| বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
নিউইয়র্ক সিটিতে সবাসকারী বাংলাদেশী সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সংখ্যাটি যে বিপুল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সংখ্যাবৃদ্ধির কারণও আছে। নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশ থেকে নবাগত যে কারো কোন না কোন ধরনের যোগসূত্র থাকা, যে কোন ধরনের কাজ পাওয়া, যাতায়াত ও চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইমিগ্রান্টদের মতো বাংলাদেশীদেরও আকর্ষণের প্রথম স্থানে পরিণত হয়। হয়েছেও তাই। এভাবে ক্রমে নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরোতেই বাংলাদেশীদের বসত গড়ে উঠেছে এবং পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশী মালিকানাধীন, গ্রোসারি, রেষ্টুরেন্ট, ডাক্তারের অফিস ও ফার্মেসিসহ বিভিন্ন সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বরোর মধ্যে কুইন্স, ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কস বরোতে তুলনামূলকভাবে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী থাকেন। এর মধ্যে আবার কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশীদের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ার কারণে তাদের মিলনকেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। সেজন্য জ্যাকসন হাইটসে ৭২, ৭৩ষ্ট্রিট এবং ৭৪ ষ্ট্রিটের আংশিক বলতে গেলে বাংলাদেশীদের দখলেই চলে গেছে। গত দেড় দশক থেকেই জ্যাকসন হাইটস সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের প্রধান মিলনস্থল। বাংলাদেশীদের দোকানপাট, রেষ্টুরেন্টের সমারোহের কারণে শুধু নিউইয়র্কবাসী বাংলাদেশী নয় বরং আপষ্টেট নিউইয়ক, নিউ জার্সি, কানেকটিকাট ও পেনসিলভেনিয়া থেকেও বাংলাদেশীরা প্রতি উইকএন্ডসে সপরিবারে এসে ভিড় করেন জ্যাকসন হাইটসে। কেনাকাটা করে নিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে যারা নিউইয়ের্কে বেড়াতে আসেন তাদের কাছেও জ্যাকসন হাইটস প্রধান আকর্ষণের স্থান। জ্যাকসন হাইটসে পা রেখে তারা বিস্মিত হন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান নগরীর বুকে বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি দেখে। সেই সিঙ্গারা-সমুচা, বিরিয়ানি ও কাবাবের সুবাস, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে চিৎকার-চেচামেচি, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পান চিবানো ও সিগারেট টানা। পানের পিক ফেলার ব্যাপারটিও কারো চোখ এড়ায় না, যে বিষয়টি নিয়ে এমনকি নিউইয়র্ক টাইমসের মতো সংবাদপত্রে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৮ আগষ্ট তারিখেও নিউইয়র্ক টাইমসে জ্যাকসন হাইটসকে নিয়ে দীর্ঘ একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদক মাইকেল কিমেলম্যান জ্যাকসন হাইটসের অতীত ও বর্তমানের চুলচেরা বৈশিষ্ট তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন যে এলাকাটি আকৃতিতে ছোট হওয়া সত্বেও ১৬৭ টি ভাষায় কথা বলে এমন ১ লাখ ৮০ হাজার লোকের বসবাস এখানে. বিশ্বে যার দৃষ্টান্ত পাওয়া কঠিন। বিপুলভাবে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ম্যানহাটানে যখন বাড়িঘর ও অফিস ব্লকের জঙ্গল গড়ে উঠছিল তখন তাদের স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলার সুযোগ দিতে উপশহর হিসেবে যে জ্যাকসন হ্ইাটসেকে গড়ে তোলা হয়েছিল সেখানে এখন শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যালঘু এবং বর্তমানে জ্যাকসন হাইটস ক্রমবর্ধমানভাবে দক্ষিণ এশীয়দের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালে জ্যাকসন হাইটসের একটি রাস্তার অংশবিশেষ যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার ফলে স্থানটিকে অনেকটা অলৌকিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। নাম দেয়া হয়েছে ডাইভারসিটি প্লাজা এবং নিউইয়র্ক টাইমসের মতে এটি প্রকৃত অর্থে জ্যাকসন হাইটসের ‘টাউন স্কোয়ার’। আশপাশে বহু রেষ্টুরেন্ট ও ফুডকার্ট, যেখানে স্বল্প মূল্যে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয়দের জন্য এটি একটি সমাবেশস্থল, ঘুরে বেড়ানো ও আ্ড্ডা দেয়ার এবং যার যার দেশের রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক করার উপযুক্ত স্থান। এ দৃশ্য নিত্যদিনের এবং তা দৃষ্টিতে পড়বে গভীর রাত পর্যন্ত। বৈচিত্র সকলে উপভোগ করে ক্লান্তিহীনভাবে। ব্যস্ত জীবনের মরুভূমিতে ডাইভারসিটি প্লাজা যেন প্রশান্তির মরুদ্যান।
Posted ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh