| বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশে গুম, ‘ক্রসফায়ার,’ ও ‘এনকাউন্টার’ এর নামে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা এবং সরকার বিরোধী মত প্রকাশ করার কারণে ঢালাও গ্রেফতার ও জামিন অযোগ্য ধারায় বছরের পর বছর আটকে রাখাসহ অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন যে কি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছেছে সম্প্রতি তার প্রমাণ পাওয়া গেছে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে। অুনরূপ পরিস্থিতির শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো মানবন্ধনে অংশ নিয়ে তাদের বেদনা প্রকাশ করেন, কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সরকার যদি তাদের বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়, তাহলে যে তাদের সকলকে একসঙ্গে মেরে ফেলে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বিগত বছরগুলোতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরাম এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ সরকারকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও সব ধরনের নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা বন্ধ করার আহবান জানালেও সরকার কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। বরং তারা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নিপীড়নের মাত্রা যেন আগের চেয়েও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেদিনের মানববন্ধনে এসে এক পিতা অভিযোগ করেছেন যে, তার তিন পুত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে এক ছেলেকে ১০ বছর কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
তার বড় পুত্রকে পুলিশ ধরতে না পেরে ছোট দুই শিশুকন্যার মা তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুত্রবধূকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে। অথচ তার পুত্রবধু রাজনীতিতে জড়িত নন। তাদের একমাত্র অপরাধ তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তাদের অপরাধ সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অধিকার দাবী করা। এসব গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে পর। ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর চালিত নির্যাতনের হৃদয়বিদারক বর্ণনা দেন। তারা অভিযোগ করেন যে, মহাসমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকে ৭০ হাজারের অধিক বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৩৫টির বেশি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে উনিশ হাজারের বেশি নেতাকর্মী।
এছাড়া, ২৯টি মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ ও প্রায় ৫২৬ জনের বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। শুধু গত ২৮ অক্টোবরের আগে ও পরের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা নয়, বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দল, বিশেষ করে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর জিঘাংসা চরিতার্থ করার মনোবৃত্তি নিয়ে হামলে পড়েছে এবং পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে বিরোধী দলকে দমনের জন। গত ১৪ বছরে দেড় লাখ মামলায় বিএনপি ও বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মী-সমর্থকদের আসামি করা হয়েছে। অনেক গুম ও গ্রেফতারের ঘটনা অত্যন্ত করুণ। ২০১৩ সালের গুম হয় ছাত্রদল নেতা কাওসার।
এক সন্তানকে নিয়ে তিনি গত দশ বছর ধরে তার স্বামীর সন্ধান পাওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে গেছেন। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই কোনো সদুত্তর পাননি। এমন বহু পরিবার আছে, যাদের কোনো সদস্যকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বহু মাস পর গ্রেফতার দেখিয়েছে কল্পিত কাহিনি ফেঁদে। পরিবারগুলো সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডার বাহিনী মিলে তছনছ করে দিয়েছে। লক্ষ্মীপুরের এক বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করার পর তার পরিবারের কাছ থেকে বিশ লাখ টাকা নিয়ে লাশ হস্তান্তর করেছে।
এ ধরনের বিচারহীনতার মধ্যে কোথায় যাবে জনগণ অথবা সাজানো বিচারে কোথায় পাবে সুবিচার? ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশে এমন তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে সরকার এবং এজন্য তারা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জামিন লাভের অধিকার নেই। এমনকি এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও অনুসরণ করা হচ্ছে না। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের কোনো নীতিই কোনো আমল তারা করছে না। বাংলাদেশের নিজস্ব ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মানতে বাধ্য করার জন্য দেশের ভেতর থেকে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
Posted ১:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh