বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

মানবিক সমাজ গড়ার জন্য

জাফর আহমাদ   |   বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১

মানবিক সমাজ গড়ার জন্য

একটি মানবিক সমাজ গড়ার জন্য কি করতে হবে? বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এটি একটি জটিল প্রশ্ন। সুন্দর সমাজের জন্য পৃথিবীর গ্রেড থিন্কাররা রাত-দিন মাড়িয়ে চলছেন অনেকটা তারাহীন রাতের গভীর সমুদ্রের সেই দিক্ভ্রান্ত নাবিকের মতো। কোথায় গিয়ে তাদের যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটবে তা তারা নিজেরাই জানে না। আর জানে না বলেই, সুন্দরের প্রত্যাশায় নির্মিত থিওরীগুলো এমন হাজারো অসুন্দরের জন্ম দেয়, যা সকলে মিলেও তার প্রতিরোধ করা যায় না।

দুর্ভাগ্য সে সমস্ত গ্রেড থিন্কারদের জন্য এবং দু:খও হয় বটে। কারণ অত্যন্ত নিকট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দিবালোকের মতো স্পষ্ট একজন সুন্দর মানুষ এসেছিলেন নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা জাজিরাতুল আরবের বুক চিড়ে, তপ্ত বালিকায় চিক্ চিক্ আলোর রশ্মির ঢেউ তুলে মরু সাইমুম সম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি নিয়ে এলেন মহান আল্লাহর তত্বাবধানে লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আল কুরআন, ছড়িয়ে দিলেন শত বছরের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর, অন্ধকার দুরীভূত হলো, মানুষ জেগে উঠল একরাশ সুন্দর পৃথিবীর সোনালী আভায়। মুক সব মুখর হলো, পথহারা পেলো পথের দিশা। আল্লাহ বলেন, “আলিফ-লাম-রা। (হে মুহাম্মদ!) এটি একখান কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন তুমি মানুষদেরকে জমাট বাঁধা অন্ধকারসমুহ থেকে বের করে আলোতে লয়ে আস।” (সুরা ইবরাহিম : ১)


আয়াতে লক্ষণীয় হলো যে, ‘নূর’ অর্থাৎ আলো শব্দটি এক বচন এবং ‘জুলুমাত’ অর্থাৎ অন্ধকার শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে। এর কারণ হলো, আলোর পথ হয় একটি আর অন্ধকারের পথ হয় অনেক। কারণ আলোর পথটি আলোকিত বিধায় এর গন্তব্যস্থল সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত পক্ষান্তরে অন্ধকারে সুনিশ্চিত কোন পথ বাঁচাই করা অসম্ভব বিধায় এর পথ হয় অনেক। অন্ধকারে পথচলা ব্যক্তি আধাঁরে হাতড়িয়ে যে কোন অনিশ্চিত পথের যাত্রী হতে পারে। পথটি তার জন্য ভাল-মন্দ উভয় হতে পারে। আল কুরআন হলো, সেই আলো যে আলোয় একজন লোক তাঁর সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারে।

মানুষের কোন জ্ঞান নেই। শয়তানের বেড়াজাল বিস্তৃত পৃথিবীতে চলতে হলে মানুষের জ্ঞানের প্রয়োজন। কারণ শয়তান প্রকৃত আলোর পথকে আড়াল করে অসংখ্য কৃত্রিম আলোর পথ তৈরী করে রেখেছে। যেগুলো মূলতঃ অন্ধকারের পথ। প্রকৃত জ্ঞানের মালিক আল্লাহ তা’আলা তিনি দয়া করে আলোর পথে চলার জন্য মানুষকে দান করেছেন ‘আল কুরআন’ নামক জ্ঞানের মশাল। সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরো মেহেরবানী এই যে, তিনি আজো অবিকৃত অবস্থায় সেই জ্ঞানের মশাল আমাদের মধ্যে জ্বেলে রেখেছেন। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বিরাট ও বিশেষ নিয়ামত। কারণ এ ধরণের অবিকৃত আসমানী গ্রন্থ অন্য কোন জাতির-গোষ্ঠীর কাছে নাই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা এ বিশাল নিয়ামতকে আজ অযত্নে অবহেলিত করে রেখেছি। এখানে অযত্ন ও অবহেলার অর্থ হচ্ছে এই যে, কুরআনের সাথে যে ধরণের আচরণ করা দরকার তা আমরা করছি না। সমগ্র মানবজাতির কাছে কুরআনের দাবী হচ্ছে, মানুষ একে আত্মস্ত করবে, এর আলোকে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন বিনির্মান করবে। মানুষের সামগ্রীক জীবন ব্যবস্থাকে কুরআনের আলোকে রূপায়ন করা হলে, তবেই কুরআনের প্রতি সুবিচার করা হবে। কিন্তু কুরআনের সেই আহবানকে ভূলে গিয়ে একে সস্তা একখান কিতাবে পরিণত করেছি। যে আমাকে সমুদ্র দিতে পারে তার কাছে নদী দাবী করা মানে তার উন্নত মর্যাদার হানি করা। কুরআন আমাকে একটি সুন্দর পৃথিবী দিতে পারে, তার পরিবর্তে তার কাছে দশটি করে নেকী দাবী করা মানে তার শানের অমর্যাদা করা।


আজকের পৃথিবী অশান্তির দাবানলে জ্বলছে। কোথাও শান্তি নাই-শান্তি নাই। শান্তির পিপাসায় মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন মতবাদের দ্বারস্থ হয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে বার বার ফিরে আসছে। মনে করুন বিশাল সমুদ্র, যার পানি দরুন মিষ্টি, এর পাশে দাঁড়িয়ে কোন ব্যক্তি যদি তৃষ্ণার্থ হয়ে মরতে থাকে, তবে তার চেয়ে বড় বোকা আর কে হতে পারে ? সমুদ্র থেকে এক অঞ্জলি পানি পান করলেই তো তার তৃষ্ণা মিটে যায়। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ শান্তির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। এ পিপাসা নিবারণের জন্য চলে যাচ্ছে ড্রেনের পঁচা ও পূঁতি গন্ধময় পানির কাছে। তা পান করে রোগ-বালাই ও ব্যধি ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময়। ড্রেনের পঁচা পানি হলো মানুষের মনগড়া মতবাদ, যা মানুষের মস্তিস্ক প্রসূত। অথচ লোকটি আগে দেখল না তার ঘরে পানি আছে কিনা। তার ঘরে যে পানি আছে তার নাম ‘আবে হায়াত’ তথা ‘আল-কুরআন’।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠী আল কুরআনের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমাদের অনেকে হয়ত কুরআনকে পড়তে পারি না অথবা যারা আমরা পড়তে পারি, তারা এর অর্থ জানি না, অথবা অর্থ জানলেও গভীরে প্রবেশ করে তার আবেদনে সাড়া দেই না। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানদের দুরাবস্থার মুল কারণ কিন্তু এখানেই।


আমরা বিরাট এক ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছি, তা হলোঃ ‘কুরআন বুঝা আমাদের কাজ নয়, এটি আলেম ওলামাদের কাজ।’ অথচ আল কুরআনের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন,“হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট হতে এসেছে উপদেশ, তোমাদের অন্তরে যে (রোগ) আছে তার আরোগ্য এবং মুমিনদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত।”(সুরা ইউনুসঃ৫৭) আল্লাহ তা’আলা বলেন “ইহা মানব জাতির জন্যে ব্যাখ্যা এবং মুত্তাকীদের জন্যে পথ নির্দেশ ও উপদেশ বাণী।” আল্লাহ বলেন,“তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমান এসেছে গেছে সুতরাং কেউ তা দেখলে তার দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে। আর কেউ না দেখলে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমি তোমাদের তত্বাবধায়ক নই।”(সুরা আনয়ামঃ১০৪) হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে কুরআনের কিছুই নেই সে পরিত্যক্ত ঘর তুল্য।” (সহীহ মুসলিম)

আল-কুরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সকল মানুষের হেদায়াতের মশাল, দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির সনদ। এটি একক কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের সম্পদ নয়। বরং কুরআন সকল মানুষের এক অতুলনীয় ও অমুল্য সম্পদ। যা অবতীর্ণ করা হয়েছে মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য। আল-কুরআন হচ্ছে প্রত্যেকের শিক্ষক এবং বিজ্ঞ পরামর্শদাতা। তাই কুরআনকে বুঝতে হবে। কুরআনের সত্যিকারের রহমত ও সম্পদ আহরণ সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না এর অর্থ বুঝা যায়। আল্লাহ বলেন,“এটি এক বরকতময় কিতাব, আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন এই লোকেরা এর আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেকসম্পন্ন লোকেরা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।”(সুরা সাদ : ২৯) “এতে অত্যন্ত শিক্ষামুলক সবক রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যার দিল আছে কিংবা যে খুব লক্ষ্য করে কথা বলে।”(সুরা কাফ : ৩৭)

মুসলিম দেশের সরকার প্রধানদের কাছে আবেদন এই যে, সকল প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে বিশেষত একটি মানবিক সমাজ উপহার দেয়ার জন্য আল-কুরআনকে বাধ্যতামুলক শিক্ষায় পরিণত করুন। আমি শতভাগ জোর দিয়ে বলছি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে স্বমূলে উচ্ছেদ হবেই হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, আল-কুরআন ছাড়া আর যত নির্ভূল কর্মসুচী, কর্মনীতি ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা হোক না কেন, তা সবই ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ এবং পরিণতির দিক থেকে তা মানুষের জন্য ধ্বংসই ডেকে আনবে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ পৃথিবীর জুড়ে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনের নামে দেশের পর দেশ ধ্বংসই হচ্ছে। কোথাও কি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি কোন অংশে হ্রাস পেয়েছে? সুতরাং আল-কুরআনের রুদ্ধ দুয়ার খুলে দিন, তবেই আলোকোজ্জল এক সোনালী সমাজের দেখা মিলবে।

advertisement

Posted ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(6272 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1151 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.