| বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
নির্বাচিত সংসদীয় ধাঁচের সরকারও যে অগণতান্ত্রিক হয় তা নতুন করে প্রমাণ করেছে আড়াই মাসের কম সময় আগে নির্বাচিত বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশে টানা চতুর্থ দফা ক্ষমতায় আসীন হওয়ার রেকর্ড গড়েছে দলটি এবং সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতির পরিচালনার রেকর্ডও গড়েছে তারা। যে রেকর্ড তারা গড়তে পারেনি, তা হলো দেশকে গণতন্ত্র দিতে পারেনি। নির্বাচন ব্যবস্থাকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পারেনি এবং বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে পারেনি। পারেনি বললে ভুল হবে, তারা ইচ্ছা করেই করেনি। তারা কার্যত সংসদীয় একনায়কত্ব চালও করেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। গত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি মাত্র রাজনৈতিক দলের আধিপত্যবাদী ব্যবস্থা’র দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল এবং আগামী পাঁচ বছর তারা ক্ষমতায় থাকবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের তথা দলটির প্রধানের একক রাজনৈতিক আধিপত্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বিশ্বে খোনেই কোনো একটি দলের আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রায়ই এমন সব রাজনৈতিক ব্যাধির উৎপত্তি ঘটায়, যা সার্বিকভাবে দেশের সর্বণাশ ঘটায়। আওয়ামী লীগকে ঘিরে বাংলাদেশে একদলীয় ব্যবস্থার গোড়াপত্তন শুরু করেছিলেন স্বয়ং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাত শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে বাংলাদেশের জাতির পিতার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৫ সালে তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করে ‘বাকশাল’ নামে একদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা তার করুণ পরিণতি ঘটিয়েছিল। শেখ মুজিব ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ১৯৭৫ সালে এক অভ্যুত্থানে নিহত হলে আওয়ামী লীগ দুই দশকের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে ছিল। ১৯৯৬ সালে তারা মুখে বাকশাল একটি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে ভোটারদের তুষ্ট করে ক্ষমতায় আসার পর কার্যত যে আচার আচরণ শুরু করে, তা একদলীয় বাকশালী মনোভাব্রেই প্রকাশ ছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা আর রাখঢাক করেনি, তাদের একাধিক নেতার মুখে শোনা গেছে যে, তারা বাকশালের নীতিই বাস্তবায়ন করছেন। বিশ্বকে দেখানোর জন্য তারা ১৯৭৫ এর মতো বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেনি, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়নি, কিন্তু বিরোধী দলকে রাজনীতির বাইরে রাখতে এবং সংবাদপত্রের গলা টিপে ধরতে যা যা করা প্রয়োজন তারসবই করেছে। ফলে ২০০৯ সালের পর আর কোনো নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না করা নিশ্চিত করেছে এবং সংবাদপত্রে যাতে বিরোধী মতের কোনোকিছু প্রকাশিত না হতে পারে সে ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করেছে। অতএব নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বাংলাদেশ এখন কার্যত একদল ও এক নেতার দেশ। বাংলাদেশের বিরোধী দলবিহীন রাজনীি যে বহির্বিশ্বে দেশটির সুনাম ক্ষুন্ন করছে এবং দেশের অভ্যন্তরে বৈধতার সর্বনাশ করছে, তা নিয়ে বর্তমান সরকারের মাথা ব্যথা নেই। তাদের কথা কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক, তারা এমন মনোভাব প্রকাশ করছে এবং দম্ভোক্তি করে বেড়াচ্ছে যে তাদের কথাই কখনো মনেই হয় না যে তারা জনগণকে এক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, যেখানেই একটি নির্দিষ্ট দলের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়েছে এবং দেশ ক্রমে সার্বিক সর্বনাশের কবলে পড়েছে। বাংলাদেশ অনুরূপ কোনো পরিস্থিতিতে না পড়ুক আমরা সেই কামনা করি।
Posted ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh