শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

সালাম দিন সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণে

জাফর আহমাদ   |   বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

সালাম দিন সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণে

সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণে ও স্পষ্ট ভ্ষাায় সালাম দিন । কখনো বিকৃত বা অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দিবেন না। কারণ সালাম হচ্ছে, সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও বন্ধন সৃষ্টিতে একটি কার্যকরি সামাজিক রীতি এবং ইসলামের গুরুত্বপুর্ণ একটি সংস্কৃতি। আপনি যদি সালামকে বিকৃত করেন তাহলে আপনি ইসলামকে বিকৃত করলেন। ইসলামের সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠেছেন। ইসলামী সমাজের অধিবাসীরা একে অন্যের কল্যাণকামী, শুভাকাঙী ও হিতাকাঙী সেটি এই সালামের মাধ্যমেই অধিকতর প্রকাশ পায়।

একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ হলে প্রথমেই একে অন্যের নিরাপত্তা বা শান্তির দু’আ করবে এর পর অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা করবে। প্রথমেই বলবেন, ‘আসসালামু আলাইকুম বা সালামুন আলাইকুম’ অর্থাৎ তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। সাথে সাথে অন্যজন বলবেন,‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’ অর্থাৎ ‘এবং তোমার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক’। সালামের মাধ্যমে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। অহংকার থেকে বেঁচে থাকা যায়। সালামে আরো বহুবিদ সামাজিক উপকারিতা রয়েছে।

সালাম প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি শান্তির বার্তা পোঁছায়। একে অপরের নিরাপত্তা, রহমত ও বরকতের জন্য দু’আ করে। এ জন্য সালাম একটি বিশেষ দু’আ ও ইবাদাতও বটে। কেননা প্রথমত: অন্যের জন্য শান্তি কামনা করা মানে দু’আ করা।

দ্বিতীয়ত: আল্লাহর কাছে চাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে, মানবতার কল্যাণের জন্য। তাই সালামের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিস্ফুট হয়। সালামের মাধ্যমে একে অন্যের কল্যাণকামিতার বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়।

সাক্ষাতের শুরুতেই বলে দেয়া “আমি আপনার কল্যাণকামী সহৃদ বন্ধু। হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক সৃষ্টিেেত ইসলামী জীবন ব্যবস্থার এক অন্যতম সংস্কৃতি। সর্বোপুরি সালাম আদান-প্রদানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত করা যায়।

কুরআন ও হাদীসে সালামের গুরুত্ব অত্যাধিক। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ হে নবী! ইবরাহিমের সম্মানিত মেনহমানদের কাহিনী কি তোমার কাছে পৌঁছেছে? তারা যখন তার কাছে আসলো,বললো: আপনার প্রতি সালাম। সে বললো: আপনাদেরকেও সালাম-কিছু সংখ্যক অপরিচিত লোক।”(সুরা যারিয়াত:২৪-২৫) আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ আর যখনই কেউ মর্যাদা সহকারে তোমাকে সালাম করে তখন তাকে তার চাইতে ভালো পদ্ধতিতে জবাব দাও অথবা কমপক্ষে তেমনিভাবে। আল্লাহ সব জিনিসের হিসেব গ্রহণকারী।”(সুরা নিসা:৮৬)

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ তবে গৃহে প্রবেশ করার সময় তোমরা নিজেদের লোকদের সালাম করো, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়েছে কল্যাণের দু’আ, বড়ই বরকতপূর্ণ ও পবিত্র।”(সুরা নুর:৬১)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ হে ঈমানদারগণ! নিজের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষণ না গৃহবাসীদের সম্মতি লাভ করো এবং তাদেরকে সালাম করো। এটিই তোমাদের জন্য ভালো পদ্ধতি, আশা করা যায় তোমরা এদিকে নজর রাখবে।”(সুরা নুর:২৭)

রাসুলুল্লাহ সা:ও সালাম-এর প্রতি অত্যান্ত গুরুত্বারূপ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা: থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল সা: কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে।”(বুখারী: ১২, কিতাবুল ঈমান, বাবু ইত’আমুত ত’আমে মিনাল ইসলামে, বুখারী:২৮, ৬২৩৬, মুসলিম:৪২, আহমাদ:৬৭৬৫, আ.প্র:১১, ইফা:১১)

আবু হুরাইরা রা: বলেন যে,বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন,“ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষন না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দিব না, কি করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশী সালাম বিনিময় করবে।”(মুসলিম: ৯৮, আন্তর্জাতিক:৫৪, কিতাবুল ঈমান, বাবু বায়ানি ইন্নাহু লা….., তিরমিয:২৬৮৮, আবু দাউদ:৫১৯৩, ইবনে মাযাহ:৩৬৯২, আহমাদ:৮৮৪১)

কিন্তু ইসলামের এই সুন্দর সম্ভাষণ বা সংস্কৃতিটিকে আমরা বিকৃত করে ফেলেছি। এখন এটি কাউকে দু’আ না করে বরং বদদু’আ করা হয়। বিভিন্ন ধরণের বিকৃতির সালাম আমাদের সমাজে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সালামের কতিপয় ভুল উচ্চারণ নিেেম্ন উল্লেখ করা হলো:
এক, স্লামালাইকুম: উটের নাড়িভুড়ি আপনার জন্য; দুই, সালামালাইকুম; তিন, স্লামালিকুম: আপনাদের ওপর গযব হোক; চার, সেলামালাইকুম বা আসলা মালিকুম: শান্তির পরিবর্তে গযব, অশান্তি ও শাস্তি কামনা করা হয়; পাঁচ, আস্লা মালিকুম; ছয়: সেলামালিকুম: সাত: সাত: আস-সামুকুম: তোমাদের ওপর অস্বস্তি, ক্লান্তি ক্লান্তিকর, অসন্তোষ, বিরক্তি ইত্যাদি। আট: আসামু আলাইকুম: ইহুদীরা জেনে বুঝে মুসলমানদেরকে আস সামু আলাইকুম সালাম দিতো। যার অর্থ তোমাদের মৃত্যু হোক।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা: সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন: ইহুদীদের কেউ তোমাদের সালাম দেয়ার সময় বলে যে,“আসামু আলাইকুম” (অর্থাৎ তোমাদের মৃত্যু হোক)। জবাবে তোমরা বলবে : ওয়া আলাইকুম(অর্থাৎ তোমাদের উপরও তাই)। (আবু দাউদ:৫২০৬, কিতাবুল আদাব, বাবু ফিস সালামে আ’লা আহলিয যিম্মাতে) হাদীসটি সহীহ। ইমাম আবু দাউদ রহ: বলেন, ইমাম মালেক রহ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: (জবাবে তোমরা বলবে: ওয়া আলাইকুম।(বুখারী ও মুসলিম)

নয়: সেলাম: কলকাতার ‘সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সালামকে বিকৃত করেছে। তারা সালামের শুদ্ধ বানান লিখেছে ‘সেলাম’। সালাম-এর ব্যাখ্যায় লিখেছে ‘সালাম’ হচ্ছে ‘সেলাম’-এর রূপভেদ। তাদের মতে আস-সালামু-আলাইকুম-এর শুদ্ধ বানান হচ্ছে,‘সেলাম আলায়কুম’ যার অর্থ লেখা হয়েছে ‘নমস্কার’। এভাবে মুসলমানদের এই পবিত্র সম্ভাষণ ও দু’আর সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালানো হয়েছে। অবশ্য এ বিকৃতির জন্য আমরাই বেশী দায়ী।

উপড়ে উল্লেখিত আল কুরআনের সুরা যারিয়াত, সুরা নিসা ও সুরা নুর সালাম দেয়া-নেয়ার উত্তম পদ্ধতি এবং বরকত ও দু’আর কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টির প্রথম মহামানব আদম আ: কে আল্লাহ তা’আলা সালামের দেয়া-নেয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের জীবনের একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ হলে এই সম্ভাষন, দু’আ ও সংস্কৃতি চলছে, চলবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে মুসলিম সমাজে সালামের শব্দাবলির এমন বিকৃতি লাভ করেছে যে, সালামের উদ্দেশ্য মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। কোন কোন সালাম শব্দটি উচ্চারণে এমন বিকৃতি লাভ করেছে যে, এ সমস্ত বিকুত উচ্চারণগুলো কারো কল্যাণ কামনা বা দু’আর পরিবর্তে অকল্যাণ কামনা করা হয় অথবা শব্দগুলোর কোন অর্থই হয় না।

শুধু শব্দগত উচ্চারণেই নয় বরং বিভিন্নভাবে এর প্রচুর অপব্যবহারও হচ্ছে। আরো দু:খজনক ব্যাপার হলো, বর্তমান মুসলিম সমাজে সালাম অহংকারের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামাজিক নেতা, অফিসের বড় বস, বড় বুযুর্গ, বড় আলেম, পীর-মাশায়েখকে আগে সালাম দিতে হবে এমন কোন পদ্ধতি বা সুন্নাহ রাসুলুল্লাহ সা: বলেন যাননি। বরং রাসুলুল্লাহ সা: এর যুগে সালাম নিয়ে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগীতা চলতো, কে কার আগে সালাম দিতে পারে। সালাম দিলে অহংকার কমে, অন্তরের কৃপণতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। সালাম পাওয়ার চেয়ে দেয়ার সওয়াব বেশী। এ জন্য রাসুল সা: ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাইকে আগে আড়েগ সালাম দিতেন। এর মাধ্যমে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। সামাজিক হিংসা-বিদ্বেষ দূরিভূত হয়। শত্রুর অন্তরে ভালবাসার বীজ বপন করা হয়।

আবু হুরাইরা রা: বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের বলে দিব না, কি করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তাহলো, তোমরা পরস্পর বেশী সালাম বিনিময় করবে।(মুসলিম:৯৮, আন্তর্জাতিক-৫৪, কিতাবুল ঈমান, বাবু বায়ানে আন্নাহু লা ইয়াদখিলু জান্নাতা……, ইফা:১০০, ই.সে.১০২)

সকল মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে আবেদন, সালাম দিন স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণে, বিকৃত ভাষা পরিহার করুন। সালামকে অহংকারমুক্ত করুন। নিজেকে অহংকারমুক্ত করতে ছোট-বড়, নেতা-কর্মী, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, কুলি-মুজুর সবিশেষ সাধারণ-অসাধারণ সকলকে সালাম দিন।

আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য, নিজের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং নিজেকে আদর্শবান নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বেশী বেশী সালাম দিন। অহংকার ও বিকৃত শব্দ প্রয়োগ করে ইসলামের এই পবিত্র সংস্কৃতিটিকে নষ্ট করবেন না। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Posted ১:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গল্প : দুই বোন
গল্প : দুই বোন

(7408 বার পঠিত)

মানব পাচার কেন
মানব পাচার কেন

(1229 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: weeklybangladesh@yahoo.com

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.