চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল | বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
ভারতের অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। একটি মসজিদ ভেঙ্গে সে জায়গায় নির্মান করা হয়েছে এই মন্দিরটি । অনেক রক্ত ঝড়েছে। অনেক আন্দোলন, হতাশা, সংঘাত, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা ছড়িয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় তথাকথিত সেক্যুলার একটি রাস্ট্রে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যে এরকম একটি ঘটনা সম্ভব এটা কেউ কল্পনাও করেনি। যা কেউ কল্পনা করেনি সেটাই সম্ভব করেছে ভারতের বিজেপি সরকার। মোগল সম্রাট বাবরের সময়ে তৈরী এই মসজিদটি ভেঙ্গে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের অনেক আগে থেকেই ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা মসজিদটি ভাঙ্গতে সমর্থ হয় ১৯৯২ সালে। লক্ষনীয় ব্যাপার হচ্ছে এ ধরনের একটি ঘৃণ্য ঘটনা ঘটানোর পর বিজেপি’র জনপ্রিয়তা কমেনি, বেড়েছে গুন।
এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠায় ভারতীয় সব শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিরা অর্থায়ন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার পর্যন্ত অনেক সেলিব্রেটিকে অংশ নিতে দেখা গেছে। কারো বিবেকে বাধেনি। কারো মনে হয়নি অনেক মানুষের রক্তের ওপর এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। আদালতের রায় নিয়ে এখানে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। যে বিচারকরা এই রায় দিয়েছিলেন তাদেরকেও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় তারা কোন জাতের বিচারক। এতে একটা জিনিস পরিস্কার সেটা হচ্ছে ভারতে মুসলমান বিদ্বেষ। মানুষে মানুষে ধর্মীয় পার্থক্য তো থাকবেই। এই পৃথিবী একটি ধর্মের জায়গা নয়। কিন্তু ধর্মীয় বিদ্বেষ এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠবে কেন।
ভারত দক্ষিন এশীয়া অঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ রাস্ট্র। এর যে কোন ঘটনা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলিকে প্রভাবিত করে। খুশীর খবর এই যে, ধর্মীয় বিদ্বেষটা দক্ষিন এশীয়ার অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে যায়নি। ভারতে কয়েকদিন পরপর মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে হত্যাযজ্ঞ চলে এরকম আর কোন দেশে হয় না। পাকিস্তানে হয়না, নেপালে হয়না, আফগানিস্তানে হয় না। বাংলাদেশেতো নয়ই। কিন্তু আমি শঙ্কিত। তারা দেখেছে ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির সাফল্য। এক গুজরাট হত্যাকান্ড নরেন্দ্র মোদীকে কোথায় নিয়ে এসেছে। যে মোদীকে মনে করা হয়েছিল পরিতাজ্য, সে আজ ভারতের অবিসংবাদিত নেতা। সে নাকি ভারতের অনেক উন্নতি করেছে।
ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আজ খুশী। অযোধ্যার যুদ্ধে জয়ী হয়েছে তারা। যেখানে মসজিদ ছিল সেখানে মন্দির হয়েছে। সেখানে উৎসব হচ্ছে। রাম ফিরে এসেছেন তার জন্মভূমিতে। কিন্তু, মৃত্যু হয়েছে নৈতিকতার, ভালবাসার, সম্প্রতির। আমি জানি বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর অনেক ভক্ত রয়েছে। অনেকে বাংলাদেশকে ১৯৪৭ এর পূর্বাবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। ওদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এই দুষ্টচক্রটি বাংলাদেশে বিজেপির মত অনেক অঘটন ঘটিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইবে। আমরা ভারতের মত উন্নয়ন চাইনা। নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষ চাই না। আমাদের পারমানবিক অস্ত্র না থাকুক, আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। তিন দিক থেকে ভারত পরিবেস্টিত একটি দেশে এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। অনেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পিত অভিযোগ এনে অথবা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে হাইলাইট করে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা করতে চাইবে। কিন্তু জনগনকে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু খারাপ লোক থাকবে। পৃথিবীতে যতদিন মানবজাতি থাকবে, শয়তানও থাকবে। শয়তানের শয়তানীর কাছে হার মানলে চলবে না। মনে রাখতে হবে আমরা একটি স্বাধীন জাতি, আমাদের স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। দক্ষিন এশীয়ায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসের শ্রেষ্ঠতম এই দেশটির শ্রেষ্ঠত্ব যেন ক্ষুন্ন না হয়।
Posted ৭:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh