| বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সিটিতে পুলিশের গুলিতে দুই বাংলাদেশী তরুণ এবং দুর্বৃত্তের ধাক্কায় একজন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশী মালিকানাধীন একটি দোকানে ডাকাতি হয়েছে। ঘটনাগুলো ঘটেছে নিউইয়র্ক সিটি এবং মিশিগানে। এগুলো যে প্রথমবার ঘটেছে, তা নয়, বিভিন্ন সিটিতে বাংলাদেশীদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে।
নিউইয়র্ক সিটিতে যেহেতু বাংলাদেশী সংখ্যা অধিক, অতএব এখানে বাংলাদেশীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে বেশি। আশপাশের স্টেটগুলোর মধ্যে কানেকটিকাটের কিছু সিটি, পেনসিলভেনিয়ার বাংলাদেশী অধু্যূষিত ফিলাডেলফিয়ায় এবং জর্জিয়ায়ও এ ধরনের হামলা প্রায় নিয়মিত ঘটনা। প্রতিটি ঘটনা যদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে ইচ্ছাকৃত বা দায়িত্বহীনভাবে।
গত ২৭ মার্চ নিউইয়র্ক সিটির ওজোন পার্ক এবং এর দুদিন পর মিশিগানে সংঘটিত পৃথক দুটি ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক দুই বাংলাদেশী তরুণকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের বেপরোয়া আচরণ ও পেশাদারিত্বের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ২৭ মার্চ ওজোন পার্কে পুলিশ মানসিক ভারসাম্যহীন এক বাংলাদেশী তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। পুলিশের বক্তব্য ছিল যে ওই তরুণ একটি কাঁচি হাতে পুলিশের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাবে এগিয়ে আসছিল। পুলিশ তাকে নিস্ক্রীয় করার জন্য তার শরীরের অন্য কোথাও গুলি করতে পারত। কিন্তু তা না করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে এবং তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। মিশিগানের পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক বাংলাদেশী তরুণকে তেমন কোনো সতর্কতা উচ্চারণ বা আহত করার উদ্যোগ না নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে। দুই তরুণকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু সংঘবদ্ধ আকারে কোনো প্রতিবাদ হয়নি। ফলে এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে না তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
জ্যামাইকায় গত ৫ মার্চ এক বয়োবৃদ্ধ বাংলাদেশীকে এক কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্ত অকারণে ধাক্কা দিয়ে সাইডওয়াকে ফেলে দেয়। তিনির তার বার্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে গুরুতর আহত হয়ে তিনি পাঁচদিন পর হাসপাতালে মারা যান। সিটির ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলাদেশী ক্যাব চালক, দোকানি, এমনকি পথচারিদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবাস জীবনে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে যেসব বাংলাদেশী জীবিকার তাগিদে, পড়াশোনা ও উন্নত জীবনে আশায় আসেন, তাদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় সংঘবদ্ধ উপায়ে প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রায়ই দেখা যায় যে, যারা এভাবে হামলার শিকার হন, তাদের পরিবার ঘটনার পর সহসা শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন না।
বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যরা তাদের পাশে না দাঁড়ালে ঘটনা ঘটার কয়েকদিন পরই ধামাচাপা পড়ে যায়। সংঘবদ্ধ উদ্যোগ না থাকলে হামলাকারী পুলিশ হোক অথবা দুর্বৃত্ত হোক, তারা কমিউনিটির দুর্বলতা বুঝতে পারে এবং একটির পর একটি ঘটনা ঘটিয়ে চলে। সেজন্য ঘটনার রেশ না কাটতেই প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে কমিউনিটির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন ধরনের কমিউনিটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, প্রবাসীদের যারা বিভিন্ন সিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাকুরিতে নিয়োজিত, এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক ও আইনি প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় কমিউনিটি নেতা হিসেবে ভূমিকা রাখেন, তারা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে হামলা প্রতিরোধ ও প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। বাংলাদেশীদের সংগঠনগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা ধরনের আনন্দ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে এবং বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের পদ দখল করার প্রতিযোগিতায় জড়িত থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিপদ আপদে সংঘবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেভাবে হামলার শিকারে পরিণত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে এবং দোষীরা অবলীলায় পার পেয়ে যাচ্ছে, পুলিশ সন্দেহভাজন অভিযুক্তদের গ্রেফতারে উদ্যোগী পর্যন্ত হচ্ছে না, বাংলাদেশীদের সমন্বিত ও সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ জরুরী হয়ে পড়েছে। এজন্য কমিউনিটি সচেতনতা প্রয়োজন।
Posted ১২:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh