আরফাতুন নাবিলা | বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০
মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের জন্য মনোনীত হলেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী। ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিসকে রানিংমেট হিসেবে ঘোষণা করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন জিতলে আমেরিকায় প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্ত হবেন। লিখেছেন আরফাতুন নাবিলা
পরিচয়
বেশ কিছুদিন ধরে বর্ণবৈষম্য নিয়ে উত্তপ্ত আবহের মধ্যেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে সিনেটর কমলা হ্যারিসকে। তিনিই প্রথম কোনো এশীয়-আমেরিকান নারী যাকে এই পদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ৫৫ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। ভারতীয় মা শ্যামালা গোপালন হ্যারিস ছিলেন একজন ক্যানসার গবেষক এবং নাগরিক অধিকার কর্মী। জ্যামাইকায় জন্মগ্রহণ করা বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কমলার খুব অল্প বয়সেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মায়ের কাছে ভারতে বেড়াতে গিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির মাঝে থাকলেও মা শ্যামালা নিশ্চিত করেছিলেন তারা দুই বোন (কমলা ও ছোট বোন মায়া) যেন ওকল্যান্ডের ব্ল্যাক কালচার সঙ্গে করে বেড়ে ওঠেন। নিজের লেখা অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ এ কমলা লিখেছিলেন ‘আমার মা বুঝতে পারতেন তিনি দুজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকেই বড় করছেন। তিনি জানতেন অন্য যে দেশকে তিনি মাতৃভূমি মেনেছিলেন সেখানেও আমাদের দুজনকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখা হবে। মা নিশ্চিত করেছিলেন, আমরা যেন আত্মবিশ্বাসী ও গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বেড়ে উঠি।’ কমলা হ্যারিসের প্রথম জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে কানাডায়। শ্যামালা গোপালন যখন ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে চাকরি পেয়ে চলে আসেন, তখন কমলা এবং বোন মায়াও তার সঙ্গে আসেন। মন্ট্রিল স্কুলে পড়াশোনা করেন ৫ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ কলেজ এবং হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন ৪ বছর। এই সময়টুকুকে কমলা তার জীবনের সেরা সময় বলে মানেন। নিজের পরিচয় নিয়ে কখনো দ্বিধায় ভোগেননি তিনি। বরং নিজেকে একজন আমেরিকান বলে পরিচয় দিতেই সব সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। তিনি সব সময় বলেন, ‘আমি যেমন, তেমনই। আমি এতেই ভালো আছি। আপনি হয়তো এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু সত্যি বলতে আমি আমার মতো এভাবেই ভালো আছি।’ ২০১৪ সালে কমলা হ্যারিসের বিয়ে হয় আইনবিদ ডগ এমহফের সঙ্গে। দুই সন্তানের মা তিনি।
উন্নতির শিখরে
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে চার বছর পড়াশোনা শেষে, কমলা হ্যারিস হাস্টিংসের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে চলে যান আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিতে। আলামেডা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসে শুরু করেন ক্যারিয়ার। ২০০৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি-দ্য টপ প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এরপর ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে প্রথম নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে, আমেরিকার মতো জনবহুল রাজ্যের শীর্ষ আইনজীবী এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে প্রায় দুইবার পদে বহাল থাকার কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টির উদীয়মান তারকা হিসেবে পরিচিতি পান। এই পদে থেকেই ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র মার্কিন সিনেটর হিসেবে নির্বাচন চালানোর অনুমতি পান। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে একটি ঐতিহাসিক মামলা জিতেছিলেন কমলা। বড় বড় ব্যাংকগুলো সেখানে প্রচুর বাড়ি বাজেয়াপ্ত করছিল। সেই প্রদেশের বাসিন্দাদের পক্ষ নিয়ে ব্যাংকগুলোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জেতেন। বাসিন্দাদের পক্ষে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সেটেলমেন্ট করে নজির গড়েছিলেন। বারাক ওবামার মতো কমলাকেও শুনতে হয়েছে, ‘আপনি কালো, কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের মতো কালো নন। আপনি মার্কিন নন, তাই ভোটে লড়ার অধিকার নেই।’ এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠেছিল, ভোটে ফায়দা নিতে তিনি নিজেকে আফ্রো-আমেরিকান প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এসব প্রচারে অবশ্য তেমন গুরুত্ব দেন না কমলা। আত্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করলে তার স্পষ্ট জবাব, ‘আমি একজন গর্বিত মার্কিন নাগরিক।’
বাইডেনের কাছে হার
গত বছরের শুরুতে কমলা হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ২০,০০০ মানুষের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রচারণা শুরু করেন। শুরুর দিকে বেশ উৎসাহের সঙ্গেই প্রচারণা চলছিল। কিন্তু সিনেটর সুস্পষ্ট যুক্তি দিতে প্রচার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা খাতের মতো জায়গাগুলোতে তাকে অনেক প্রশ্নের জবাবদিহিতাও করতে হয়েছে। এমনকি তিনি প্রার্থিতার বেলায় নিজের পক্ষে যে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখা উচিত বিশেষ করে, বিতর্কের অনুষ্ঠানগুলোতে যে প্রসিকিউটোরিয়াল দক্ষতা দেখানো উচিত তা দেখাতে পারেননি। ফলে ডেমোক্র্যাট পার্টির অন্দরের লড়াইয়ে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি। দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের সময় একাধিক বিতর্কে বাইডেনকে তীব্র সমালোচনাও করেছেন কমলা। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে সেই বাইডেনের সঙ্গেই এবার নির্বাচনের সহযোদ্ধা হতে যাচ্ছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট হিসেবে কমলা চেষ্টা করেছেন তার পার্টির প্রগ্রেসিভ এবং মডারেট উইংসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। কিন্তু শেষ অবধি কারও সঙ্গেই সমঝোতায় আসেননি। ২০২০ সালের শুরুতে লোয়াতে ডেমোক্রেটিক কনটেস্ট শুরু হওয়ার আগেই ডিসেম্বরেই প্রার্থিতার কাজ শেষ করে দেন। মার্চ মাসে, কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে এসে বাইডেনকে সমর্থন করে বলেন, ‘আমার যতটুকু ক্ষমতা আছে তার সবটুকু দিয়ে আমি জো বাইডেনকে আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করানোর জন্য চেষ্টা করব।’
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার পর ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষ এই আইন প্রয়োগকারী নারীর বিভিন্ন রেকর্ড সামনে এসেছে। সমকামী বিবাহ এবং মৃত্যুদণ্ডের মতো ইস্যুতে বামপন্থি ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত প্রগতিশীল না হওয়ার কারণে তিনি বারবার প্রগতিশীলদের আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক লারা বাজেলন তার বিপক্ষে কথা বলেছেন। কমলার ক্যাম্পেইন শুরু হলে বাজেলন লেখেন, হ্যারিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ সংস্কার, মাদক সংস্কার এবং আরও অন্যায়ের সঙ্গে প্রগতিশীল লড়াইয়ে জড়িত। নিজেকে প্রগতিশীল প্রসিকিউটর হিসেবে প্রমাণ করতে চাওয়া কমলা আরও কিছু বিধি চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার বিচার বিভাগের কিছু এজেন্টের শরীরে ক্যামেরা যুক্ত করে দেওয়া, এই ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রথম রাষ্ট্রীয় সংস্থা চালু করা যারা একটি ডাটাবেজও চালু করবে যেখানে জনগণের অপরাধের তালিকাগুলো উল্লেখ করা থাকবে। অনেক চেষ্টার পরেও এই কাজগুলো সফল করতে পারেননি তিনি।
‘কমলা একজন পুলিশ’ এই কথাটিই প্রচারণায় তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে তার জয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এতে। টক-শোগুলোতে তিনি পুলিশের কার্যক্রম পরিবর্তনের কথা বলেন, টুইটারে বলেন, যে পুলিশ অফিসাররা কেন্টাকির ২৬ বছর বয়সী আফ্রিকান-আমেরিকান নারী ব্রেওনা টেইলরকে হত্যা করেছে সেই পুলিশদের যেন গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি নির্দ্বিধায় বর্ণবাদ নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলেছেন। পুলিশদের প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি সামনে এলে পুলিশ বিভাগের বাজেট কমিয়ে সেই অর্থ সামাজিক অন্যান্য কাজে ব্যয় করার কথা বলেন। তার এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন বাইডেন। এরপরও কমলা জননিরাপত্তার জন্য বিষয়টিকে পুনরায় বিবেচনা করতে চাপ দিয়ে গেছেন। নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারেন বলেই কমলা নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবেন। বাইডেনের সঙ্গে কিছু বিরোধিতা থাকলেও এখন তিনি তার সঙ্গেই রানিংমেট হিসেবে আছেন। হয়তো তিনি যা ভাবছেন নির্বাচনে জয়লাভ করলে হোয়াইট হাউজের অন্দর থেকেই সেই কাজগুলো করতে পারবেন।
কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে যুক্ত থাকলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থান পুরোপুরি বিপরীতে। প্রকাশ্যেই তিনি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ২০১৯ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রশ্নের উত্তরে কমলা বলেছিলেন, সামগ্রিকভাবে ইসরায়েল মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা এবং সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ের রেকর্ড রয়েছে কমলা হ্যারিসের। সেই তিনিই আবার লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে শরণার্থীতে পরিণত করা ইসরায়েলকে সমর্থন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কমলা হ্যারিস ইসরায়েলের একজন ‘কট্টর সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই ২০১৭ সালে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এআইপিএসি)-র সমাবেশে ভাষণ দেন তিনি। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। বামপন্থি ভাষ্যকার এবং প্রগ্রেসিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা কুলিনস্কির মতে, ইসরায়েলের মানবাধিকার রেকর্ডের প্রতি ভ্রƒক্ষেপ না করে কমলা হ্যারিস দেখিয়েছেন তার কথিত নৈতিক উদ্বেগের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। আদতে এমন কোনো উদ্বেগই তার নেই। ভোটের মাঠে অগ্রসর হতেই তিনি এ রাজনীতির খেলা খেলছেন। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়েছিল। কমলা ওই বিল প্রত্যাখ্যান করেন।
বাইডেন ও হ্যারিস
সত্যি বলতে জো বাইডেন অনেকেরই মনঃপূত নন। তরুণরা নেতৃত্বে আসবেন এমনটাই মনোনয়নের আগে ভাবা হচ্ছিল। দেশটির জন্য এ মুহূর্তে একজন তরুণের প্রয়োজন, যিনি অন্তত জনগণের ওপর ভোটের ওপর কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। ৫৫ বছর বয়সী কমলাকে তরুণ বলা না গেলেও অন্তত ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনের তুলনায় তিনি কিছুটা প্রাণবন্ত তো বটেই। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) এক টুইটবার্তায় ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বাইডেন বলেন, ‘আমি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি, আমার সহযোদ্ধা (রানিংমেট) হিসেবে একজন নির্ভীক সৈনিক ও দেশের অন্যতম সেরা সরকারি কর্মকর্তা কমলা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, তিনি আমেরিকার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। কারণ সারা জীবন ধরে তিনি লড়াই করে আসছেন। এবার হ্যারিসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সবাই মিলে ট্রাম্পকে হারাতে চলেছি।’ বাইডেনের এই টুইটের পর কমলা হ্যারিসও টুইট করে বলেন, ‘আমেরিকার মানুষদের একত্র করতে পারবেন জো। কারণ তিনি সারা জীবন আমাদের জন্য লড়াই করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এমন এক আমেরিকা গড়ে তুলবেন, যা আমাদের আদর্শ মেনে চলবে। দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আমি সম্মানিত এবং তাকে কমান্ডার ইন চিফ বানানোর জন্য যা করার প্রয়োজন তা আমি করব।’ মজার বিষয় হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে গত ডিসেম্বরে কমলা নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার খবর প্রকাশ পাওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে বলেছিলেন, ‘আপনাকে মিস করব।’ এর জবাব দিতে খুব বেশি সময় নেননি কমলা হ্যারিস। ট্রাম্পের কট্টর এই সমালোচক এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘চিন্তা করবেন না মিস্টার প্রেসিডেন্ট। ফের দেখা হবে আপনার সঙ্গে।’ তখন আমেরিকা তোলপাড় ছিল প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হবে কি না তা নিয়ে। এখন ট্রাম্প যাকে মিস করছিলেন বলে জানিয়েছিলেন সেই কমলাই তার বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড়ানো জো বাইডেনের রানিংমেট।
টুইটারের পর বুধবার (১২ আগস্ট) ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠান করেন জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে জনসাধারণের জন্য অনুষ্ঠান উন্মুক্ত না থাকলেও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। বাইডেন বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর, মিসেস হ্যারিস হলেন প্রথম কোনো বর্ণের নারী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান একটি দলের হয়ে প্রেসিডেন্টের রানিংমেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা এই নভেম্বরে যাকে বেছে নেব, তিনি নির্ধারণ করবেন আমেরিকার দীর্ঘ সময়ের ভবিষ্যৎ। তিনি ট্রাম্পের করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্বের হার সামাল দেওয়ার ব্যর্থতা এবং তার বর্ণবাদী বক্তব্য ও বিভাজনের রাজনীতি নিয়েও মন্তব্য করেন। ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাইডেনের বক্তব্যের জবাব দিতে শুরু করেছেন। এই জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেনের মন্তব্যও ছিল বেশ শক্তিশালী। তিনি বলেন, ‘এটি অবাক হওয়ার কিছু নয় কারণ আমেরিকার ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশি কথা বলেন।’
কমলা হ্যারিস এমন এক সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়তে যাচ্ছেন, যখন করোনার জেরে আমেরিকার অর্থনীতি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। এসব বিষয় ভাবনায় রেখে বাইডেনের সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কমলা হ্যারিস বলেন, আমি বাইডেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। ধরে নিন, আমেরিকার সঙ্গে কী হবে, সেটা এখন নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের শিশুরা, আমরা যে ধরনের দেশে বাস করছি তার সবকিছুই এর সঙ্গে যুক্ত। আমেরিকা সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য হাহাকার করছে, অথচ আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আছেন তিনি শুধু নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। যারা তাকে নির্বাচিত করেছে তাদের দিকে খেয়াল নেই। এমনটা তখনই হয়, যখন আমরা এমন একজনকে বেছে নিই যিনি এই কাজের জন্য উপযুক্ত নন। আমাদের দেশকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে আমাদের খ্যাতিও বিনষ্ট হয়েছে। বারাক ওবামা ও জো বাইডেনের কাছ থেকে ট্রাম্প ইতিহাসের দীর্ঘতম অর্থনৈতিক ভিত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। এরপর তিনি সব কিছু সরাসরি মাটিতে ছুড়ে নষ্ট করেছেন।’ সব মিলিয়ে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বেশ নির্ভার কমলা হ্যারিস। এদিকে বুধবার হোয়াইট হাউজের একটি সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, কমলা হ্যারিস যখন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন তখন তিনি বাইডেনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। এখন তিনি বাইডেনের রানিংমেট হওয়ায় তিনি বেশ অবাকই হয়েছেন। ৭ অক্টোবর উটাহর সল্ট লেক সিটির বিতর্কে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মুখোমুখি হবেন কমলা হ্যারিস।
Posted ৮:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh