চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
হিরো আলমের ধারনা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হিরো আলমকে স্যার বলতে হবে। এজন্য প্রশাসন তার বিপক্ষে কাজ করেছে। কথাটি অমূলক নয়। ইউটিউব ও ফেসবুকের কল্যানে সস্তা জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি পাওয়া হিরো আলম একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে জয়ী হলেই কি বিসিএস ক্যাডারদের তাকে স্যার বলতে হবে। অনেকে বলছেন বলতে হবে। কারন একজন সংসদ সদস্য হচ্ছেন একজন জনপ্রতিনিধি।
দেশটির মালিক যেহেতু জনগন তাই জনপ্রতিনিধিকে রাস্ট্রের কর্মচারীদের স্যার বলতেই হবে। যদি তাই হয় তাহলে প্রশাসনতো হিরো আলমকে হারাতে চাইবেই। যে লোক শুদ্ধ করে বাংলা বলতে পারেনা তাকে চৌকষ বিসিএস কর্মকর্তারা যে স্যার বলতে চাইবে না এটি সহজেই অনুমেয়। কি যোগ্যতা আছে হিরো আলমের। সংসদ সদস্যদের বলা হয় আইন প্রণেতা। হিরো আলম কি আইন প্রণয়ন করবে। সে আইনের কি বোঝে। সংসদে গিয়ে হিরো আলম কি করবে। সংসদ কি ফাজলামো করার জায়গা।
মানলাম হিরো আলমের সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নেই। কিন্তু আগে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের কি যোগ্যতা আছে। মমতাজ, মাশরাফী, হাজী সেলিম, নিক্সনরা কি সংসদে আইন প্রণয়ন করতে যান। সংসদে নিজের ইচ্ছামত ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা কি সংসদ সদস্যদের আছে। না নেই। তাহলে একজন সংসদ সদস্য উচ্চ শিক্ষিত পিএইচডি ডিগ্রীধারী হলেই কি, আর মূর্খ হলেই কি। সংসদে সবাই সমান। সবার একই কাজ। কিন্তু, কিন্তু তাই বলে কি হিরো আলমের মত একজনকে স্যার বলা যায়। কেন যায় না। বদি, আসলাম, নিক্সনদেরতো সাহেবরা স্যার ডাকছেন।
হিরো আলমকে ডাকলে অসুবিধাটা কোথায়। আছে, আছে। ওদের যোগ্যতা আছে। ওরা প্রয়োজনে প্রশাসনের বিসিএস কর্মকর্তাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করার ক্ষমতা রাখে। হিরো আলম এখনও সে পর্যায়ে পৌছতে পারেনি। একজন বদি বা হাজী সেলিমের মত লোক হাতে থাকলে বহুত ফায়দা। ওই রকম লোকদের তল্পী বহন করলে দুই নম্বরী করার অনেক রাস্তা সামনে চলে আসে। মানি লন্ডারিং তো এমপি সাহেবরা একা করেননি। মোসাহেবদের নিয়েই করেছেন। যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া যায়। কিন্তু হিরো আলমতো গরু দূরের কথা, ছাগলের যোগ্যতাও রাখে না। না, থাক এসব নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। এই তর্ক শেষ হবে না। তার চেয়ে বরং এক কাজ করলে কেমন হয়। স্যারকে বিদায় করে দিলে কেমন হয়।
স্যার শব্দটা একটি ঔপনিবেশিক শব্দ। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বৃটেন থেকে মাত্র কয়েক’শ বছর আগে নিয়ে এসেছে। এই শব্দটা আমাদের কম ভোগায়নি। এখনও সরকারী কর্মকর্তাদের বা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার সাহেবকে স্যার না বললে অনেক সমস্যা হয়। ইংরেজরা আসার আগে আগে এই শব্দটা আমরা জানতাম না। তখন অভিজাত শ্রেণী ফারসী বলতে পছন্দ করতো। ফারসীতে স্যার এর প্রতিশব্দ আগা। আমাদের উচিত ছিল মাউন্ট ব্যাটেনের সাথে সাথে স্যারকেও অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে দেওয়া। তা হয়নি। উপনিবেশে যাদের জন্ম ঔপনিবেশীয় অভ্যাস তারা সহজে ছাড়তে পারেনা।
কিন্তু এখনতো অনেক দিন হয়ে গেছে। আচ্ছা স্যারকে বিদায় করে দিলে আমরা বলবো কি? জনাব, মহাশয় শব্দগুলি কেমন যেন তামাশা মনে হয়। তাহলে বাংলা ভাষায় কি এমন কোন শব্দ নেই যা স্যারকে রিপ্লেস করতে পারে। মনে হয় তেমন যুৎসই কোন শব্দ নেই। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় বাংলাদেশ কখনো বাঙালীরা শাসন করেনি। বাঙালীরা শুধু স্যার ডেকেই গেছে। কখনো স্যার হতে পারেনি। আর এখন স্যার হয়ে শব্দটির অতি অপব্যবহার করছে। তাহলে নতুন কোন শব্দ কি আবিস্কার করা যায় না। অবশ্যই যায়। কিন্ত করবে কে! কেন, আমাদের বুদ্ধিজীবিরা করবে। আমাদের জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবিরের মত বুদ্ধিজীবিরা আছেন। তারা চেস্টা করলে অবশ্যই হবে। তাছাড়া সংসদে গিয়ে, যদি কোন দিন যেতে পারে, হিরো আলমও উদ্যোগ নিতে পারে। সবাই চেস্টা করলে হবে। অবশ্যই হবে। বাঙালীর অসাধ্য কিছু নেই।
Posted ৩:৪৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh