শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

স্বাধীনতা শব্দটি পেলাম কিভাবে

ড. মাহবুব হাসান   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১

স্বাধীনতা শব্দটি পেলাম কিভাবে

স্বাধীনতা’ শব্দটিকে হৃদয়ে গেঁথেছিলাম আমি গত শতকের ছয়ের দশকের শেষপাদে। কথাটা ব্যক্তিগত স্তর থেকে উচ্চারণ করলেও তা ছিলো এ-দেশের আপামর জনগণের মনের কথা, ইচ্ছার রাজনৈতিক প্রকাশ, আর বৌদ্ধিক চেতনার সারাৎসার। কারণ, ব্যক্তি যে রাজনৈতিক দলেরই অনুসারী হোক না কেন, সে-সময়কার সামাজিক পরিবেশে ও প্রতিবেশের কানায় কানায় স্বাধীনতা শব্দটি টিট্টিভের মতো নাচছিলো। ফলে তরুণ-বৃদ্ধ ও শিশু-কিশোরদের কষায় এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ছবি ‘স্বাধীনতা’ লোভনীয় ইস্তাহারের মতো মনে করতো সবাই। আমি এবং আমার প্রজন্ম গড়ে উঠেছিলো সেই রাজনৈতিক স্বাধীনতার হাত ধরে, তারই ছায়ায়। স্কুলে এবং কলেজে, সেই সময়ের ছাত্র-শিক্ষার্থীর জন্যে কোনো বাধামূলক কথা বা নিষেধ করেননি কোনো বাবা-মা, আমার সেটা মনে আছে। উনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় আমি ছিলাম গ্রামে। তখন আইয়ুব খান বিরোধী ম্লোগানে মূখর হচ্ছে তারই দশবছরের ক্ষমতাকালে নির্মিত হালটে কিশোর-যুবাদের উন্মাতাল আবেগে। সেই বুনন আজো আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনায় এমনভাবে গেঁথে আছে যে তাকে বিচ্ছিন্ন করে এমন কেউ নেই। নানা বিষয়ে ভিন্ন মত থাকে, থাকতেই পারে, রাজনৈতিক পরিবেশে, রাজনৈতিক কালচারে যা গণতন্ত্রেরই সৌন্দর‌্য বলে চিহ্নিত এবং চিত্রিত। ভিন্নমত থাকে বা আছে, কিন্তু স্বাধীনতা প্রশ্নে আমাদের মধ্যে দ্বিমত ছিলো না। ছিলো, ওই স্বাধীনতায় পৌছার ভিন্ন পথের কথা। কোনো রাজনীতিক মনে করতেন সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া পাকিস্তানি সামারিক ও বেসামরিক সরকারের কবজা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা যাবে না। কেউ কেউ ভাবতেন নিয়মতান্ত্রিক গণআন্দোলনের পথ ধরেই একদিন আসবে স্বাধীনতা। এই উভয়পক্ষেরই ছিলো বা রয়েছে যুক্তি। কেউ বলবেন, সে-সব যুক্তি ঠুনকো, কেউ কেউ বলবেন তা অকাট্য। যার চিন্তারবৃত্ত ও তার প্রভাবেই তিনি বা তারা সে-সব যুক্তিকে নিজেদের অকাট্য যুক্তি বলে মনে করতেন। একই বিষয়ে, একই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনা সত্ত্বেও, দুটি ভিন্ন পথ নেয়ার কারণ কী হতে পারে?

সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্যক্তির চেতনা স্বাধীন, তাই সে-সংস্কৃতিক প্রচল ধারায় নিজেকে সচল রাখবেন, এমনটা নাও হতে পারে। কখনো কখনো সেই ব্যক্তির চৈতন্য যুক্তির উর্ধ্বেরও হতে পারে। রাজনৈতিক সমাজের নেতারা প্রায় অনেকেই সেইরকম যুক্তবাদিতারই অন্তর্গত। তবে কেউ কেউ ব্যতিক্রম আছেন। তাদেরই একজন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তাকে আমরা রাজনীতিক, বাম ধারার রাজনীতিক বা লাল মওলানা বলে চিত্রিত করি এ-কারণেই যে তিনি গণমানুষের মুক্তিকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি মনে করতেন যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই কেবল শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের মুক্তি আসতে পারে। তাই তিনি শ্লোগান তোলেন ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ এবং জয় জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা, [পূর্ব পাকিস্তান]’। তিনি এবং তাঁর রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুসারীগণ তৈরি হয়ে চলেছিলেন ওই পথে—যে পথে নিহিত আছে মুক্তির দিগন্ত।


ঠিক ওই সময়েই আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের আরেক সিংহপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ৬-দফা দাবি উত্থাপনের অপরাধে বন্দী– আইয়ুবী কারাগারে। মওলানা ভাষানী ও তার ন্যাপ-সহযোগীরা ষাটের শেষ ভাগে মুজিবকে মুক্তির আন্দেলনে ঝাপিয়ে পড়েন। দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্ররা গণআন্দোলনে সামিল হয় ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। জাতীয় রাজনীতিক ও ছাত্রদের সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উত্তাল আন্দোলনে ম্লোগান ওঠে ‘জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো’। শেখ মুজিব সেই আন্দোলনের শীর্ষদেশে চড়ে বেরিয়ে এলেন কারাগার থেকে। এসেই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের জাল জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেন। তখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক সিংহাসনে আইয়ুবের উত্তরসুরী নিকৃষ্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি সামরিক শাসনের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তবে জুড়ে দিয়েছিলেন একটি শর্তযুক্ত নির্বাচনী ফ্রেমওয়ার্ক। শেখ মুজিব নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সিংহপুরুষ, ভাবলেন নির্বাচনের মাধ্যমেই তিনি জনগণের রায়ে ক্ষমতায় যেতে পারবেন। তার রায় পাওযার চিন্তা ছিলো সঠিক। এ-দেশের মানুষ তাকে রায়ে পৌছে দিলো ক্ষমতার মসনদের দোরগোড়ায়, কিন্তু স্বৈরাচারি ইয়াহিয়া ও তারই রাজনৈতিক দোসর জুলফিকার আলী ভুট্টো, সেই রায়কে উল্টে দিয়ে শুরু করলেন পৃথিবীর বর্বরতম গণহত্যা। আর আমরা ঝাপিয়ে পড়লাম সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের যুদ্ধে। শুরু হলো মুক্তির সশস্ত্র সংগ্রাম, যা মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত ছিলো।

দু’জনই ছিলেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে উদ্দীপ্ত, কিন্তু প্রাপ্তির চিন্তাধারায় সেই পথ ছিলো ভিন্ন। আর সেটাই ছিলো গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য সঠিক। কিন্তু প্রশ্ন যখন মুক্তির, সার্বিক মুক্তির, ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতার, সেখানে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কোনো ফয়সালা দিতে পারে না। কারণ যারা আমাদের দেশের ওপর চেপে বসেছিলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দখলদারদের মতো, যারা নিজেদের প্রভু মনে করতো, আমাদেরকে তাদের ভৃত্য ভাবতো, সে-রকমই ছিলো পাকিস্তানিদের দিনানুদৈনিক আচরণ, তাদের কাছে থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাধীনতা পাওয়া ছিলো শিশুর ভাবনার সামিল। সেটাই প্রমাণ হলো ১৯৭১ সালের ২৫মার্চ রাতে গণহত্যার মধ্য দিয়ে। আমরা যদি সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে পারতাম, অসহযোগ শুরুর পর সামান্য সময়ই আমরা পেয়েছিলাম, তাহলে ব্যাপক গণহত্যার সুযোগ পেতো না পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী।


২.

স্বাধীনতা বিষয়ক আমার এ-সব কথার অনেক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে বিভিন্ন গবেষণামূলক ইতিহাসের পাতায়। এ-সবের আরো ডিটেলস লুকিয়ে আছে সে-সময়কারদেশি-বিদেশী দৈনিক পত্রিকাগুলোর পাতায়। আমরা যদি স্বাধীনতা বিষয়ের ‘ সত্য’ জানতে চাই, তাহলে অবশ্যই সেই পাঠবস্তুর দিকে হাত বাড়াতে হবে। কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক বর্ণনায় পাওয়া যাবে না প্রকৃত সত্য। কারণ আজকের রাজনীতি কেবল তথ্য গোপন করারই রাজনীতি নয়, আজকের রাজনীতি ‘মিথ্যা দিয়ে সত্য গোপন করার এক মহোৎসবে সামিল হয়েছে। একবার মিথ্যা প্রতিষ্ঠা পেলে, সেই অবৈধ শেকড় উৎপাটন অনেক কষ্টের।


আমি মওলানা ভাসানী সম্পর্কে জানতে উদগ্রিব। তাঁর সম্পর্কে কিছু বই তো আমি/আপনি পড়েছি। আমরা অনেক সত্যই জানি যা আজকে আমরা বলছি না বা বলার সাহস নেই। কারণ সেই পরিবেশ আজকের বাংলাদেশে নেই। রাজনৈতিক এমন একটি শক্তি ক্ষমতার শীর্ষে যারা নতুন সত্য বুনে চলেছেন, যার কোনো প্রকৃত শেকড় আছে কি নেই তা জাতি জানে না । এতোকাল কি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবদান দাবিয়ে রাখা হয়েছিলো? না, কিন্তু যারা আজ তাদের কথা প্রমাণের চেষ্টা করছেন তারা ভুলে গেছেন যে জনগণবিহীন কোনো নেতা কোনো দেশ স্বাধীন করতে পারে না। জনগণই হচ্ছে রাজনীতিকের শক্তি, যারা নেতাকে বরমাল্যে বরণ করে নেয় এবং মাথার মুকুট করে তোলে। বঙ্গবন্ধুকে মাথার মুকুট বানিয়েছে জনগণ সেই কোনকালে, স্বাধীনতার প্রাককালে, কিন্তু রাজনৈতিক কর্মীরা বিশ্বাস করেনি কোনোদিন। আজ তাই বাকি সব রাজনীতিকের অবদানকে অস্বীকার করে কেবল বঙ্গবন্ধুর সব অবদান বলা হচ্ছে। এতে করে স্বয়ং বঙ্গবন্ধই অপমানিত হচ্ছেন এবং ছোটো হচ্ছেন। তাঁর জীবদ্দশায় তো তিনি দেশের সব রাজনীতিককেই সম্মান করতেন এবং তার ভালোবাসায় পূর্ণ করেছিলেন।
আজ স্বাধীনতার মঞ্চে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কেউ নেই। কেন? তিনি কেন একা?

আমি এম ইনামুল হকের‘ মওলানা আবদুর হামিদ খান ভাসানী’ বই থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও পতাক ‘ বিষয়ে তিনি লিখেছেন—‘

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর পুর্ব বাংলার দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এই ঘূর্ণিঝড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত ও বিপন্ন হয়। মওলানা ভাসানী এইসময় অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু তিনি সংবাদ শুনে ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম যান। তিনি ১৮ নভেম্বর হাতিয়া, ১৯ নভেম্বর রামগতি, ২০ নভেম্বর ভোলা এবং ২১ নভেম্বর বরিশালে ছুটে যান। ২২ নভেম্বর ভাসানী ঢাকা ফিরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ ক্ষযক্ষতির বিবরণ দেন এবং বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, এই দুর্দিনেও পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকেরা কেউ আসেনি। তিনি দুর্গতদের ত্রাণসামগ্রী সাহায্যের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানান। পরদিন ২৩ নভেম্বর পল্টনে এক জনসভা আহবান করেন। পরদিন জনসভায় উপস্থিত লক্ষ জনতার সমাবেশে প্রথমে তিনি তাঁর নিজ চক্ষে দেখে আসা ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেন। তিনি পাকিস্তানী শাসকদের চরম উদাসীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ..বাঙালীর দুঃখের দিনে তারা আসেনি। অথচ কথায় কথায় জাতীয় সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলা হয়। এইসব সংহতি আর ভ্রাতৃত্ব বোগাস।৪৭ এরপর ভাসানী যেন হঠাৎ করেই পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণকে ‘আসসালামো আলাইকুম’ জানিয়ে দিয়ে ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিলেন। উপস্থিত জনতা সঙ্গে সঙ্গে তার জবাবে একই শ্লোগান দিলো। এটাই ছিলো প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা।’

ৃইয়াহিয়া মুজিব ৫ দিন অব্যাহত আলোচনার পর ২১ মার্চ ইয়াহিয়া ভুট্টোকে খবর দিয়ে ঢাকায় আনেন। ভুট্টো মুজিব ইয়াহিয়া ২২ মার্চ প্রথম পর¯পরের সম্মুখীন হন। ২৩ মার্চ তাঁরা সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। ২৫ মার্চের প্রস্তাবিত সংসদ অধিবেশন স্থগিত করা হলো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত্রিতে বাংলার জনগণের উপর সামরিক অভিযানের হুকুম দিয়ে ইয়াহিয়া খান করাচী চলে যান। ভুট্টো সামরিক অভিযান প্রত্যক্ষ করে পরদিন করাচী গিয়ে বললেন, ‘পাকিস্তান বেঁচে গেছে’। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাত্রিতেই শেখ মুজিব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার একটি ঘোষণা পাঠ করেন। এটা ছিলো ৪র্থ স্বাধীনতা ঘোষণা।

একজন ইতিহাসবিদের রচনায় যথার্থ শব্দ ব্যবহার অতীব জরুরী। কারণ শব্দ ব্যবহারের ওপরই মূলত নির্ভর করে সেই বাক্যের প্রকৃত অর্থ বা মানে। ইনামূল হক সাহেব পরিশ্রম করে লিখেছেন, সেটা বোঝা যায়। কিন্তু যখন তিনি লেখেন ‘ মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার একটি ঘোষণা পাঠ করেন। এটা ছিলো ৪র্থ স্বাধীনতা ঘোষণা’। তখন এ-নিয়ে দ্বিধা জন্মে। কারণ ‘বিদ্রোহ’ ও ‘দপাঠের’’মধ্যে বাক্য গঠনগত অসামঞ্জস্য দেখা যায়। বরং বাক্যের শেষাংশ ‘শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার একটি ঘোষণা দেন’ – হতো যথার্থ। এখানে বিদ্রোহ ও পাঠের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে গেছে। যিনি সামরিক বাহিনীর একজন মেজর, তিনি যখন বিদ্রোহ করেন, তখন তার মধ্যে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো না। তিনি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেন। সেই মেজর সাহেব কালুরঘাট বেতারে গিয়ে স্বাধীনতার ‘ঘোষণা’ পাঠ করতে পারেন না। সেখানে কেউ স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা পত্র লিখে নিয়ে মেজর জিয়ার জন্য অপেক্ষমান ছিলেন না যে তিনি সেটা নিয়ে পাঠ করবেন।

মেজর জিয়া নিজেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বতোপ্রণোদিত হয়ে। নিজের ডায়রীতে তিনি সেই ঘোষণা মোসাবিদা করেছিলেন, সেটা আমি দৈনিক দেশ-এর একটি বিশেষ সংখ্যা সম্পাদনা করার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখেছি এবং পাঠ করেছি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তিনি ঘোষণা দেননি। দ্বিতীয়বার যখন সেই ঘোষণা তিনি দেন তখন তিনি যোগ করেন ‘আওয়ার গ্রেট লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষের’ কথা বলেছেন। ওই ঘোষণা গোটা দেশবাসী না শুনলেও ১০/১২ মাইলের মধ্যে যারা রেডিয়ো শুনছিলেন, তারা শুনেছেন। পরে, প্রতিদিনই সেই ঘোষণা শোনানো হয় জাতিকে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।

স্বাধীনতা আমরা কি করে পেলাম, তা কোনো বিতর্কের বিষয় নয়। যুদ্ধ করে দেশটা জনগণ স্বাধীন করেছে। এই স্বাধীনতার সব অবদান রাজনীতিকদের হতে পারে না। এই স্বাধীনতার সব অবদান জনগণের হতে পারে না। এই স্বাধীনতার সব অবদান আওয়ামী লীগের হতে পারে না—যতোই দলটি থাক মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে এবং বঙ্গবন্ধুর নামেই তা পরিচালিত হোক না কেন। দেশের আপামর জনগণের অবদান আমাদের স্বাধীনতায়। তবে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুই ছিলেন সবার ও সব কিছুর প্রেরণার উৎস ও শক্তি। স্বাধীনতার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিনির্মাণে ম্ওলানা ভাসানী ও তার নেতৃত্বাধীন ন্যাপসহ অন্য সব বামধারার রাজনৈতিক দলের অবদান রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই সমান অবদান , তা বিবেচনা করতে হবে। আমরা কাউকে ছোটো বা কাউকে বড় করে স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা জাতি করেছিলো তাকে বিতর্কিতও করতে চাই না। আমাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে যত গবেষণা হবে ততোই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। আমাদের সেই অনিবার‌্য সত্যের পথে হাঁটতে হবে আজ।
০২/২৪/২০২১
ঢাকা

advertisement

Posted ১০:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6287 বার পঠিত)

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1307 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1152 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.