বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন সরকারের অধীনে হবে সে বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় রাজপথে রক্তপাত অনিবাযর্ হয়ে উঠেছে । রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদ্রেক ঘটেনি। আলাপ আলোচনার জন্য সংলাপে বসেননি তারা । তাদের অনেকের কাছেই সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ দেশ, জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা গণতন্ত্রের চেয়ে বড়। উন্নয়নের অজুহাত তুলে দেশকে স্বৈরতান্ত্রিক দেশের কাতারভুক্ত করা হয়েছে। প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা নির্বাচনকে। অনুগত নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করেই সরকারেরবিরোধী দলগুলোর নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর পর কড়া পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচনি তফশিল। এ তফশিলই যে চূড়ান্ত বিষয় নাও হতে পারে, সে বিষয়টি সুকৌশলে জানান দিয়েছেন সিইসি শিডিউল ঘোষণার ভাষণের অংশে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে পথ খুঁজে নেওয়ার আহ্বানের মাধ্যমে । তবে নির্বাচনের মূল তারিখ ঘোষণাকালে সিইসির আরেকটু সুযোগ ছিল কৌশলী হওয়ার ।
গত দুটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচন দুটি দেশে এবং বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। নৈশ ভোটে নির্বাচিত হয়েও সরকার পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় হয়েছে। এ পাঁচ বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে এ পাঁচ বছরে বিরোধী দল বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করেছে। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বারবার সংলাপে বসে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কৌশল নির্মাণ করেছে। দলটি গণতান্ত্রিক বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোকে তাদের দাবির যৌক্তিকতা অনুধাবন করাতে পেরেছে।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য ব্যতিক্রমীভাবে সক্রিয় হলে সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের র্যাবের ওপর স্যাংশন আরোপ এবং পরে বাংলাদেশের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাপ্রদানকারীদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি গ্রহণ করার পরও সরকার গত দুটি নির্বাচনের মতো দলীয় সরকারাধীনে আরেকটি ভোটারবিহীন ও কারচুপিযুক্ত নির্বাচনের আয়োজন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেনি। সরকার নির্দলীয় সরকারাধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবি মানতে রাজি হচ্ছে না। কারণ, সরকার জানে, নির্দলীয় সরকারাধীনে সংসদ নির্বাচন হলে ওই নির্বাচনে জয়লাভ করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
সেক্ষেত্রে অন্য কোনো দল বা জোট নির্বাচন জিতে সরকার গঠন করলে তাদের যেসব নেতাকর্মী দুর্নীতি করে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। এমন অবস্থায় হাতে ব্যালট পেয়ে স্বাধীনভাবে সিল মারার সুযোগ পেলে যে তারা কী করবেন, তা সরকার ভালো করেই জানে। এজন্যও সরকার স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে বলে মনে করার কারণ রয়েছে। যে কারণে দলীয় সরকারাধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে পারলে সরকার নিরাপদ বোধ করবে। নির্বাচনি শিডিউল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারদলীয় নেতারা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন। একদিকে সরকারদলীয় নেতারা বিএনপিকে ‘খুনি’ ও ‘সন্ত্রাসীদের দল’ হিসাবে আখ্যায়িত করছেন; আবার তারাই সে দলকে নিষিদ্ধ না করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করছেন। এসব লক্ষণ বিবেচনা করে মনে করা যায়, সাধারণ মানুষের সামনের দিনগুলো দুঃখের হবে। সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন না হলে দেশ এগিয়ে যাবে এক দীর্ঘমেয়াদি নৈরাজ্যের দিকে ।
Posted ৩:১৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh