চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল : | বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনাল শেষে আর্জেন্টিনা তৃতীয়বারের মত জিতে নিল বিশ্বকাপ ফুটবল শিরোপা। তৃতীয় শিরোপাটির জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন যুগ। আর্জেন্টিনা প্রথম বিশ্বকাপ জেতে স্বদেশের মাটিতে ১৯৭৮ সালে। এরপর দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিততে বেশী সময় নেয়নি। মাঝে একবছর গ্যাপ দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ জয় করে ১৯৮৬ সালে। এরপরের আসরেই আবারও ফাইনালে ওঠে তৃতীয় শিরোপার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। কিন্তু ফাইনালে জার্মানীর কাছে হেরে যায় ১-০ গোলে। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পালা।
আর্জেন্টিনার এবারের সাফল্য তাদেরকে শুধু তৃতীয়বারের মত শিরোপাই এনে দেয়নি, অধিনায়ক লিওনেল মেসির ব্যাক্তিগত এচিভমেন্টের ক্ষেত্রেও এটি একটি বিশাল অর্জন। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকা হয়ে ওঠেছিলেন মেসি। শুধু বিশ্বকাপ জেতাটাই বাকী ছিল। ধারনা করা হচ্ছে এটাই ৩৫ বছর বয়স্ক মেসির শেষ বিশ্বকাপ। শেষ সুযোগটি হাতছাড়া করেননি মেসি। বিশ্বকাপ জিতে নিজের বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারকে পূর্ণতা দিয়েছেন।
মেসির জন্মের এক বছর আগে শেষবার বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার জন্য দরকার ছিল আরো একটি শিরোপা, যা নাগালের মধ্যে এসেও ফসকে যাচ্ছিল বারবার। এবারের ফাইনালে ফ্রান্সও নেমেছিল তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে। আর্জেন্টিনাকে তাড়া করে গেছে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি পেনাল্টি শুট আউট ব্যর্থতার জন্য। এখন যে ফরম্যাটে বিশ্বকাপ হয় তাতে শুধু ভালো খেললেই হয়না। পেনাল্টি শটেও দক্ষতা থাকা দরকার।
ফ্রান্সের চেয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস পুরোনো। আর্জেন্টিনা প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ১৯৭৮ সালে, আর ফ্রান্সের সাফল্য আসে আরও ২০ বছর পর ১৯৯৮ সালে। উভয়দলই বিশ্বকাপ জয়ের সূচনা করে স্বদেশের মাটিতে। এবারের মত ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালেও উভয় দল খেলতে নেমেছিল তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে। কিন্তু পেলেদের ব্রাজিল ফাইনাল ম্যাচটি একতরফা করে নিয়ে ইটালীকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে। ইটালীকে তৃতীয় শিরোপা জিততে আরও বার বছর অপেক্ষা করতে হয়।
মেসির মত ওটাও ছিল পেলের শেষ বিশ্বকাপ। পার্থক্য শুধু এটি মেসির প্রথম সাফল্য। পেলে এর আগে ব্রাজিলকে আরও দু’বার বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। মেসির মত অধিনায়ক না হলেও পেলে বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল দলে ছিলেন। আর্জেন্টিনার প্রথম সাফল্য যদিও এসেছে ১৯৭৮ সালে, প্রথম বিশ্বকাপেই তারা ফাইনাল খেলেছিল। ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে হেরে রানার্স-আপ হয়ে বাড়ী ফিরতে হয়েছিল মেসি, ম্যারাডোনার পূর্বসূরীদের। আর্জেন্টিনার গিয়ের্মো স্ট্যাবল ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে তারকা হিসেবে সবার দৃস্টি কেড়েছিলেন ।
এবারের বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে না পারলেও ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে। এর আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথম হ্যাটট্রিক করছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট্র ১৯৬৬ সালে। ইংল্যান্ড ফাইনালে পশ্চিম জার্মানীকে ৪-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অবশ্য তখনকার আইন অনুযায়ী হ্যাটট্রিক করতে হলে পরপর তিনটি গোল করতে হতো। জিওফ হার্স্ট্রের তিনটি গোল পরপর ছিলনা। ইংল্যান্ডের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন মার্টিন পিটার্স। এবারের ফাইনালে এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক নিয়ে কোন সংশয় নেই। জিওফ হার্স্ট্রের তৃতীয় ও জয়সূচক গোলটি ছিল বিতর্কিত। খেলাটি টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হলেও তখন গোললাইন ট্যাকনোলজির ব্যবহার ছিল না। হার্স্ট্রের শটটি বারপোস্টের ভেতরের দিকে আঘাত করে ফিরে এসেছে বলে রেফারী গোল দেন। কিন্তু জার্মানরা এ সিদ্ধান্তটি কখনোই মেনে নিতে পারেনি।
পরিশেষে, এশীয়া এবারও খালীহাতে ফিরিয়ে দেয়নি ল্যাটিন আমেরিকাকে। কোরিয়া ও জাপানের যৌথ আয়োজনে এশীয়ায় প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০২ সালে। তখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। এতদিন যে ট্র্যাডিশন ছিল বিশ্বকাপ ইওরোপে হলে ইওরোপীয় দল জেতে, আমেরিকায় হলে দক্ষিন আমেরিকার দল চ্যাম্পিয়ন হয় এর ব্যাতিক্রম দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ইওরোপীয় দলগুলির দাপটে ল্যাটিন আমেরিকার দলগুলি কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। আর্জেন্টিনা এবার এশীয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ জয় করে ২০ বছর পর বিশ্বফুটবলে আবারও ল্যাটিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
Posted ২:৩১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh