চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল | শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০
সম্প্রতি ইয়াবা পাচারকারী সন্দেহে পুলিশেরে গুলিতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তিনি এক সময় এলিট ফোর্স এসএসএফেরও সদস্য ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সাধারন জনগন (এমনকি অনেক প্রফেশনাল সাংবাদিকও) যেভাবে সোশাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করছেন তাতে মনে হচ্ছে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আমার মনে হয় এখনই মন্তব্য করা থেকে সবার বিরত থাকা উচিত। একমাত্র তদন্ত ও বিচার হওয়ার পরই আমরা কাউকে নির্দোষ বা দোষী বলতে পারি।
আমরা চাই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হোক। তদন্ত কাজে পুলিশ, সামরিক বাহিনী বা সরকার কেউ যেন প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে আমরা কোনদিনই সত্য জানতে পারবো না। প্রকৃত অপরাধীরাও পার পেয়ে যাবে। যদি পুলিশের বক্তব্য সত্য হয়, যদি তিনি সরকারী কাজে বাধা দিয়ে থাকেন ও পিস্তল প্রদর্শন করে থাকেন তাহলে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে পারে। এই নিয়ম সাধারন জনগন, অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত সামরিক কর্মকর্তা সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
অনেকে নিহত ব্যাক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কর্মময় জীবনের কথা উল্লেখ করে বলছেন এমন একটি ছেলের পক্ষে কি একাজ সম্ভব। হ্যা, সম্ভব। যখন একটি ঘটনা ঘটে তখন কোন সম্ভাবনার কথাই বাদ দেওয়া যায় না। কাউকেই সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না। যখন ফারুক, রশিদ বা মাজেদরা ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিল তখন তারাও তরুন ও স্মার্ট ছিল।
তাদের যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিল না। কয়েক বছর আগে নারায়নগঞ্জে বহুল আলোচিত সাত হত্যা মামলার আসামীরাও তরুন ও চৌকষ সামরিক কর্মকর্তা ছিলন। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিহতের ছবিও পোস্ট করছেন। কিন্তু এটা কারো সততা প্রমানের মাপকাঠি হতে পারে না। হালের শাহেদ থেকে শুরু করে সম্রাট, শমিম, পাপিয়ারাও প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।
আমি বলছি না যে সিনহা দোষী ছিলেন। একথাও বলছি না যে পুলিশ একজন নিরপরাধ লোককে মিথ্যা অভিযোগে মেরে ফেলেছে। শুধু বলতে চাইছি শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। আমি সবসময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরোধী। শুরু থেকেই র্যাবের ক্রস ফায়ারের বিরোধিতা করে এসেছি। মমিনুল্লাহ ডেভিড থেকে নয়ন বন্ড সবাইকেই ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার বিরোধিতা করেছি। এ বিষয়ে পত্রপত্রিকা ও সোশাল মিডিয়ায় প্রচুর লিখেছি। কিন্তু সিনহার ব্যাপারটি একটু অন্যরকম। তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগেই নিহত হয়েছেন। পুলিশ যদি তল্লাশী চালাতে চায় প্রত্যেকের উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা। সিনহা যদি পুলিশকে পিস্তল দেখিয়ে থাকেন তাহলে তিনি ঠিক করেননি। তাই বলা যাচ্ছে না তিনি কি অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
বর্তমানে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে বাংলাদেশে যে হারে মাদক ঢুকছে এবং সমাজে মাদকের যে ভয়াবহ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হার্ড লাইনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই অবস্থায় সবারই উচিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করা। দেশের রাঘব বোয়ালরা এখন মাদক ব্যাবসায় জড়িত। জনপ্রতিনিধি, সরকারী দলের সাংসদদের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যাবসার অভিযোগ রয়েছ। পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যেও অনেকের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানীদের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ আছে। তারপরও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধের মূল কাজটি পুলিশকেই করতে হয়। আর একাজটি যে সহজ নয় একথা বলার অবকাশ রাখে না। প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে গেলে একটি মহল থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠবেই। ধুম্রজাল সৃষ্টি করে প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করাই এর উদ্যেশ্য।
আমাদের পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রচুর। কিন্তু পুলিশ বিভাগে ভালো লোকের সংখ্যাও অনেক। পুলিশকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সমাজের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়তে হয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সমালোচনাও অনেক বেশী। বাংলাদেশে মাদক চোরাচালানীদের যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়। একজন সৎ পুলিশ অফিসারকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দিতে প্রভাবশালী সমাজবিরোধীরা সবসময়ই তৎপর থাকে। তাই এক্ষেত্রে ঠিক কি ঘটছে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে অনুমান করা কঠিন। কিন্তু আমরা যদি শুরু থেকেই পুলিশকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাড় করাই তাহলে পুলিশের সৎ কর্মকর্তারাও ভালো কাজ করার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সমাজে। সেনাবাহিনী দেশরক্ষার মহান কাজ কাজে নিয়োজিত। কিন্তু বিপদে পড়লে আমরা সাধারন জনগন সামরিক বাহিনী নয়, পুলিশের কাছেই যাই। তাই পুলিশের মনোবল অটুট রাখতে হবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই কোন বিরূপ মন্তব্য কাম্য নয়। এতে তদন্ত কাজ ব্যাহত বা প্রভাবিত হতে পারে। সিনহা হত্যার প্রকৃত কারন জানতে চাইলে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। একমাত্র সুষ্ঠু তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাক। ঘটনা যেন ভিন্নখাতে প্রবাহিত না হয়। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডতো কোন ভাবেই কাম্য নয়।
Posted ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh