চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২
চুরি করেছি, করেছি, তুই দেখলি কেন? আর যখন দেখেই ফেলেছিস চুপ করে থাকলি না কেন? এটাই তোর অপরাধ। এই হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থা। এখানে চুরি করা যেমন অপরাধ, চুরি দেখাটাও অপরাধ। কয়েক বছর আগে সিলেটে সামিউল নামে একটি ছেলেকে চুরির অভিযোগ পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। ওকে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই দৃশ্য দেখে সারা দেশের মানুষ সামিউলের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। মূল আসামী সৌদী আরব পালিয়ে গিয়েও বাচতে পারেনি। প্রবাসীরা ওকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল।
সবকিছু সম্ভব হয়েছিল ওই ভিডিওর জন্য। পুলিশ সব আসামীকে গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছিল যে ভিডিও চিত্র ধারন করেছিল তাকেও। অথচ ওই ভিডিওটি না হলে ওই ঘটনাটি অন্য হাজারো ঘটনার মত আড়ালে পড়ে যেত। বড় বাচা বেচে গেছে বরগুনায় রিফাতের ওপর আক্রমনের ভিডিও দৃশ্য যে ধারন করেছিল। দিনে দুপুরে প্রকাশ্য রাজপথে রিফাত শরীফের হত্যাকান্ডের দৃশ্য সাড়াদেশে আলোড়ন তুলেছিল। শেষ পর্যন্ত ঘটনার মূলনায়ক নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে পর্দার আড়ালে থাকা আওয়ামী লীগের রাঘব বোয়ালদের রক্ষা করা হয়েছিল। হত্যাকান্ডে প্রকাশ্য অংশগ্রহনকারী সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এসব কিছুই হয়েছে ওই ভিডিওটির কল্যানে। পুলিশ কিন্তু ওই ভিডিওকারীকেও খুজেছিল। ব্যাটা তুইইতো ভিডিও ধারন করে সব তালগোল পাকিয়ে দিয়েছিস। না হলে এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়াতো কোন ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি।
বাংলাদেশে লোহার রডের পরিবর্তে বাশ দিয়ে রাস্তা তৈরী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পদ্মা সেতু তৈরীতে গুনগত মানের ব্যাপারে কোন আপোষ করা হয়নি। এক্ষেত্রে সরকার যা বলে আমাদের তাই বিশ্বাস করতে হবে। কারন পদ্মা সেতু তৈরীর সরঞ্জাম পরীক্ষা করার মত সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের প্রকৌশলীদের সেরকম অভিজ্ঞতা, যন্ত্রপাতি বা প্রবেশাধিকার কোনটাই নেই। প্রথমে বিশ্বব্যাংকের লোন নিয়ে পদ্মা সেতু তৈরী করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেটি ফাস হয়ে যাওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরপর কয়েকবার প্রকল্পের সময় ও বাজেট বাড়িয়ে নির্মানকাজ শেষ করা হয়েছে। একই সাথে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ পাচারের বিশ্বরেকর্ডের খবরও এসেছে। এ দুইয়ের মাঝে যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা নিশ্চয় অমূলক নয়। এ বাস্তবতায় একজন ইউটিউবার যখন দেখল স্বপ্নের এই সেতুর নাট, বলটু কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই খালি হাতে খুলে ফেলা যায় তখন সে এটা জাতিকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেছে এবং সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে। সে জাতির সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উন্মোচন করেছে যা আমরা কেউই জানতামনা। বিশেষজ্ঞরা যে বিষয়টি ধরতে পারেনি তা একজন ইউটিউবার ধরে ফেলেছে। সরকারের উচিত ছিল তার তথ্যগুলি পরীক্ষা করে দেখা ও তাকে পুরস্কৃত করা। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই যে যার মত সেখানে প্রবেশ করছে। কোন মনিটরিং নেই। কেউ কেউ মলমূত্র ত্যাগ করছে, কেউবা মোটর সাইকেল রেসিং করছে। দেখার কেউ নেই। কতৃপক্ষ শুধু টোলের টাকা গননায় ব্যস্ত। আর দেখেছে শুধু খালি হাতে নাট, বলটু খুলে ফেলার ভিডিও। ভিডিওকারীর সহযোগীতা না নিয়ে তাকে গ্রেফতার করে সরকার যেন সবাইকে মেসেজ দিচ্ছে – যা দেখেছিস দেখেছিস, বলতে গেলি কেন। বাংলাদেশের মানুষকে এখন সকল অন্যায় নিরবে সহ্য করতে হবে। বলতে গেলেই বিপদ। এ অবস্থা হয়তো চলবে আরও অনেক দিন। অন্তত যতদিন এই গবুময় শাসন আছে ততদিনতো অবশ্যই।
Posted ২:১০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh