| বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার। গত মাসে শেষার্ধে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশন। করোনা মহামারির কারণে ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল সম্মেলনে চূড়ান্ত করা হয় দলটির প্রার্থীতা। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন, প্রেসিডেন্ট এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সিনেটর কামালা হ্যারিস মনোনয়ন পেয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে। পক্ষান্তরে পরের সপ্তাহে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান জাতীয় কনভেনশন চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কনভেনশন সম্পন্ন হয়েছে অনেকটা সাদামাটা ভাবে। সেখানে কোন ধরণের সমাবেশ হয়নি। রিপাবলিকান জাতীয় কনভেনশন ভার্চুয়াল হলেও হোয়াইট হাউজে হাজার দেড়েক সমর্থক নিয়ে নজিরবিহিনভাবে আনুষ্ঠানিক প্রার্থীতা গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পবিরারের সদস্যদের প্রাধান্য পূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী স্বল্প সংখ্যক মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে ঝড় উঠে ব্যাপক সমালোচনার। ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান উভয় দলে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। তবে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রচারনার সাথে কোন মিল নেই এবারের প্রচারনায়।
তারপরও গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। প্রতিদিনই নূতন নূতন সংবাদ আসছে জনমত জরীপের। এসব জরীপে ব্যারোমিটারের তাপমাত্রার মতো উঠা-নামা করছে ট্রাম্প ও বাইডেনের জনপ্রিয়তা। তবে ট্রাম্প আগের তুলনায় সমর্থনের দিক থেকে কিছুটা ইতিবাচক অবস্থানে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে উভয় দলের প্রার্থীর প্রাইমারী অনুষ্ঠিত হয় প্রথা অনুযায়ী। নিজ দলে ট্রাম্পের কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় তাকে মোকাবিলা করতে হয়নি প্রাইমারী। জো-বাইডেনকে রীতি মানতে অংশ নিতে হয় প্রাইমারীতে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণ সরাসরি প্রার্থীদেরকে ভোট দিতে পারেন না। ৩ নভেম্বর জনগণ ভোট দিবেন প্রেসিডেন্টশিয়াল ইলেক্টরদেরকে। এবছরের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিটি রাজ্যে ৩ নভেম্বর নির্বাচিত এসব ইলেক্টরগণ গোপন ভোটে নির্বাচিত করবেন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ৫৩৮জন সদস্যের মধ্যে যে দলের প্রার্থী ২৭০ভোট পাবেন সেই দলের প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্টকে আলাদাভাবে জয়ী হতে হয়না। যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তার রানিংমেট হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচিত বলে গণ্য হবে ভাইস প্রেসিডেন্ট। নানা কারণে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকানরা এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় জুটি জো-বাইডেন-কামালা হ্যারিসকে নির্বাচিত করবেন। না তারা আরো একটি মেয়াদকালের জন্য ট্রাম্প-পেন্সকে রাখবেন। কঠিন এ সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। আড়াই শতাধিক বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র এখন ব্যতিক্রমধর্মী এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অতীতে গৃহযুদ্ধ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আর্থিক মন্দা মহামারি সহ ভয়ানক অনেক সংকট অতিক্রম করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বড় ধরণের আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে দেশটি। প্রায় দু’লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও কোটি ছুই ছুই। বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ ১৩.৪ শতাংশে পৌছেছে।
আর্থিক মন্দার কারণে একধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে জনজীবনে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যবসায় বাণিজ্যে নেমে আসা ধ্বস কবে কখন কাটবে সবই অনিশ্চিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিগত সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে দেশের রাজনীতি পড়েছে হুমকির মুখে। রাজনীতি এখন আর ঠিক আগের জায়গায় নেই। ট্রাম্প ওলোট পালট করে দিয়েছেন সবকিছু। তার আমলে যুক্তরাষ্ট্র বর্হিবিশ্বের যুদ্ধ বিগ্রহে তেমনভাবে না জড়ালেও আভ্যন্তরীন রাজনীতি ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড সমালোচিত হয়ে আসছে ব্যাপকভাবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুশীলন থেকে তিনি নিজেকে অনেকটাই দূরে রেখেছেন। রাষ্ট্রীয় নির্বাহী বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের বিপক্ষে ও প্রকাশ্যে অশোভন অবস্থান নিতে কসুর করেননি তিনি। ফলে নিজ দলেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প।
সবকিছু মিলিয়ে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ট্রাম্প অনেকটাই চাপে আছেন। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস মহামারিকে গুরুত্ব না দেয়ায় দেশে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে এমন অভিযোগের তীর তার প্রতি বর্ষণ করে চলেছেন সাধারণ মানুষ। পক্ষান্তরে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন অনেক সহজ সরল ও জনবান্ধব। তার রানিংমেট হিসেবে কামালা হ্যারিসকে নিয়েও নেই তেমন কোন বিতর্ক। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভোট ব্যাংকের ভোট তাদের পক্ষে যেমন যাবে, রিপাবলিকান ভোট তেমনি পড়বে তাদের প্রার্থীর অনুকূলে। এক্ষেত্রে ভাসমান ভোটাররাই নির্ধারণ করবেন চূড়ান্ত ফলাফল। তারপরও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে রয়েছে সংশয়। বিশেষ করে ডাকযোগে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে চলছে বিতর্ক। উভয় দলই ভাবছে এতে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তবে যেভাবে যে প্রক্রিয়াই হোক না কেন-নির্বাচনে সঠিক প্রার্থী বেছে নেয়াই হবে ভোটারদের মুখ্য দায়িত্ব।
Posted ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh