরাট সংখ্যা পাচারকারীদের জন্য রমরমা ব্যবসার সুযোগ এনে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অবাধ সীমান্ত অতিক্রম ও টেক্সাস সীমান্তে আদম ব্যবসায় বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটিই আমেরিকানদের প্রত্যাশা।
Posted ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh