সম্পাদকীয় | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। দুর্বৃত্তায়িত এবং অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুন্ঠন করে গড়ে উঠেছে নব্য ধনিক শ্রেনী। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অভাবে শ্রেনী বৈষম্য এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারে চলছে মহোৎসব। অপরদিকে ক্রমাগত বাড়ছে দারিদ্র। রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী অবাধে লুণ্ঠন করছে দেশের অর্থ। চিহ্নিত এই সিন্ডিকেট গত এক দশকে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে বিভিন্ন সংস্থার খবরে বের হয়ে এসেছে।
দেশের দরিদ্র মানুষের অর্থে তারা বিদেশে যাপন করছে বিলাসী জীবন। অর্থ পাচারকারী এসব প্রতারকের অনেকে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য ও রাজনীতি করলেও তাদের পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। সেখানে তারা আলিশান বাড়িতে বাস করছে। হাকাচ্ছে নামী দামী মডেলের গাড়ি। বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে তাদের সন্তানরা। বাংলাদেশের এসব অর্থপাচারকারীরা কানাডায় বেগমপাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে সাহেব নগর গড়ে তুলেছে। প্রতিষ্ঠা করেছে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য। শুধু এ দুটি দেশ নয়-যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, হংকং, সৌদি আরব, ভারত, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এরা একই কায়দায় অবৈধ অর্থ লগ্নি করেছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্র ড. আবদুল মোমেন দেশের অর্থ পাচারের জন্য আমলাদেরকে দায়ী করেছেন।
দেশ থেকে প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। অথচ পাচারকারীদের কোন শাস্তি হচ্ছে না। ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না পাচারকৃত অর্থ। পাচারকারীদের অনেকে একবারে দেশ ছেড়েছে। যখন তারা দেশে থাকে তখন তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার নজীর খুব কম। কিন্তু দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর সবার টনক নড়ে। ইন্টারপোলে জারি করে রেড এলার্ট। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকের ঋণ খেলাপি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় দুর্নীতিবাজরা যে অর্থ পাচার করে কানাডায় নিয়ে যায়, সেটা কানাডার পক্ষে বন্ধ করা কঠিন। মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কানাডার আইনকানুন যথেষ্ট কড়া। অর্থ পাচার এবং অবৈধ লেন-দেন বন্ধ করতে কানাডায় কাজ করে ফিনান্সিয়াল ট্রান্সেকশনস অ্যান্ড রিপোর্ট এনালিসিস সেন্টার অব কানাডা বা ‘ফিনট্রাক।’
এক্ষেত্রে বড় দায়িত্ব বাংলাদেশের। পাচারকারীদের অভয়ারন্য বলে খ্যাত কানাডায় বেগমপাড়া গড়ে উঠার পর সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে আসা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, যারা নাকি সেখানে পাচার করা বিপুল সম্পদ দিয়ে আয়েশি জীবন-যাপন করছেন। হঠাৎ করে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ কেবল কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে নয়, শোরগোল তুলেছে বাংলাদেশেও। টরন্টোতে বাংলাদেশি ‘বেগমপাড়া’ নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই অনেক কথাবার্তা চলছে। বলা হয় বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া বহু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন কানাডায়। তাদের নিয়েই গড়ে উঠেছে এই ‘বেগমপাড়া’। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের এসব দুর্বৃত্ত আস্তানা গেড়েছে। অঢেল অর্থ বিনিয়োগ করছে নানা ব্যবসায়। নগদ অর্থে কিনছে বাড়ি ও তৈরি করছে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। সম্প্রতি নিউইয়র্কেও এসব অর্থ পাচারকারীদের তালাশে নেমেছেন দেশপ্রেমিক প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এমতাবস্থায় অনেকে গা ঢাকা দিয়ে চলছে। য্ক্তুরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের উচিত দেশের এসব অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
Posted ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh