| বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাটাচ্ছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র উদীয়মান রাজনীতিবিদ ও তুখোড় বক্তা শরীফ ওসমান হাদির হত্যা প্রচেষ্টার ষড়যন্ত্র যে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা হয়েছিল তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।
সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো। হাদিকে গুলি করা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে রাজপথে। তার আগে হামলাকারীদের হাদির র্নির্বাচনী প্রচারকাজে জড়িত হওয়া, তার কাছাকাছি হওয়া এবং অবশেষে মোটরসাইকেলে বসে তাকে গুলি করা অত্যন্ত পরিকল্পিত ছক। এর পরের ঘটনাবলীও একই ছকের বর্ধিত অংশ।
দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নালিতাবাড়ি সীমান্ত এলাকায় পৌঁছানো, পথে একের পর এক বাইক ও মোবাইল পরিবর্তন ইত্যাদি কোনো সাধারণ পরিকল্পনা মনে করার কারণ নেই। এসব পরিকল্পনা প্রণয়নে যারা দক্ষ-অভিজ্ঞ, এটা তাদেরই কাজ। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত বলেও অনেকের ধারণা। তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করেছে বাংলাদেশেরই লোককে।
প্রত্যাখ্যাত ও পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা বিভিন্ন স্থানে ও অবস্থানে এখনো বহাল তবিয়েতে আছে। আছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা। পুলিশের সূত্রমতে, হাদির হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত তিনজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গুলি চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ফয়সাল করিম মাসুদ, চালক ছিল আলমগীর শেখ। ঘটনার আগে হাদিকে অনুসরণকালে এই দু’জনের সঙ্গে আরো একজন ছিল, তার নাম রুবেল।
সে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী। হাদির গণসংযোগকালে এই তিনজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে। তিনজনই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েক মাস ধরেই হাদিকে হামলার ছক তৈরি করা হচ্ছিল। দেশকে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মধ্যে নিক্ষেপ করাই ছিল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের আসল লক্ষ্য।
গুলিবর্ষণকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ও মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখ ভারতে পালিয়ে গেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা তারা ভারতে পালিয়ে গেছে। তাদের সম্ভাব্য অবস্থান শনাক্ত করতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া এবং নালিতাবাড়ি অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকে মানবপাচারে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করে ঢাকায় আনা হয়েছে। এদের নাম সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরণ দিউ। সূত্র মতে, আটকের পর এরা দু’জন জানিয়েছে, ওইদিন রাত দেড়টা-দুইটার দিকে দু’জন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে পাচারে সহযোগিতা করেছে। হামলাকারীরা ভারতে পালিয়ে যেতে পারে, এমন ধারণার বশবর্তী হয়েই তাদের পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে। সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এমনকি তাদের ধরার জন্য ৫০ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে। হামলাকারীরা ভারতে প্রবেশ করলে তাদের যাতে গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানো হয় এই বার্তা তাকে দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে হাদির ওপর হামলায় যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহৃত হয়েছে তার মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে। মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ঘাতক ফয়সাল ও মোটরবাইক চালক আলমগীর পালিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্ব হলো সকল তথ্যটি যাচাই করে ঘাতক ও বাংলাদেশে তাদের দোসরদের শণাক্ত করে আটক ও বিচারের সম্মুখীন করা। এক খবরে জানা গেছে, ফয়সালের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাদি মোদ্দাসির খানের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সুতরাং হাদির হত্যা চেষ্টার পেছনে দেশে এবং ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা সরাসরি যুক্ত। এ ব্যাপারে গভীর ও অনুপুংখ তদন্ত আবশ্যক। হাদির হত্যাচেষ্টার রহস্য যেকোনো মূল্যে উদ্ঘাটন করতে হবে। হাদির ওপর হামলা দেশের ওপর হামলার নামান্তর হিসাবে বর্ণনা করেছেন পর্যবেক্ষকরা। জুলাইযোদ্ধার ওপর হামলার অর্থ, জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর হামলা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। জুলাইযোদ্ধার ওপর হামলা সেই স্বপ্নের ওপর আঘাত হিসেবেই গণ্য। যেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তার পরদিন হাদির ওপর হামলা হয়েছে। নির্বাচন বানচাল ও গণতন্ত্রে উত্তরণ বাধাগ্রস্ত করা এর লক্ষ্য বলে অনেক মনে করছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভারতবান্ধব ফ্যাসিস্টদের পরাজয় ও পতন ঘটেছে। তাদের পরাজয়ের সঙ্গে ভারতেরও পরাজয় হয়েছে। এই পরাজয় ফ্যাসিস্টশক্তি ও তার প্রভূ ভারত মেনে নিতে পারেনি। শুরু থেকেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন ব্যর্থ করে দেয়ার চক্রান্ত তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এ চক্রান্ত সম্পর্কে আমাদের আরো সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।
Posted ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh