| বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যখন জীবন-সংকটাপন্ন, তখন দলমত নির্বিশেষে লাখো মানুষের দোয়া এবং শ্রদ্ধাই প্রমাণ করে যে, একজন রাজনীতিকের জীবদ্দশায় এ ধরনের সম্মান ইতিহাসে বিরল। এই গণ-অনুভূতি বাস্তব ও তাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এতে বোঝা যায় যে, স্থিতিশীল উন্নয়নগত নৈরাশ্যের ঘন অন্ধকারের মধ্যেও সমাজের গভীরে এক ধরনের নৈতিক মূল্যবোধ বেঁচে আছে। দেশের জনগণ এখনো বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে দেশ-জাতি ও দলের জন্য তাঁর মতো অভিভাবকের বড় প্রয়োজন। বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও রাজনীতিতে তাঁর উপস্থিতি আজ আর কেবল ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের বিষয় নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থেই জরুরি। তিনি এখন ক্ষমতার প্রচলিত সমীকরণে কেবল বিকল্প নন, বরং রাষ্ট্রের জন্য এক অপরিহার্য নৈতিক রেফারেন্স।
ব্যক্তিগত শোক, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও শারীরিক ভঙ্গুরতার মাঝেও তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে আপোসহীন গণতান্ত্রিক অবস্থান ধরে রাখা যায় এবং বিরোধীকে রাজনৈতিক শত্রু ভাবলেও কখনো ‘শত্রু-মানব’ হিসেবে গণ্য না করে মানবিক মর্যাদা দেওয়া যায়। এমনকি তাঁর চরম শত্রুরাও কখনো তাঁর নামের আগে ‘স্বৈরাচার’ শব্দটি যুক্ত করতে পারেনি; যা তাঁর গণতান্ত্রিক নিষ্ঠার এক অবিসংবাদিত দলিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আসলে ক্ষমতার পালাবদলের সরল কাহিনি নয়; এটি একটি পুনরুৎপাদিত ট্র্যাজেডি, যা বারবার ফিরে এসেছে স্বৈরশাসন, মানব পুঁজির কাঠামোগত অপচয় এবং স্থিতিশীল উন্নয়নগত নৈরাশ্যের রূপ।
এই ট্র্যাজেডির কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি তার ব্যক্তিগত শোক ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে ক্ষতবিক্ষত একজন নিঃসঙ্গ মানুষ। তা সত্ত্বেও তিনি জাতীয় সার্বভৌমত্বের আপোসহীন প্রতীক ও ভঙ্গুর গণতন্ত্রের শেষ কার্যকর নৈতিক মেরুদন্ড। ব্যর্থ রাষ্ট্র ও বিশ্বাসঘাতক রাজনীতির ধ্বংসস্তূপ থেকে বারবার উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তাকে বিশাল মানবে পরিণত করেছে। তাঁর লড়াই এখনো শেষ হয়নি। তা সত্ত্বেও তিনি মুক্তির স্পষ্ট প্রতীক। জিয়া-খালেদা অধ্যায়ের অবস্থান, বিশেষ করে বেগম জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বকে। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থান কোনো সাধারণ ক্ষমতার পালাবদল নয়; বরং এটি গভীর ব্যক্তিগত আঘাত থেকে একজন স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সাবজেক্টে রূপান্তরিত হওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তিনি রাজনীতিতে অবতীর্ণ হয়েই আঘাত করেছিলেন স্বৈরাচারকে। তার আপসহীন নেতৃত্বেই পতন ঘটেছিল একনায়ক এরশাদের সেচ্ছাচারিতাকে।
যখন ক্ষমতায় ছিলেন না তখনো তিনি চরম ঝুঁকি ও অসুস্থতা সত্ত্বেও দেশত্যাগ না করে তিনি জনগণের অর্জিত অসহায়ত্ব ও নৈরাশ্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। শেখ হাসিনার দ্বারা রাষ্ট্রীয় চরিত্রহননের মুখেও রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে প্রমাণ করেছেন যে, একজন নেতার নৈতিক পুঁজি পুরোপুরি ধ্বংস করা অসম্ভব। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কাঠামোগত পক্ষাঘাতের মধ্যেও নৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। বাংলাদেশের কলুষিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বেগম খালেদা জিয়া কেবল বিএনপির শীর্ষ নেত্রী নন, বরং রাজনৈতিক শালীনতার এক বিরল প্রতীক।
জিয়াউর রহমানের সততা ও মিতব্যয়িতার যে ভাবমূর্তি দলটির প্রাথমিক পুঁজি ছিল, তিনি তা ধারণ করে রাজনীতিকে সংঘাতের বদলে সংযমের পথে নিতে চেয়েছেন। একজন গৃহবধূ থেকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যাত্রায় তিনি নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতা অকপটে স্বীকার করে অভিজ্ঞদের সহায়তা চেয়েছেন, যা দুর্বলতা নয়, বরং রাষ্ট্রনায়কোচিত বিনয়ের লক্ষণ। ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান এবং ৫ সাফল্য এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন তাঁর জীবদ্দশায় এক বিরল অর্জন। তার অস্তিত্বই আন্দোলনকারীদের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল এবং এখনও তার অস্তিত্ব দেশবাসীর জন্য জরুরী। আমরা তার সুস্থতা কামনা করি।
Posted ১:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh