| বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যেসব মিশন রয়েছে সেগুলোতে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। পাসপোর্ট ইস্যু, নবায়ন, ভিসা প্রদানসহ বিভিন্ন কনস্যুলার সার্ভিসের জন্য যে ফি আদায় করা হয়, মিশনগুলো তার বড় একটি অংশই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে মর্জিমাফিক ব্যয় করেছে অথবা মিশনের বড় কর্তারা তা পকেটস্থ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি উদ্ঘাটিত হলেও এ ‘খরচ’কে ‘যুক্তিযুক্ত’ আখ্যা দিয়ে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে গুরুতর এই দুর্নীতি। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এটা সন্দেহাতীতভাবেই দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধিতে গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হলেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র এসব দুনীতির কড়া সমালোচনা করলেও বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতি প্রতিহত করতে কখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং দায়মুক্তি প্রদানের ঘটনা নতুন নতুন দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছেন, যার সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো। বাংলাদেশ মিশনগুলোর দুর্নীতি শুধু আদায়কৃত ফি আত্মসাৎ করার মধ্যে সীমিত নয়, বরং আত্মসাৎকে বৈধতা দেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নানা ফন্দিফিকিরও চলে। যার অন্যতম হলো, উন্নত দেশগুলোতে যখন বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদেরকে প্রটোকল দেওয়া থেকে শুরু করে হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের নামে বিপুল অর্থ গচ্চা দেন এবং ভূঁয়া ভাউচার তৈরি করে অর্থ পকেটস্থ করেন। খবরে আরো প্রকাশ পেয়েছে, মিশনগুলো পরিচালিত হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে।
প্রতিটি মিশনে রয়েছে ভিসা ও পাসপোর্ট সেকশন। এ সেকশনটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। পৃথক ২টি দফতর অভিন্ন অফিসে হলেও নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাছে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর বিদেশি মিশনের মাধ্যমে ভিসা-পাসপোর্ট ইস্যু করলেও এ বাবদ কোনো অর্থ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করেনি। বিষয়টিকে দুই মন্ত্রণালয়ের নিছক ‘সমন্বয়হীনতা’ বলে চিহ্নিত করে গুরুতর অপরাধটিকে গৌণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের দেয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে পাসপোর্ট ও ভিসা ফিসহ অন্যান্য আয় এবং মিশন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ একটি অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এটি ‘ইমপ্রেস্ট অ্যাকাউন্ট’ হিসেবে পরিচিত। এ অ্যাকাউন্ট থেকেই মিশনের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
তবে পাসপোর্ট ও ভিসা ফিসহ অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের হিসাব পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যা পরবর্তীতে ইমেপ্রেস্ট প্রদান করা হয়। অধিকাংশ মিশনের ইমপ্রেস্ট অনেক আগে নির্ধারিত হয়েছে। মিশনসমূহের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই মিশনের কনস্যুলার আয়সমূহ বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়। এটি স্বীকৃত পন্থা। বাংলাদেশের সংবিধান ও বিদ্যমান আর্থিক বিধি-বিধানমতে কোনো সরকারি দফতর কর্তৃক সরকারের পক্ষে আদায়কৃত সকল অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহের ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য। তাই মিশনসমূহে পাসপোর্ট ও ভিসা ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি কোষাগারে জমা প্রদান করার কথা। কিন্তু বিদেশস্থ মিশনসমূহের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রতিপালিত হচ্ছে না। সরকারি অর্থ ব্যয়ে বিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি ব্যতীত অন্যকোনো উপায়ে ব্যয় হলেই এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ও আত্মসাৎ। আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টরা যাবজ্জীবন কারাদ-, অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত হতে পারেন। অভিযোগটি গুরুতর। তফসিলভুক্ত অপরাধ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিৎ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে দেখা।
Posted ১:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh