চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল | শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
সম্প্রতি ভারতের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি মুকেশ আম্বানীর ছেলের বিয়ের খবর সোশাল মিডিয়ায় প্রচুর দেখা যাচ্ছে। এই মুকেশ আম্বানী হচ্ছেন ভারতের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধীরাজলাল হীরাচাদ আম্বানীর ছেলে। মুকেশের আরও এক ভাই আছে। তার নাম অনিল আম্বানী। অত্যন্ত সাদামাটাভাবে কেটেছে তাদের বাল্যকাল। তাদের পিতা যাকে ধীরুভাই আম্বানী নামে সবাই চেনে তিনি ছিলেন এক স্কুল শিক্ষকের ছেলে। অল্প বয়সে ভাগ্যান্বেষনে ইয়েমেন পাড়ি জমিয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর পর ভারতে ফিরে এসে নিজের ব্যাবসা শুরু করেন।
ধীরুভাই ও রিলায়েন্স গ্রুপ সম্পর্কে আমরা প্রথম জানতে পারি ১৯৮৭ সালে। ভারত ও পাকিস্তান সে বছর যৌথভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করে। প্রতিযোগিতাটি স্পন্সর করেছিল রিলায়েন্স গ্রুপ। এজন্য এটিকে রিলায়েন্স কাপও বলা হতো। এর আগে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের তিনটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে (১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে)। তখন স্পন্সর ছিল প্রুডেন্সিয়াল কোম্পানী। এজন্য বলা হতো প্রুডেন্সিয়াল কাপ। বিশ্বকাপ ক্রিকেট যখন রিলায়েন্স গ্রুপের স্পন্সরশীপে প্রথম বারের মত দক্ষিন এশীয়া উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হয় তখনই ধীরুভাই ও তার রিলায়েন্স গ্রুপ লাইম লাইটে চলে আসে। পত্রপত্রিকাগুলি ধীরুভাইকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপতে শুরু করে। আমরা জানতে পারি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে তার ওঠে আসার বিশ্বয়কর কাহিনী।
সেই সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ইয়েমেন থেকে ফেরার পর ধীরুভাইকে মুম্বাইতে নিজের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠা করতে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছিল। মুকেশ ও অনিলের ছেলেবেলায় তাদের পরিবারকে দীর্ঘদিন দুই রুমের বাসায় থাকতে হয়েছে। মুম্বাইতে ধীরুভাই ৩৫০ বর্গফুটের ছোট্ট একটি অফিস কক্ষে ব্যাবসা পরিচালনা করতেন। সেই রুমে একটি টেলিফোন, একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার ছাড়া আর কিছু ছিল না। দুপুর বেল প্রায়শই দুটি নিমকি ও এক কাপ চা খেয়ে লাঞ্চ সারতেন। একবার সংয্ক্তু আরব আমিরাতের এক শেখ তার দেশে একটি বাগান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের মরুময় পরিবেশে এটি সম্ভব হচ্ছিল না। তখন তিনি ভারত থেকে প্রচুর মাটি আমদানী করেন। ধীরুভাই তখন মাটি সাপ্লাইয়ের কাজটি পেয়ে যান। এরপরই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে।
মুকেশের চেয়ে অনিলের পরিচিতিটাই বেশী ছিল সে সময়। আমরা জানতাম যে অনিলের মুকেশ নামে আরেকটি ভাই আছে কিন্তু তাকে কখনও দেখা যেত না। অনিল দেখতেও ছিলেন নায়কের মত। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ১৯৮৭’র ফাইনালে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা গিয়েছিল। এরপর অনিল বিয়ে করেন সে সময়ের হিন্দী চলচিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী টিনা মুনিমকে। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানটিও মহা ধুমধামে হয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ওপর স্বর্ণের পাপড়ি ছড়ানো হয়েছিল (সত্যিই স্বর্ণের পাপড়ি হয় কিনা এবং তা অন্যের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা জানিনা। সে সময় পত্রিকায় এমনই লিখা হয়েছিল)। এরপর ২০০২ সালে ধীরুভাইয়ের মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায়। মুকেশ দক্ষতার সাথে তার ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। দিন দিন তার সম্পদের পরিমান বাড়তে থাকে। পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন মুকেশ ও তার পরিবার। তার পরিবারের সবাই পরিণত হয়েছেন এক একজন সেলিব্রেটিতে। মুম্বাইতে তার অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল বাড়ী ‘এনটিলিয়া’ একটি দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায় ক্রমাগত লস দিতে দিতে অনিল চলে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।
Posted ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh