চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০
শেখ হাসিনা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে। প্রায় একযুগ ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশীদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড করেছেন। কিন্তু মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়। পরিস্থিতি যেন একত্তরকেও হার মানিয়েছে। সরকারের তল্পীবাহক হলে সমস্যা নেই। ভিন্নমত পোষন করলেই শেষ। দিনে দুপুরে লোকজনকে তুলে নিচ্ছে। তারপর বেমালুম উধাও। কিছু বলাও যাবে না, বললে রক্ষা নেই। একাত্তরে পাক বাহিনীও এরকম লোকজনকে ওঠিয়ে নিত। তারপর কখনও লাশ পাওয়া যেত, কখনও পাওয়া যেত না। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও পরিস্থিতি একই রকম। ইলিয়াস আলী নিখোজ। এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করতে পারতাম যদি এরকম ঘটনা আর না ঘটতো। কিন্ত অপহরন ও গুম এখন নিত্ত নৈমিত্তিক ঘটনা। এই আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।
সুখরঞ্জন বালী দিনে দুপুরে পুলিশের সামনে সুপ্রীম কোর্টের গেট থেকে অপহৃত হয়েছেন। তার অপরাধ তিনি সরকারের সাজানো নাটকে অভিনয় করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তাকে পাওয়া গেছে সীমান্তের ওপারে। সরকারের কোন ব্যাখ্যা নেই। বাংলাদেশের কোন সাংবাদিক এ ঘটনা লিখতে সাহসী হননি। ডেভিড বার্গম্যান ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন বলে লিখতে পেরেছিলেন।
সুখরঞ্জন বালীকে যখন তুলে নেওয়া হয় তখন মোবাইল ফোনে তোলা একটি ছবি আসামী পক্ষের আইনজীবি শিশির মনির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হককে দেখিয়ে ছিলেন। তিনি ছবিটি গ্রহন করেননি। উল্টো শিশির মনিরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এই ধরনের অস্পষ্ট ছবি যেন ভবিষ্যতে তার কাছে আনা না হয়। তারপর নিখোজ হয়েছেন মীর কাশেম আলীর ছেলে মীর আরমান, গোলাম আজমের ছেলে আব্দুল্লহিল আমান আজমি এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীসহ অনেকে। সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সাথে সরকারের কি রফা হয়েছে জানিনা, বেশ কিছুদিন পর হুমাম কাদের ফিরে এসেছেন। এরপর এ প্রসঙ্গে সরকার বা সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবার কেউই মুখ খুলেননি। পরিবারের মনোভাব এরকম যে ছেলে ফিরে এসেছে এই যথেস্ট। এনিয়ে ঘাটাঘাটি করার দরকার নেই।
দেশ আজ ভারতপন্থী তস্করদের হাতে। ওরা দেশে একটি দালাল শ্রেনী তৈরী করেছে। সরকার বা ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন তো পাঠিয়ে দেবে পরপারে, না হলে সীমান্তের ওপারে। অতএব সাবধান। ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। যারা ভেবে চিন্তে বলেননি তাদের পরিণাম দেখেছেন তো। শুধু ফেসবুকে লিখার জন্য জীবন দিতে হয়েছে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে।
শত শত সাংবাদিককে দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তারা প্রাচুর্য্যের সন্ধানে বা উন্নত জীবন যাপনের জন্য বিদেশে যাননি। তারা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন জীবন বাচাতে। অনেকে বিদেশ থেকে ইউটিউব চ্যানেলে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু বেশীরভাগ সাংবাদিককে এমন সব কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে, যে পেশার সাথে তারা পরিচিত ছিলেন না।
ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়ার সাথে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছবি প্রকাশ করেছিলেন। এরপর ১০ মার্চ হাতিরপুলের অফিস থেকে বের হওয়ার পর অপহরণের শিকার হন। বেনাপোল সীমান্তের কাছ থেকে ২ মে তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকে ২২ জুন পর্যন্ত যশোর কারাগারে ছিলেন। অপহরনের ৫৩ দিন চোখ বাধা অবস্থায় ছিলেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। তার চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একটি হাত নাড়াতে পারেন না, রক্ত বমি করছেন। এই অবস্থায় তার চিকিৎসা দরকার। কিন্তু তিনি এখনও কারাগারে আটক। কারন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন সরকার দলীয় সাংসদ সাংসদ সাইফুজ্জমান শিখর সহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। ঘটনার ধারাবাহিকতা থেকে বিষয়টি পরিস্কার। বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি প্রকাশ করলেন। তারপর অপহরন, তারপর উদ্ধার, মামলা ও কারাবাস। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।
সবকিছুরই শেষ আছে। অন্যদেশের দালালী করে আর দলীয় চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে জনসমর্থনহীন একটি সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে। বাংলাদেশে শেখদের শাসনের নিশ্চয় অবসান ঘটবে। আপাতত সেই সুদিনের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
Posted ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh