চৌধুরী কাজল | বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
যদি এমন হতো ঝগড়াঝাটি যতই হোক, গালাগালি যতই করুক কেউ কাউকে মারতে পারবে না। কারো গায়ে হাতে তোলা যাবে না। তাহলে হয়তো আমাদের সমাজটাই অন্য রকম হতো। আমার মনে হয় আমাদের সমাজে যে এত মারামারি এত সন্ত্রাস এর প্রথম ধাপটাই হচ্ছে চড়, থাপ্পড় বা পিটুনি। এর বিরুদ্ধে যদি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যেত তাহলে ঝগড়াঝাটি সন্ত্রাসে পরিণত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু হচ্ছে না। বাংলাদেশে যে চড় থাপ্পড় একটি বিরত্বের কাজ।
আমি অনেককেই বলতে শুনি ওকে মারা দরকার, ওকে পিটিয়েছিলাম। অনেককে বলতে শুনেছি তোমাকে এভাবে বললো তুমি কষে একটা থাপ্পড় লাগালে না কেন। কাউকে যদি প্রকাশ্যে একটি চড় মারতে পারেন কিছু লোক হয়তো আপনার নিন্দা করবে, পাশাপাশি কিছু লোক আপনার প্রশংসাও করবে। বলবে দেখ ভাইয়ের (অথবা স্যারের বা বসের) কি রাগ। ওক এক থাপ্পড় দিয়ে সোজা করে দিয়েছে। আমাদের মানসিকতাটাই এরকম। আমরা চড় থাপ্পড় খেয়েই বড় হয়েছি। প্রথমে মা বাবার হাতে, পরে স্কুলে শিক্ষকদের হাতে। এরপর বন্ধুদের সাথে মারামাড়ির মাধ্যমে এর বাস্তব প্রয়োগ শুরু। এরপর অনেকে ঝড়ে পড়লেও কিছু কিছু মেধাবী ক্রমাগত চর্চার মাধ্যমে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে জাতীয় পর্যায়েও তারকাখ্যাতি লাভ করতে সমর্থ হয় । সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বললেও সবাই কিন্তু সন্ত্রাসীদের অপছন্দ করে না। আমি অনেককে বলতে শুনেছি ওমুক শীর্ষ সন্ত্রাসী আমার ভাই, ও আমার বন্ধু।
আমরা বা আমাদের সমাজ মারামারিতে এতটাই আচ্ছন্ন যে শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে বেত নিয়ে আসছেন এটা আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক। শিক্ষক শিক্ষা দেবেন, তিনি বেত নিয়ে আসবেন কেন এটা আমরা ভাবি না। রাস্তায় কোন চোর বা পকেটমার ধরা পড়লে (অথবা সন্দেহ হলে) তাকে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলতে হবে, পুলিশ কাউকে ধরলেতো মারবেই এই জাতীয় সংস্কৃতিতে আমরা অভ্যস্থ। তাই মারামারি ও সন্ত্রাস আমাদের সমাজ থেকে যাচ্ছে না। তাই সমাজ পরিবর্তনের জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা দরকার। কিন্তু করবে কে? আমাদের আইন প্রণেতারা কি সে যোগ্যতা রাখেন।
একদিন শাহবাগে দেখলাম একটি গাড়ীকে সাইড না দেওয়ায় ড্রাইভার রিকশাওয়ালাকে বেদম প্রহার করছে। পুলিশের সামনেই। প্রভাবশালী ব্যাক্তির ড্রাইভার নিশ্চয়। যদি এমন হতো যে কেউ কারো গায়ে হাত দিলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। অপরাধ যাই হোক সবার আগে বিচার হবে সে কেন মারলো। তেমনি থানায় লাগানো থাকবে সিসি ক্যামেরা যাতে পুলিশও কাউকে মারতে না পারে। তাহলে বিচার হবে পুলিশেরও। বাংলাদেশে মানুষের গায়ে হাত তোলা কোন ব্যাপারই না। শুধু লক্ষ্য রাখতে হয় প্রতিপক্ষ নিজের চেয়ে দুর্বল কিনা। এতেই আমরা অভ্যস্থ। এর যে কি প্রভাব সমাজে পড়ছে আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।
আমেরিকার একটি উদাহরন দিয়ে শেষ করছি। কয়েকদিন আগে অস্কার বিতরন অনুষ্ঠানে একজন অভিনেতা উপস্থাপককে মঞ্চে এসে চড় মেরেছিলেন। এটা কিন্তু আমেরিকার সংস্কৃতি না। এখানে কেউ কাউকে মারলে পুলিশ হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে দেখা হয় কার কি অপরাধ। যদিও ব্যাতিক্রম আছে, কিন্তু মারামারি হার এজন্য এখানে অনেক কম।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন নিউইয়র্ক আসেন (সাধারনত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি এসে থাকেন) তখন শত শত সরকার ও বিরোধী দলীয় সমর্থক মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বে দাড়িয়ে শ্লোগান দেয়। এসময় তারা ডিকশেনারীর সমস্ত গালাগাল প্রতিপক্ষের ওপর উজার করে দেয়, কিন্তু ওই পর্যন্তই। কেউ কাউকে টোকাটিও দেয়না। কারন তারা জানে পুলিশ মামারা হ্যান্ডকাফ নিয়ে তাদের ওপর নজর রাখছেন। যদি বাংলাদেশেও এমন হতো। আপনি হয়তো বলবেন আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করা ঠিক না। মানছি, কিন্তু আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের পার্থক্যটা কোথায়। অর্থ, বিত্ত বা শক্তিতে। কিন্তু বিদ্যাবুদ্ধি বা মেধায় আমরা ওদের চেয়ে পিছিয়ে থাকবো কেন। আচ্ছা, এটাও মানলাম। ওদের কাছ থেকেতো আমরা শিখতে পারি। এতটুকু যোগ্যতাও কি নেই। তাহলেও তো সন্ত্রাস অনেকখানি মিনিমাইজ করা যায়।
Posted ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh