মোসাদ্দেক চৌধুরী আবেদ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
সৎ নেতৃত্ব আছে বলেই আমেরিকা এত এগিয়ে। নেতারা এখানে সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলে। রাষ্ট্রের টাকা জনগণের। নেতাদের তা ধরারও কোন উপায় নেই। নেতাদের ১০০% সৎ থাকতে হয় এখানে। কোন অনিয়ম করবেন তো ধরা পড়ে যাবেন। আপনার জীবন শেষ। মেয়র, গভর্ণর, সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, এমন কি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। কেউ নিয়মের বাইরে যেতে পারবেন না। আপনি নেতা হয়েছেন তো কি হয়েছে, আপনি আইনের উর্ধ্বে নন। এ দেশে আইন সবার জন্য সমান। এখানে কেউ উচু নিচু নয় সবাই সমান। আইন কারোর পক্ষে নয়। আইন তার গতিতে চলে। এ দেশে কোন সুপারিশ তদবির নেই। আপনি কোন অন্যায় করেছেন তো মরেছেন। প্রতিটি মূহুর্তে মেয়র, গর্ভনর, প্রেসিডেন্টের জবাব দিতে হয়। সততার দরুনই একমাত্র আমেরিকা বিশ্বের রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে সর্ব উন্নত ও সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে আজ বিশ্বরাষ্ট্র নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস অর্জন করেছে।
এ দেশের নেতারা সর্বকালে সর্ব ক্ষেত্রে বুক ফুলিয়ে এগিয়ে চলে। এদের ভিতরে কোন অসততা নেই। রাষ্ট্রের অর্থ লুকানোর কোন রকম ফাঁক ফোঁকর নেই। আপনি ইচ্ছে করলেও তা পারবেন না। ধরা পড়ে যাবেন। আমেরিকার নিয়ম কানুন সিস্টেমের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের গবেষনা করার সময় এসে গেছে। হুট করেই নেতা হওয়া যায় না। বছরের পর বছর কাজ করে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। জনগণই বলে দেন তোমাকে আমাদের দরকার। সেভাবেই এদেশের নেতা নেতা হয়।
এখানকার নেতারা জানেন কিভাবে নেতা হতে হয়। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাদের সৎ থাকতে হয়। জীবনের মত জীবন না কাটিয়ে বিখ্যাত হওয়া যায় না। এদেশের নেতারা তা জানেন। সুন্দর জীবন গড়তে হলে সুন্দর মন থাকা দরকার। করোনা কালে আমরা কি দেখলাম। দেশের নাগরিকের জন্যে নিরবে মানুষকে সাহায্য করে যাচ্ছেন অবিরাম।
করোনা কালিন সময়ে ডাক্তারের ফোন আসে আমার অসুস্থ স্ত্রীর কাছে। ডাক্তার জানতে চান তিনি ভালো আছেন কিনা। ডাক্তার কথা বলতে পারছেন না কেবল কাশছেন। ডাক্তারকে বললাম তুমি তো কথা বলতে পারছোনা। উত্তরে আমেরিকান ডাক্তার বললেন আমি খুবই অসুস্থ, আমার করোনা পজেটিভ। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। রুমে বসেই অনলাইনে আমার রোগীদের সেবা দিচ্ছি। যদি মরে যাই, তার আগেই আমার রোগীদের দ্রুত সেবা দিয়ে যেতে চাই। এটিই আমার কাজ।
তার কথাটি শুনে ক্ষনিকেই মন শিহরিত হয়ে উঠেছে আমার। বলছেন কি ডাক্তার এ কেমন মানুষ। রোগীদের জন্য এ কেমন মায়া। চোখ দুটি ছলছল করে উঠেছে আমার। চিন্তা করতে পারেন এরা কেমন মানুষ। কেমন মন নিয়ে এরা মানুষের সেবা দেন। সেবার মন নিয়েই এদেশের মানুষেরা জন্ম নেয়। ভাবলে অবাক হবেন, এখানকার ডাক্তার, নার্স, ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স ড্রাইভার, ক্লিনার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ করোনাকালে যেভাবে রুগীদের পাশে দাড়িয়েছেন তা ভেবে এখনো চোখের জল এসে যায়।
এই করোনাকালে মানুষের সেবা দিতে গিয়ে শয়ে শয়ে ফ্রন্ট লাইনের হিরোরা মারা গেছেন আমেরিকায়। তাদের সাথে আমাদের সেই প্রানের ডাক্তারটিও মাছের ফ্রিজের ভ্যানে লাশ হয়ে প্লাস্টিক ব্যাগে ঢুকে গেছেন। তা ভেবে মনের কান্না থামেনা এখনো। ডাক্তার আর রোগী হাত ধরে এক সাথে মারা গেছেন। আজও হাসপাতাল গুলোর সামনে তাঁদের স্মৃতিকথা লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে। পথচারিরা প্রতিদিন ফুলের মালায় স্মরণ করে যান চোখের জল দিয়ে। রাষ্ট্র তাঁদের রেখেছে পরম যত্ন করে আজীবনের শ্রদ্ধায় ভালোবাসা দিয়ে।
তার বিপরীতে বাংলাদেশ যেন বিশ্ব দরবারে তার লজ্জাবনত মুখ নিয়ে অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ দিনে দিনে কি পরিণতির দিকে যাচ্ছে। এরা যে কি পরিমাণ পশু ইতর হয়ে গেছে তা ভাবলে অবাক লাগে। পশুর ও তো ধর্ম আছে, এরা তো দেখি পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেছে। আদর্শ আর রাজনীতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। এত এত দূর্নীতি হচ্ছে দেখবারও কেউ নেই। লুটের জন্যই যেন এই সরকার এসেছে। মানুষ দেখছে সবই, বলে না কেউ, চোখ মেলে তাকিয়ে আছে শুধু, বলে কি হবে। শুনবার কে আছে। করোনা কালেও রাজনীতির নামে নেতারা মানুষদের গলা চেপে ধরেছে। রাষ্ট্রের অর্থ তারা কিভাবে খাবে, অর্থের জন্য এরা বেয়ায়া হয়ে পড়েছে। আরো অর্থ চাই।
হাসপাতাল মূলত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণ করা হয় মানুষের রক্ত চোষার জন্যে। রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে জিন্মি করে অর্থ আদায় করে। এই অমানুষেরা আবার বাংলাদেশে ভিআইপির সম্মান পায়। এরা সব সময়ই থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। এরা আইনের উর্ধ্বে। আইন তাদের পকেটে। মানুষের থেকে নেয়া অর্থ সম্পদের দাপটে সবাই তাদের ভয় করে চলে। তাদের সম্পদের উৎস কোথায় জেনেও বলে না কেউ। কারণ তারা সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সাথে চলাফেরা করে। এদেরকে বলে কে প্রাণ হারাবে। অর্থের বিনিময়ে কোভিড নাইন্টিনের টেস্ট না করেই নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেয় শত শত মানুষকে। এরা আবার বিদেশে গিয়ে ধরাও পড়ে। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম বছরের পর বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় জালিয়াতি করে চলেছে, আইন তাকে খুজে পায় না। বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি মোতাবেক জেকেজি বিনা মূল্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪৪টি বুথ স্থাপন করে প্রতি দিন ৩/৪ শত মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে টাকা নিয়ে থাকে। এই নমুনা ল্যাবরেটরীতে না পাঠিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে তারা তাদের মত রিপোর্ট দেয় অর্থের বিনিময়ে।
এই সাবরিনা আবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্টার। রাজনৈতিক নামের পদবি ব্যবহার করে এ সমস্ত প্রতারক বাটপারেরা দেশ ও সমাজের নীতি আদর্শ ও মানুষের জীবনের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে। ভালো মানুষ সৎ মানুষ আছে কই। দেশ আজ পেশাদার দূর্নীতিবাজ ঘুষখোর ব্যাংক ডাকাত, বিদেশে অর্থ-পাচারকারীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। আদর্শ রাজনীতি আজ কোথায়। এত এত দূর্নীতি হচ্ছে। এ অর্থ কি দেশে কোন অবদান রাখছে। এ অর্থ তো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবাই ভেবেছিল করোনা মানুষকে বদলে দিবে। করোনা টেস্ট নিয়েও প্রতারণা করবে মানুষ ভাবতে পারেনি। সেটাও ঘটলো বাংলাদেশে। টেস্ট না করে রিপোর্ট দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কারা তাদের কাজ পাইয়ে দিয়েছে? সরকারের উর্ধ্বতন লোকেরা কি দেখে তাদেরকে কাজ দিল। সমাজের চোখে তারা তো সাহেদ সাবরিনা শারমিনদের চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধী। তাদের কি বিচার হবে। দেশে তো একটা দূর্নীতি দমন কমিশন আছে, এদের কাজটা কি। বালিশ আর পর্দার কান্ড কে না জানে। কই সরকারী অফিসের কার কি বিচার হয়েছে কেউ কি দেখেছেন? দেখা যায় সরকার তাদের প্রটেকশন দিচ্ছে।
ডাঃ জাফরউল্লাহ একজন শ্রদ্ধাভাজন মুক্তিযোদ্ধা। জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। দেশের দশের খেদমত করছেন এই বৃদ্ধ বয়সেও। ডাঃ জাফরউল্লাহ সরকারের পছন্দের লোক নাও হতে পারেন। তার রাজনৈতিক ভিন্ন মত থাকতেই পারে। ভিন্ন মত যে কারোরই থাকতে পারে। তাই বলে কি মানুষের জীবনের সাথে রাজনীতি চলতে পারে। অল্প খরচায় মানুষের দ্রুত সেবা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পারলেন না। সরকারের অনুমতি মিলল না। সরকার অনুমতি দিলে হয়তো বহু মানুষের প্রাণ বেঁচে যেতো, মানুষের কষ্টও লাঘোব হত, অল্প খরচায় চিকিৎসা সেবা পেতো, এ সেবা থেকে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করা হলো।
কাদের মাধ্যমে জেকেজি, রিজেন্ট, অপরাজিতা’র মতো অখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো এত বড় কাজ কিভাবে পেলো তা কি জানা গেছে আজো। অথচ ডাঃ জাফরউল্লাহ এমন একজন দেশপ্রেমিক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গেছেন, দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন সারাটি জীবন। নিজের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্যের আবিষ্কৃত কিট দিয়ে মানুষের করোনা পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। শত চেষ্টা করেও সরকারের থেকে অনুমতি মিলল না। আর সাবরিনা সাহেদ কি ডাঃ জাফরউল্লাহর চেয়েও ভালো হয়ে গেল। সব কিছু টাকার খেলা, কোটি কোটি টাকার খেলা। মানুষের জীবনের বিনিময়ে এ টাকার খেলা। আমলারা সবাই এ টাকার খেলায় মেতে আছে। ডাঃ জাফরউল্লাহকে অনুমতি দিলে সরকারের এত এত টাকা ও তো লাগতো না। তা হলেও তো মানুষগুলোর প্রাণ বেঁচে যেতো। মানুষের জীবন নিয়ে আপনারা এমন করলেন। শাহেদ তো র্যাব, পুলিশের কাছে তার মদদদাতাদের নাম বলেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কই কার কি হলো?
ক্যাসিনো কান্ডের কথা মানুষের ভুলে যাবার কথা না। শত কোটি টাকা লেনদেন হতো। সেখানেও দেশী বিদেশী সুন্দরীরা ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এবার দেখা গেল মানুষের জীবনের বিনিময়ে এ খেলা চলছে। কি এক অচিন্তনীয় ব্যপার। মানুষের জীবনের বিনিময়ে এরা এ সব কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ বিচার পায় না। থানা পুলিশ সাহেদের বিরুদ্ধে কোন নালিশ নিত না। সাহেদের বিরুদ্ধে এখন এত এত কেইচ হয় কিভাবে। সরকারের ইচ্ছা থাকলে সবই হয়। এখন দুদক ও নড়াচড়া দেয়। সরকার চাইলে কি না হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের গাড়ি চালক হয়ে আবদুল মালেক ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিলাস বহুল বাড়ি, দামি পাজেরো গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনেক রাঘব বোয়ালদের নাম প্রকাশ করেছে। সাবেক দুই ডিজির সাথে তার সখ্যতা ছিল।
তাঁকে গ্রেফতারের পর আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র্যাব। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে বিপুল পরিমান অর্থ গচ্ছিত রয়েছে তার। মালেক কি একাই এসব অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন? বসেরা কি কিছুই জানেন না? মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাজেরো গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এখন কথা হলো বসদের ধরবে কে? এদের ফিতা তো অনেক লম্বা। হাজার কোটি টাকার মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানী আফজাল। তিনি সব মিলিয়ে ৩০,০০০ টাকার মতো বেতন পান। অথচ চড়েন হাভ্যিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে আছে ৫টি বাড়ি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় আছে ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। আছে দেশে বিদেশে বাড়ি মার্কেট সহ অনেক সম্পদ। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে।
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংকটকালে রুগ্ন স্বাস্থ্যখাত যেন সোনার খনি। ড্রাইভার, পিয়ন, দারোয়ান, কেরানী থেকে শুরু করে উপরের স্তরে বিস্তৃত রথি মহারথীরা করেন হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। এই হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জীরো টলারেন্সের ঘোষণা। বিগত দশ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে নিচ থেকে উপরের স্তরের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। দেশের মানুষের চিকিৎসা হয় না। এর বিস্তৃতি যতই উপরের দিকে যাচ্ছে ততই উপরের তলার রাঘব বোয়ালদের নাম বেড়িয়ে আসছে। দেশে তো একটা দুর্নীতি দমন কমিশন আছে। তারা কিছু খুঁজে পায় না। এই হল একটা দেশের অবস্থা। আপনি কাকে কি বলবেন। বসদের হাত ধরে একজন ড্রাইভার কেরানীর যদি হয় এমন অবস্থা তাহলে বসদের কি অবস্থা। তারা কখনই দৃশ্যমান হয় না। তাদের ঘটনা লোক চোখের আড়ালেই চলে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের পদত্যাগই কি যথেষ্ট হয়ে যায়? কেন তাঁকে তদন্তের আওতায় আনা গেলো না। কোন অদৃশ্য ইংগিতে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
মোসাদ্দেক চৌধুরী আবেদ, আমেরিকান প্রবাসী লেখক, প্রেসিডেন্ট ও সম্পাদক
Posted ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh