চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২
বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথম রাউন্ডের পর নকআউট পদ্ধতি চালু হয় ১৯৮৬ সালে। বাড়ানো হয় অংশগ্রনকারী দলের সংখ্যাও। এর আগে স্পেনে অনুষ্ঠিত ১৯৮২ বিশ্বকাপে ১৬ দল চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রাথমিক পর্বে অংশ গ্রহন করে। এর মধ্য থেকে সেরা ১২ দল দ্বিতীয় পর্বে চারটি গ্রুপে অংশ গ্রহন করে। প্রত্যেক গ্রুপের শীর্ষ দলটি সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পায়। ইটালী, পশ্চিম জার্মানী, পোল্যান্ড ও ফ্রান্স সেমিতে অংশ নেয়। ফাইনালে ইটালী পশ্চিম জার্মানীকে ৩-১ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এরপর ১৯৮৬ সালে ২৪ টি দল ছয়টি গ্রুপে প্রাথমিক পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রত্যেক গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল ও সেরা দুটি তৃতীয় স্থান অধিকারী দল দ্বিতীয় পর্বে নক আউট পর্বে খেলার সুযোগ পায়।
এই বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচ বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। এর আগে ১৯৮২ মাত্র ছয়টি ম্যাচ সম্প্রচার করেছিল। এই বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ফ্রান্সও বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি দল হয়ে ওঠে। মূলতঃ মিশেল প্লাটিনিকে কেন্দ্র করেই গঠিত হয় ফ্রান্স দলটি। আর আর্জেন্টিনাতো ছিল ওয়ান ম্যান শো। ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল দলটি। যদিও সেই দলে জর্জ বুরুচাগা ও জর্জ ভালডানোর মত খেলোয়াড়রা ছিলেন কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী এইট মিলিয়ন ডলার ম্যান খ্যাত মারাডোনা। শুরু থেকেই প্রচন্ড দাপটের সাথে খেলে চ্যাম্পিয়ন হলেও এই টুর্নামেন্টের আকর্ষন অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে ব্রাজিলের বিদায়ের পর।
আর্জেন্টিনা যেমন ম্যারাডোনার নির্ভর দল হয়ে ওঠেছিল ব্রাজিল কিন্তু সেরকম ছিল না। বেশ কয়েকজন তারকা খেয়োয়াড় সমৃদ্ধ ব্রাজিল প্রকৃত অর্থেই ছিল একটি ব্যালেন্সড দল। জিকো, সক্রেটিস, কারেকা, ব্রাঙ্কো, এডিনহো, মুলার ও এলমাওয়ের মত কুশলী খেলোয়াড়রা দলকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিশেল প্ল্যাটিনির দলের কাছে টাইব্রেকারে হেরে প্রতিযোগীতা থেকে বিদায় নিতে হয়। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ফাইনাল দেখবেন বলে যারা আশা করেছিলেন তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তবে ব্রাজিল-ফ্রান্স ম্যাচটি বিশ্বকাপের একটি ক্লাসিক ম্যাচ হয়ে থাকবে। সেদিন খেলাটি যারা দেখেছিলেন তারা ব্রাজিল ও ফ্রান্সের ফুটবল নৈপূণ্য ও খেলার শেষ দিকে জিকোর পেনাল্টি মিস এখনও মনে রেখেছেন। উভয় দলের আক্রমন ও পাল্টা আক্রমনের মধ্য দিয়ে ম্যাচটি শুরু হয়। সতের মিনিটে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে নিয়ে যান কারেকা। ফ্রান্সের পক্ষে ৪১ মিনিটে গোল করে সমতা আনেন প্ল্যাটিনি। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ব্রাজিলের জিকো। এর আগে পেনাল্টিতে ২০০ গোল করার অভিজ্ঞতা থাকলেও সেদিন ফ্রান্সের গোলরক্ষক জোয়েল বাটসকে পরাজিত করতে পারেননি তিনি। এরপর অতিরিক্ত সময়েও কোন গোল না হওয়ায় খেলা টাইব্রেকারে গড়ায়। শুরুতেই পেনাল্টি মিস করেন ব্রাজিলের সক্রেটিস। টাইব্রেকারে এবার ঠিকই গোল করতে সমর্থ হন জিকো। এরপর প্ল্যাটিনিও পেনাল্টি মিস করলে আবারও ব্রাজিলের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু এরপরই জুলিও সিজারও পেনাল্ট মিস করলে ব্রাজিলকে সেমিফাইনালের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়।
এই বিশ্বকাপের আরেকটি কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ইংল্যান্ডকে ২-১ পরাজিত করে। দুটি গোলই করেন ম্যারাডোনা। প্রথম গোলটি ছিল ম্যারাডোনার বহুর আলোচিত ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে করা গোল। এরপর মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে পাচ/ছয় জনকে কাটিয়ে সেই বিখ্যাত গোলটি করেন তিনি। ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার একটি গোল পরিশোধ করলেও ইংল্যান্ড পরাজিত হয় ২-১ গোলে। লিনেকার মোট ছয়টি গোল করে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার গৌরব অর্জন করেন।
Posted ২:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh