সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

আমি কুইন্সে থাকি

ড. মাহবুব হাসান   |   শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০

আমি কুইন্সে থাকি

কুইন্স খুব বেশি উন্নত এলাকা নয় নিউ ইয়র্কের। পাঁচটি বরোর মধ্যে কুইন্স আকারে সবচেয়ে বড়। ফলে এ-এলাকার সব কিছুই যে গুছিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, এমনটা বলা ঠিক হবে না। গোটা কুইন্স জুড়েই অভিবাসী এশিয়ানদের বাস। অধিকাংশ বাংলাদেশি বাস করতে কুইন্সকেই প্রাধান্য দেয়। নিউ ইয়র্ক মালটি কালচারাল কম্যুনিটির মহানগর হলেও একমাত্র কুইন্সই তার প্রমাণ দেয়। বহু বর্ণ-ধর্ম নিয়ে কুইন্স বিচিত্র সম্ভারে সজ্জিত।যখন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বলেন যে কুইন্সের মুসলমানরা খুবই পরিশ্রমী, তারা এখানকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন,তখন একজন মুসলমান হিসেবে আমার খুব ভালো লাগে। সেটা হয়তো এশিয়ার যে সব দেশ থেকে মুসলিমরা এদেশে এসেছেন, তাদের অবদানকেই স্বীকৃতি হিসেবে গণ্য হবে, যা গ্রেস মেং দিয়েছেন। তাঁর নাম দেখে মনে হয় তিনি চীনা বংশোদ্ভূত হবেন। তিনি কোন আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন, আমি জানি না। ধারণা করি তিনি কুইন্সেরই জনপ্রতিনিধি। কংগেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের তিনি সদস্য এবং তিনি ডেমোক্র্যাট সাংসদ। সাধারণত কোনো রিপাবলিকানের পক্ষে মুসলমানদের পক্ষে যায়, এমন সত্য উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। কারণ তারা বর্ণবাদে আসক্ত। এই বর্ণবাদে আসক্তি উন্মুক্ত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আপনাদের মনে থাকবার কথা, ট্রাম্প ক্ষমতা নেবার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষের নমুনা হিসেবে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর। সেই দেশগুলো হচ্ছে ইরান,লিবিয়া, সিরিয়া,ইয়েমেন, সোমালিয়া,,শাদ, এবং রাজনৈতিক কারণে নর্থ কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলা। সেটা ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সপ্তাহখানেক পর। ওই সব দেশের কোনো মানুষকে আমেরিকায় অভিবাসী হিসেবে নেবে না। অভিবাসন সংক্রান্ত নানা নির্বাহী আদেশ দিয়ে তিনি চেষ্টা করে চলেছেন যাতে কোনো মুসলমান এদেশে অভিবাসন না পায় বা পেতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের ওই সব সংবিধান বিরোধী বা সাংঘর্ষিক পদক্ষেপগুলো অকার‌যকর করে দিয়েছে। গত ২২ জুলাই কংগেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ২৩৩-১৮৩ ভোটে পাশ হয়েছে ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল। এই বিলের অন্যতম উদ্যোক্ত ছিলেন গ্রেস মেং । বিলটি এখন যাবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। সেখানে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই হিসেবে এ-বিল সেখানে পাশ না হওয়ারই আশঙ্কা। সাধারণত দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সিনেটররা যান না। আবার এর ব্যতিক্রমও আছে। সেই ব্রতিক্রমের প্রতি যদি আস্থা রাখি আমরা তাহলে ধরে নিতে মাত্র ৪টা ভোট অতিরিক্ত পেলেই এ-বিল পাশ হতে পারে। ডেমোক্র্যাটদের ৪৭ জন সিনেটরের সাথে ৪ জন রিপাবলিকান সিনেটর যোগ বা ভোট দিলেই লক্ষ্যে পৌছা যাবে। তবে সেই স্বপ্নভঙ্গও হতে পারে। কারণ এ-বছর ইলেকশনের। এখন ইস্পাত-দৃঢ় এক্যই থাকবার কথা। কিন্তু এমনও তো হতে পারে, প্রজ্ঞাবান ও মানবতাবাদী, বর্ণবাদ ঘৃণা করেন এমন সিনেটর আছেন রিপাবলিকানদের মধ্যে। তারা এক/দুই জন নন, তাদের অধিকাংশই মানবিক বিচারে মানুষ। কিন্তু রাজনৈতিক চেতনায় যে ঘাই হরিনীরা বসে আছে, তাদের কারণে অনেক ভালো উদ্যোগও আয়োজনই আলোর মুখ দেখে না। এ-বিল নিয়ে তাই শংকাও রয়েছে।


নির্বাচনের আর বাকি ৩ মাস কয়েকদিন। অনেকেই ধারণা করছেন ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্সিতে যেতে পারবেন না। বিভিন্ন মিডিয়ার ও সংস্থার যে সব পোল চলছে, তাতে ট্রাম্প হারবেন, এটা নিশ্চিত করে। কিন্তু সেটা তো হিলারির সময়ও দেখা গেছিল যে পিছিয়ে আছে ট্রাম্প। কিন্তু বর্ণবাদের জাদু যে হোয়াইট আমেরিকানদের মনে গেঁথে আছে তা কে জানতো। সবাই ভেবেছিলো শিক্ষিত দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মনে কোনো বর্ণচেতনা নেই। কিন্তু সেটা তো তারা প্রমাণ দিয়েছে যে তারা নিকৃষ্টতম মানুষ। চামড়া শাদা হলেই যে শ্রেষ্ঠ বর্ণের মানুষ হওয়া যায় না, সেটা তারা প্রমাণ করেছেন। আর কালো-বাদামি-হলুদ হলেই যে তারা নিম্নমানের, এটাও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বরং এটাই বলা যায় ওই কালো-বাদামি আর হলুদ মানুসেরাই সেরা, কারণ তারা মানবতার জয়গান করছে। তারা প্রমাণ করেছে তারা ষড়যন্ত্রকারী নয়। তারাই প্রকৃত সত্য, মানুষ।

এবারও ট্রাম্প ওই বর্ণবাদি কার্ড খেলবেন যখন ঘনিয়ে আসবে নির্বাচনের দিন। ‘ব্লাক লাইভস মেটার’র পর দেশের আনাচে কানাচে বর্ণবাদি হোয়াইট পুলিশের বর্বরতার অনমনীয়তা দেখেছে। ফলে সাধারণ মানুষ মনে মনে ওই হোয়াইট পুলিশদের ঘৃণা ছুঁড়েছে। সেই তীরগুলো যদি নির্বাচনে ট্রাম্পবিরোধী ভোট হিসেবে বর্ষিত হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন জিতে যাবেন। মন্দের ভালো হিসেবে জো বাইডেন নির্বাচিত হতে পারেন। যেহেতু তার রয়েছে প্রেসিডেন্সিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা। ওইটুকুই তার প্লাসপয়েন্ট। গলায় তার বোল্ডনেস নেই। কথা বলার ধরনে নেই ধার। বরং তার তুলনায় বার্ণি স্যান্ডার্স বা এলিজাবেথ ওয়ারেন বা কমলা হ্যারিস অনেকটাই সপ্রতিভ ও তরতাজা মানুষ।
বাইডেন আগেই বলেছেন তিনি রানিংমেট হিসেবে নেবেন একজন নারীকে। তার পছন্দের তালিকায় আছেন কমলা হ্যারিস, এলিজাবেথ ওয়ারেনসহ বেশ কিছু কালো মহিলা। হতে পারে সেই তালিকায় আছেন মিশেল ওবামাও।


‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ হাউজে পাশ হওয়ায় আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি ডেমোক্র্যাটদের। প্রকৃত মানবতাবাদি হিসেবে তারা নিজেদের প্রমাণ করেছেন। আমেরিকার সংবিধানের মৌলিক চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখার পক্ষে তাদের এই উদ্যোগ যদি সিনেটেও পাশ হয়, ইতিহাস হয়ে থাকবে।
গ্রেস মেংকে অভিনন্দন তার এই উদ্যোগের সাথে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে সোচ্চার হওয়ায়। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান নয়, প্রত্যেককে মানুষ হিসেবে দেখার যে নীতি আমেরিকান সংবিধানে লেখা আছে, তাকেই প্রধান করে তুলতে হবে। সেই সাথে গত প্রায় সাড়ে চারশ বছরের আমেরিকান ইতিহাসের মধ্যে সাড়ে তিনশ বছর ধরেই এই দেশটি গড়ে তুলতে সার্বিক সহযোগী ছিলো কালো মানুষেরা, যাদেরকে কৃতদাস হিসেবে রাখা হয়েছিলো। তাদেরই উত্তরসুরী বাদামি-হলুদ মানুষেরা, যাদের ঘামে ভেজা শ্রমের দামে গড়ে উঠেছে আমেরিকান প্রাসাদ, যা তাদেরই গৌরবের।


advertisement

Posted ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6091 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1142 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.