সেতারা কবির সেতু | বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট ২০২০
রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার দুটি উপজেলার মধ্যে বিস্তৃত দেশের বৃহত্তম শালবন। যার কিছু অংশ নবাবগঞ্জ আর কিছু অংশ বিরামপুর উপজেলার দখলে রয়েছে। আর দুটি অংশের মাঝে রয়েছে ৩৬০ হেক্টর এলাকা জুড়ে আশুড়ার বিল। এই আশুড়ার বিলে নির্মিত হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আঁকাবাঁকা সেতু। ২০০৮ সালে এই বৃহত্তম শালবনটি জাতীয় উদ্যোন ঘোষণা করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে তেমন কোন পর্যটকের ছোয়া লাগেনি।
২০১৯ সালের জুন মাসে স্হানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা নির্বাহি অফিসারের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো উদ্যানটিতে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয় ৯০০ মিটারের একটি কাঠের সেতু। সম্পূর্ণ শাল কাঠে নির্মিত এই সেতু নির্মাণে প্রায় ব্যায় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। সময় লেগেছে ২ মাসের মতো। এটি পূর্ব পশ্চিমে নির্মিত। সেতুটির আকার দেওয়া হয়েছে ইংরেজি বর্ণ জেড এর মতো। যা সেতুটির বেশ কয়েকটি জায়গায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেতুটির পশ্চিমে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্ব দিকে নবাবগঞ্জ। ফলে এই দুই অংশের বাসিন্দারা সেতুটি ব্যবহার করতে পারেন।
সেতুটি নির্মানের পূর্বে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌকা। যা সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগের ছিল। সেতু নির্মাণের পর মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে। সেতু নির্মাণের পূর্বে মানুষ যখন নৌকায় যাতায়াত করতো তখন সময় বেশি লাগতো। আবার এটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। সেতু নির্মাণের পর এখন মানুষ খুব সহজেই অল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন বলেছে এতো বড় কাঠের সেতু উত্তর বঙ্গে আর নেই।
দিনাজপুর ৫ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক ও জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম সেতুটি উদ্বোধন করেন। এ সময় স্হানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে বিলের পাশে কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার ফুল গাছের চারা রোপন করা হয়।
নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নবাবগঞ্জ অংশের ২৫১ হেক্টর এবং বিরামপুর অংশের ১০৯ হেক্টর নিয়ে মোট ৩৬০ হেক্টর এলাকা নিয়ে আশুড়ার বিল। আশুড়ার বিলের উৎপত্তি নিয়ে আছে বিচিত্র কাহিনী। কথিত আছে এই বিলের চারপাশ থেকে ৮০ টি দার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে আশুড়ার বিল। একসময় এই বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এই বিলের মাছ খুবই সুস্বাদু। বোয়াল, পাবদা,চিংড়ি, টেংরা,কই,মাগুর,পুটি,আইড় মাছ, গজাড়, শোল এবং বাইম ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায়। বরো মৌসুমে এ বিলে স্হানীয় কৃষকরা বরো ধান চাষ করে এবং প্রচুর ফলন পায়।
আশুড়ার বিল মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ২০১৩ সাল থেকে বিল ব্যবস্হাপনার দায়িত্বে আছে। বিলটিতে মৎস্য অধিদপ্তর হতে প্রতি বছর সরকারি অর্থে পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়। এই সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে ২০ একরের অভয়াশ্রম স্হাপন করা হয়েছে। অভয়াশ্রমটি বিপন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আশুড়ার বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। ফলে এই জায়গা হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন। শত, শত পাখির কলকাকলীতে মুখর থাকে চারপাশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাখিদের কোলাহল, এবং দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু দেখতে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এই মনোরম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করলেও রাস্তা, ঘাটসহ কিছু সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতার জন্য দর্শনার্থীরা রাস্তা,ঘাটসহ অবকাঠামো গত উন্নয়নের দাবী জানায়। তবে স্হানীয় প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দেন দ্রুত রাস্তা, ঘাট উন্নয়নসহ আধুনিক সুযোগ, সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিলে সবসময় পানি ধরে রাখতে একটি রাবার ক্রসড্যাম নির্মান করা হয়েছে। ফলে বিলে নানান ধরনের ফুল ফোটে। বর্ষার মৌসুমে এই বিলে লাল ও সাদা শাপলা বিলের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। নানান ধরনের অতিথি পাখিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। ঈদের সময় এই এলাকার মানুষের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে আশুড়ার বিল। প্রায় প্রতিদিন দর্শনার্থীরা দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু, বিল ও বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি অতিথি পাখির কোলাহল উপভোগ করছেন।
Posted ১২:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh