| বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট ২০২২
যেখানে অর্থ সেখানে আত্মসাত জালিয়াতি-প্রতারণা হবে না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। দরিদ্র দেশ হলে প্রতারণা বেশি হয়, সে তুলনায় উন্নত দেশে প্রতারণাা অর্থ আত্মসাতের ঘটনা কম ঘটে এটাই সাধারণ ধারণা। কিন্তু যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোভিড রিলিফ কর্মসূচির অর্থের হরিলুট হয়েছে, তাতে অর্থ আত্মসাত সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যান ধারণাই পাল্টে দিয়েছে এবং আত্মসাতকারীর সংখ্যা দু’চার নয়, লক্ষ লক্ষ এবং আত্মসাতকৃত অর্থের পরিমাণ আনুমানিক ১৬৩ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল সরকারকে এর আগেও এ ধরনের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ধরনের নগদ অর্থে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েচে।
কিন্তু অতীতে এত অধিক সংখ্যক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে বলে ইতিহাসে নেই। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে, এর বাইরেও ব্যবসা পুনরুদ্ধারের জন্য ফেডারেল কোভিড রিলিফ প্রদান করা হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীণ হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। সরকারের সদিচ্ছার সুযোগ নিয়ে প্রতারকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে কোভিড রিলিফ ফান্ড থেকে। সবচেয়ে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম ও আত্মসাত ঘটেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা উদ্ধার সহায়তার ক্ষেত্রে। যারা এ সহায়তা নিয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ২০ লাখই সন্দেহজনক।
কীভাবে তদন্তকারীরা এত বিপুল জালিয়াতির তদন্ত করবেন? ইতোমধ্যে তদন্ত পরিচালনা করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে। তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে দুই বছর আগে। কিন্তু তারা মনে করেন না যে লোকবল বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে তদন্তে জড়িত করা ছাড়া এ কাজ আদৌ শেষ করা সম্ভব। পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে করোনা মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এখানে করোনা মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেছে ১০ লাখের অধিক লোক এবং মোট সংক্রমিতের সংখ্যা সাড়ে ৯ কোটির বেশি। ক্ষতিগ্রস্থ ব্য ও ব্যবসার সহায়তার জন্য ফেডারেল সরকার দুই দফায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে, যার একটি বড় অংশ অসৎ ব্যক্তিদের হাতে পড়েছে। এ আর্থিক সহায়তার একটি অংশ মৃত, কারাবন্দি ও কল্পিত ব্যক্তিদের নামে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা।
তারা এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ফেডারেল সরকারের প্রায় বিনাসূদে দেওয়া দীর্ঘমেয়াদী ক্ষুদ্র ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই, অথবা শুধু সাইনবোর্ড টানানো আছে। মনে হয় প্যানডেমিক সহায়তার অর্থের বিপুল প্রবাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল প্রতারণা। অর্থ পাওয়ার জন্য শর্ত ছিল সহজ এবং তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে কোনো অনুসন্ধান ছিল না বললেই চলে। যার পরিণতি আমেরিকান ইতিহাসের এই বৃহত্তম আর্থিক প্রতারণা। এ যাবত ফেডারেল তদন্তকারীরা ১,৫০০ লোকের বিরুদ্ধে রিলিফ সহায়তা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন, যার মধ্যে ৪৫০ জনের বেশি লোককে দন্ড প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রতারকদের সংখ্যা বহুগুণ বেশি। লেবার ডিপার্টমেন্টের ইন্সপেক্টর জেনারেলের অফিসের এজেন্টরা ৩৯,০০০ প্রতারণার মামলার তদন্তে নিয়োজিত বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিস সম্ভাব্য প্রতারণামূলক ২০ লাখ ঋণ আবেদন খতিয়ে প্রতারকদের সানক্ত করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে তদন্তের পর যে মামলাগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে তাতে অনেকে মনে করছেন যে স্বল্প পরিমাণে ডলার চুরি করা হয়েছে এমন মামলাগুলোর ওপর তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বড় বড় অংকের আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা জোরদার করা হবে। চার মাস আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে প্যানডেমিক রিলিফ প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তির শাস্তি পাঁচ বছরের স্থলে ১০ বছরে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “যারা অর্থ প্রতারণা সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে, ‘আপনারা লুকিয়ে থাকতে পারবেন না।
আমরা অবশ্যই আপনাদের খুঁজে বের করবো। তার কথা যাতে বাস্তবে প্রমাণিত হয় এবং অর্থ আত্মাতকারীরা বিচারের আওতায় আসে এবং দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান করা হয়। যদি এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হয় তাহলে ভবিষ্যতে অসৎ ব্যক্তিরা জনকল্যাণের অর্থ নির্বিচারে আত্মসাত করতে সতর্ক থাকবে। বিলম্বে হলেও বিচার থেকে যাতে কেউ রেহাই না পায় তা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
Posted ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh