| বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
বিগত মাসগুলোতে বাংলাদেশের সরকার প্রধান এবং তার দলের নেতাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছিল যে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পরপর দুটি কলঙ্কজনক নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যত ক্ষমতা দখল করার পর দশটি বছর বাধাহীন ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে দু:শাসন ও লুণ্ঠনের পর পিঠের চামড়া বাঁচানোর জন্য হলেও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে সরকার। কিন্তু না, সরকার ও সরকারি দল তাদের পুরোনো চেহারায় ফিরে এসেছে। দেশবাসী যে তাদের অত্যাচার অবিচারে নিরবে নিভৃতে কাঁদছে, তারা সে কান্না না শুনে পরবর্তী নির্বাচনও যে আগের দুটি নির্বাচনের ঢংয়েই করবে, তা গত কয়েকদিনে বিরোধী দলের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর হামলা, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের দম্ভপূর্ণ কথাবার্তায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে দেশে যে গভীর রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে সেই সঙ্কটের অস্তিত্বই স্বীকার করছে না সরকার। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
কারণ দেশে বিরোধী দল নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের যে সংজ্ঞা বিএনপি সেই সংজ্ঞায় পড়ে না। সংসদে বিরোধী দল হওয়ার মতো প্রতিনিধিত্ব তাদের নেই। অতএব কোনো সংলাপ নয়, কোনো কেয়ারটেকার সরকার নয়। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন হবে। সব রকম বাধা মোকাবেলা করেই তারা নির্বাচন করবেন বলে সুদৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। একথা সত্য যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সংলাপ করে কোনো রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান কখনো হয়নি। কিন্তু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন যেকোনো মানুষ সংলাপের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারেন না। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শর্তহীন সংলাপের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সহিংসতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাসহ গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো উদ্যোগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিটার হাসের বক্তব্য এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপির সাথে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধী দল বলে গণ্য হয় না। শুধু তাই নয়, তিনি বলেছেন, কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, ওটা নিয়ে আমরা পরোয়া করি না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ’১৪ তেও পারেনি, ’১৮ তেও পারেনি, এবারো পারবে না। সমস্যা হলো, প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্বাচনের কথা বলছেন, সেগুলো শুধু যে দেশের মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য তা-ই নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও নজিরবিহীন কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন সারা দুনিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচন তো নৈশভোটের অবিশ্বাস্য উদাহরণ। বস্তুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এমন একটিও উদাহরণ এরা তৈরি করতে পারেননি। এবার ন্যূনতম পরিবেশ সৃষ্টির নিশ্চয়তাও তারা দিতে পারছেন না। এতদিন নির্বাচন কমিশন বলত, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুর মিলিয়ে বলছে, পরিবেশ যা-ই হোক নির্বাচন নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে হবে। তাদের হাতে অন্য কোনো অপশন নেই।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আহ্বানের বিষয়ে বিএনপি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা বর্তমান সরকারের সাথে কোনোরকম সংলাপের ধারণা আগেই নাকচ করে দিয়েছে। কারণ ’১৮-এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতারিত হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন খোদ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনও এক বিবৃতিতে চলমান প্রতিবাদে ধারাবাহিক সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। কিন্তু সরকারের মনোভাব এতটাই চরমে যে, তারা কারো কোনো বক্তৃতা বিবৃতিতে কান দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। অথচ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ করা কারো জন্যই শুভ হয় না। এটি হয়ে ওঠে প্রায়ই নিজেদের জন্যই আত্মঘাতী। বিশ্বে এমন দৃষ্টান্ত অসংখ্য। কেউ শিক্ষা নেয়, কেউ নেয় না।
Posted ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh