এস, এম জাহাঙ্গীর | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
আমেরিকায় এসে আমাদের দেশের তথাকথিত কিছু রাজনৈতিক নেতা গাল’গল্প তথা পয়সার বিনিময়ে দল-ভিন্নদলের ব্যাপারে জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে মতবিনিময়-সভা করার হিড়িক দেখে মনে হয় “আমাদের দেশে এক টাকায়’ও ডজন বিক্রি না-হওয়া দেশীয় কিছু শিল্পীর নিউইয়র্কে এসে ১,০০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার মত সস্তা কোন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ইদানিং আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ থেকে এখানে আসা কিছু রাজনৈতিক নেতার অবস্থা ঠিক দেশ থেকে এখানে আসা ১ টাকা ডজনেও বিক্রি না-হওয়া শিল্পীদের মতই হয়েছে।। দেশে ১ টাকা ডজনও বিক্রি হয় না এমন কিছু শিল্পী যেমন এই আমেরিকায় এসে কিছু কিছু এজেন্টের মাধ্যমে এখানকার কিছু ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপের রাস্তায় ওষুধ বিক্রি করার মত সংগঠকদের’ কাছে হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়, ঠিক সেভাবেই দেশে ‘ডজন যেখানে এক টাকায়ও বিক্রি হয় না’ এমন কিছু নেতাও যেন এখানে আজকাল তেমনি হাজার টাকায়ও বিক্রি হয় সেই সব তথাকথিত সংগঠকদের কাছে। এদের কারও কারও নিজেদের কোন যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মাননীয় সংসদ সদস্যদের অনুকম্পায় নেতা নির্বাচিত হলেও এখানকার বিভিন্ন বক্তব্যে কিন্তু ওরা নিজেদেরকেই সেই সব সংসদ সদস্যের চেয়েও অনেক বড় নেতা বলে দাবী করেন।
এ প্রসঙ্গে এদেশে অর্থাৎ এই নিউইয়র্কে আসার পরপরই তেমনই এক নেতার একটি হাস্যকর ঘটনা আজ না বলে পারছি না। ১৯৯৩ সালের কথা। তখন আমাদের বাংলাদেশের নেতাদের কাছে আমেরিকার কোন কংগ্রেসম্যান অথবা মেইনষ্ট্রীমের পাতি চাপাবাজ কোন নেতার সাথে দেখা করার ছবিও কোন কোন বাংলা পত্রিকার নিউজ করা মানে – দেশের জাতীয় নেতানেত্রীদের কাছে পদ’বাগানোর জন্য যেন বিরাট ব্যাপার’ই ছিল। ওই বছর তেমনই এক ধান্দায় এখানকার এক পাতি নেতা নিউইয়র্কের রাজনীতির ধারা না-জানা বোকা ধরনের এক ডাক্তারকে পটিয়ে প্রসিডেন্ট ক্লিনটনের এক ডিনার পার্টিতে দাওয়াত পাবার লোভ দেখিয়ে – অনায়াসে ১,০০০ ডলার করে পাওয়া যায় এমন প্রতিটি টিকেটের ৩/৪টি টিকেট কিনে তার ১টি টিকেট দিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রায় জাতীয় পর্যায়ের উপোষ করা এক নেতাকে সেই টোপ গিলিয়ে অনায়াসে নিউইয়র্কে নিয়ে আসেন।
ধুরন্ধর সেই পাতি নেতার পরিকল্পনা মাফিক দেশের সেই ডাকসাইটে নেতাকে এবং এখানকার’ই তার এক চামচাকে নিয়ে ক্লিনটনের ১,০০০ ডলারের টিকেট কিনে সেই ফান্ড রেইজিং ডিনার পার্টিতে ঢুকলেন। তার পরিকল্পনা হলো যে করেই হোক লাইন ধরে ক্লিনটনের কাছাকাছি গেলেই নির্ধারিত সেই চামচাকে দিয়ে আগেই শিখিয়ে রাখা হাজারো মানুষের ভিড়ে ঘেঁষাঘেষি করে হলেও যথারীতি প্রসিডেন্ট ক্লিনটনের কাছে পৌঁছা মাত্রই যেন ক্লিনটনেকে সহ দেশ থেকে আসা আমাদের কথিত সেই জাতীয় নেতার একটা ছবি তুলে ফেলা হয়। কথা মতই কাজ। কিন্তু বিধি বাম। তাড়াহুড়ো করে তথা চুরি করে ছবি তোলার সময় সেই চামচার কুনুইয়ে অপর এক ব্যক্তির ধাক্কা লেগে ক্লিনটনের সাথে সেই নেতা ছবিটি কাঁপা কাঁপা হয়ে ঝাপসা ভিন্ন চেহারার রূপ নেয়, যা চেনাই যাচ্ছিল না। কিন্তু তখন তো আর সে জায়গায় ধীরগতিতে চলমান সুশৃঙ্খল লাইন থেকে বেরিয়ে এসে কিছু করার উপায়ও ছিল না।।
তাই পরদিন অনেক ঘষামাজা করেই সেই নেতা আর ক্লিনটনের ছবিটি তৎকালীন একটি বাংলা পত্রিকায় দেয়ার ব্যাপারটা হয়ে উঠেছিল তৎকালীন নিউইয়র্কের অনেকের হাস্যকর এক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার মত তখনকার যারা আজও বেঁচে আছেন, তেমনি এখানে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকাগুলোর পাঠক মাত্রই ঘটনাটি সম্পর্কে জানেন। তাই আমি জানি, তাদের নাম এ লেখায় প্রকাশ না করা সত্ত্বেও ঘটনাটি স্মরণ করতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এখানে আমি সেই প্রয়াত নেতার উদ্দেশ্যে এই লেখাটি লিখছি না। আমার আজকের এ লেখার উদ্দেশ্য হলো, এতদিন পরও আমরা যে এ ধরনের ধান্ধাবাজি থেকে বের হয়ে আসতে পারলাম না, সেই অনুশোচনা করা।
সেজন্য বলতে হচ্ছে, এতগুলো পেরিয়ে আসার পরও আজকের এই দিনে এসেও যে আমরা এখানকার কিছু স্বঘোষিত কিছু বাঙালি সংগঠক এখনও অতীতেই রয়ে গেছি, তথা বাংলাদেশের কিছু কাঙ্গালি নেতাও যে সেই তখনকার মতই মতবিনিময়ের জন্য তেমনই কাঙ্গাল রয়ে গেলেন তা ভেবে এখন আমার বড় দুঃখ হয়।
প্রবাস এবং দেশের আমাদের সেই সব ভিক্ষুক-কাংগালদের সেই একই ধারার চাঁদাবাজির মহড়া কিংবা বলতে পারেন ধান্ধাবাজির মহড়া আজও যেন ঠিক আগের মতই চলছে। তাদের ভাবসাব দেখে মনে হয় “শুধুই কি অর্থ লুটপাট করার ধান্ধায় নেতা হওয়ার এই কাঙ্গালিপনা” আজীবন এমন ধারায় চলবে? সুতরাং – চান্দাবাজ এবং ধান্ধাবাজ নেতা তথা সংগঠকরা হুঁশিয়ার সাবধান!
Posted ২:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh