চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২
ভারতে যখন একের পর এক মুসলিম নির্যাতন চলছিল তখন মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলি নিশ্চুপ থেকেছে। বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছে, মিরাটে দাঙ্গা হয়েছে, গুজরাটে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গনহত্যা হয়েছে, কাশ্মীরীদের দিনের পর দিন অবরুদ্ধ রেখে অমাবিক নির্যাতন চলেছে। আরব বিশ্ব থেকে প্রতিবাদ আসেনি। তাদের কাছে তখন অর্থনৈতিক দিকটিই বড় হয়েছিল। ভারতের সাথে তাদের ব্যবসা রয়েছে। তাদের আমোদ প্রমোদের জায়গা ভারত। তাদের ছাত্ররা সেখানে পড়াশোনা করে।
হিন্দী সিনেমা আরব দেশগুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই হয়তো ভারতীয় মুসলমানদের দুঃসময়ে আরব বিশ্বে কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। ওগুলি ভারতের অভ্যন্তরীন ব্যাপার বলে পাশ কাটিয়ে গেছে। এতে ভারতের স্পর্ধা আরও বেড়ে গেছে। তারা বুঝে গেছে মুসলমান প্রধান আরব দেশগুলিতে কাজ করে দরিদ্র ভারতীয়রা যদিও ভারতের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে, ভারতে মুসলমানদের কচুকাটা করলেও মাথামোটা শেখদের কোন প্রতিক্রিয়া হবে না। কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা আছে। মুসলমানদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যতো ভারতীয়রা কম করেনি। এবার এমন একটি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে বসেছে যে আরব বিশ্বের স্বৈরাচারী সরকারগুলিও আর চুপ থাকতে পারছে না। ইচ্ছায় হোক, আর অনিচ্ছায় হোক এবার তাদের অ্যাকশনে যেতে হচ্ছে।
যাক, দেরীতে হলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙ্গেছে। মহানবী (সঃ) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে এর আগে ফেসে গিয়েছিল সালমান রুশদী। আয়াতুল্লাহ খোমেনী তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। আমরা এরকম হঠকারী সিদ্ধান্ত সমর্থন করিনা। হানাহানি নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে নৈতিক শক্তি দিয়ে। আরব বিশ্ব যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। যে ভারতীয়রা মুসলিম দেশগুলিতে চাকুরী ও ব্যবসা বানিজ্য করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে নিজদেশে তারা মুসলমানদের প্রতি নির্মম। এ ধরনের মানসিকতা কখনো মঙ্গল বয়ে আনেনা। আরব দেশগুলি এখন এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক সরকারকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির উচিত বাংলাদেশের মত দেশগুলি থেকে আরও বেশী করে শ্রমশক্তি সংগ্রহ করা। মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। অবশ্য স্বৈরাচারী আরব সরকারগুলি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারবে কিনা বলা কঠিন।
ভারতীয় নেতাদের অযৌক্তিক মন্তব্যের প্রতিবাদে মুখর মুসলিম বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির পাশাপাশি প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপের মত দেশগুলিও। কিন্ত কি করছে বিশ্বের তথাকথিত দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাস্ট্রটি। কিছুদিন পর হয়তো মিউ মিউ করবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তরফ থেকে কোন প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। ভারতের তল্পীবহন করতে করতে দেশের মেরুদন্ডটাই দুর্বল করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দুর্বল মেরুদন্ড নিয়ে প্রতিবাদ করা সম্ভব না। তাই শেখ হাসিনাও নিরব। এই ধর্মটাকেই পূজি করে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। মক্কায় হজ্ব পালন করে মাথায় হিজাব পড়ে নির্বাচন করেছিলেন ১৯৯৬ সালে। এরপর তার অবস্থা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ভারতীয় শ্রমিকদের মত। রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিয়ে দেশে নরেন্দ্র মোদীকে অভ্যর্থনা দিয়েছিলেন। বিশ্বের আর কোন দেশে কোন বিদেশী নেতাকে আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য এত রক্তপাত হয়নি।
বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার মত যুবশক্তি নেই। এখনকার তরুণ প্রজন্ম যেন বাঙালি চেতনাজীবী জাতীয়তাবাদীদের উত্তরাধিকার হিসেবে ভারতের দালালী করার দায়িত্ব পেয়েছে।
ওদের পক্ষে ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের কোন শিশুকে হত্যা করে কাটাতারে ঝুলিয়ে রাখলেও তাদের চেতনার ঘোর কাটে না। এইতো কয়েকদিন আগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা ১০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী শিশু রমজান আলীকে গ্রেনেড মেরে আহত করেছে। তাকে ছাড়িয়ে আনতে এখন মানবাধিকার কর্মীরা চেষ্টা করছে। এসব নিয়ে ওইসব আওয়ামী প্রজন্মের কোন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু ভারত বিরোধী কিছু বললে, এমনকি ফেসবুকে পোস্ট দিলেও ওরা কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে দ্বিধা করেনা। আচ্ছা থাক, এসব বলে কি লাভ। দুঃখ এতটুকুই ছোট্ট রাস্ট্র মালদ্বীপ যেখানে প্রতিবাদ করে, জাতিসংঘ যেখানে অসন্তোষ প্রকাশ করে, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও আমাদের দেশে এমন একটি নতজানু সরকার এক যুগ ধরে রাস্ট্রক্ষমতা আকড়ে আছে যারা মহানবী (সঃ) এর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্যের পর সামান্য প্রতিবাদও করতে পারে না।
Posted ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh