| বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকারি দল একাকার হয়ে গেছে গত এক যুগের বেশি সময়ে । ফলে কার্যকারিতা হারিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো । অনিয়ম -দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে সরকারের উচ্চতর থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত ।
সরকারের নির্বিচার দমন পীড়নে এই অনাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদের সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে জাতি। দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান সরকারের আজ্ঞাবহ হলেও তাদের সমালোচনার সুযোগ ছিল। অন্য দিকে, নিরাপত্তা বাহিনীকে সরকার এমনভাবে ব্যবহার করেছে, যাতে সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কারো টুঁ শব্দ করার সুযোগ ছিল না।
এরই কুফল এখন ফলতে শুরু করেছে। রাষ্ট্রের সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট কিছু অভিযোগ এনেছে দেশটি। অন্যদিকে, পুলিশের সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়ে আদালত আদেশ দিয়েছেন। দুদকের তদন্তে দেখা যাচ্ছে, তিনি ও তার পরিবার বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। সরকারি চাকরি করে তার সারা জীবনের বেতন-ভাতা দিয়েও এর এক শতাংশ সম্পত্তি অর্জন করা সম্ভব নয়।
দু’জনই এমন একসময়ে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে দায়িত্ব পালন করেন, রাজনৈতিক কারণে যা বিতর্কিত। এ দু’জন শুধু দুটি বাহিনীর প্রধান ছিলেন না, তার আগেও সরকার তাদের বিভিন্ন বাহিনীতে শীর্ষ পদে কাজে লাগিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ বিজিবির প্রধান ছিলেন। পুলিশ প্রধান বেনজীর ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও র্যাবের প্রধান। বিরোধীদের ওপর ভয়াবহ পীড়নের অভিযোগ আছে তার দায়িত্বের সময়।
আজিজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, তিনি তার ভাইদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেছেন। দেশের সামরিক খাতে ভাইদের ‘কন্ট্রাক্ট’ পাওয়া নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছেন। এ ধরনের ‘অবৈধ’ কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এদিকে বেনজীরের অগাধ সম্পত্তি নিয়ে পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন এসেছে। তার ওপর ভিত্তি করে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ফিরিস্তি।
আদালত তার স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসেব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন।এ সরকারের আমলে কিছু লোক অবাধে অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়েছেন। তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পথে বসিয়েছেন। বিস্ময়কর হলো, তবু সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তাই ক্ষমতার অপব্যবহারের নজিরবিহীন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।বিগত এক দশক ধরে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর ভয়াবহ দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের ন্যূনতম নিরাপত্তা দেয়নি। সেই তুলনায় দেশের সাবেক শীর্ষ দুই নিরাপত্তাপ্রধানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত তথ্যপ্রমাণ বেরিয়ে আসার তাৎপর্য গভীর। ব্যক্তি হিসেবে দু’জন এখন সাধারণের কাতারে নেমে এলেও রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তাদের কর্মকাণ্ডে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। সরকারি দলের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রায়শ বলেন, অপরাধী যত বড়ই হোক তার বিচার হবে।
আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যদিও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো প্রতিষ্ঠানের দুই সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত চায় জনগণ। তারা আশা করেন, সরকার এ কাজে এগিয়ে আসবে। আরো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটো প্রতিষ্ঠানকে।
Posted ১২:৫৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh