ড. মাহবুব হাসান : | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
নিউ ইয়র্কে এবারই প্রথম আগাম ভোট দেবার সুযোগ হলো এখানকার ভোটারদের। তবে দেশ জুড়েই অ্যাবসেন্টি ব্যালট সংগ্রহ করে মেইলে ভোট দেবার প্রচারণা আমি লক্ষ্য করেছি এই দুটো বিষয়ই আমার কাছে মনে হয়েছে অভিনব। কারণ আমাদের রাজনৈতিক গণতন্ত্রের স্ট্যাকচারের সংস্কৃতিতে এ-রকম কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে ইলেকমনের দিনই কেবল ভোট দেবার রীতি।
সেটাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। সময়ের অভাবে অনেক ভোটারই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। তার সাথে যোগ হয়েছে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি। সেটাই এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা উঠলেই ভোট কারচুপির ঘটনা এখনশেধ্যরাতে ভোট ডাকাতিতে পরিণত হবার কথা উঠে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রে এই মেইলে আগাম ভোট প্রদানের সূচনা বেশ আগে থেকেই। এখন ডিস্ট্রিক্ট অব কলামবিয়াসহ ৪৪টি স্টেটে আগাম ও মেইল ভোট দেবার ব্যবস্থা আছে। ডেলাওয়ারে ২০২২ সালের আগে এই ধারা চালু হবে না। ৬টি স্টেটে সুযোগ নেই এখনো। স্টেটগুলো হচ্ছে সাউথ ক্যারোলাইনা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মিসৌরি, কানেকটিকাট ও কেনটাকি। এই আগাম ভোট ও মেইলে ভোট প্রদানের ব্যবস্থাটি কেবলমাত্র জাতীয় নির্বাচনের জন্য।স্থানীয় নির্বাচনে ও প্রাইমারি নির্বাচনে অন্য ব্যবস্থা রয়েছে। নির্বাচনের ১/২দিন আগে মেইলে ও আগাম ভোটিং বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্টেটে আর্লি ভোটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিন-ক্ষণ নির্ধারণ হয়ে থাকে। ইলেকশন দিন থেকে ৪৫ দিন আগে আগাম ও মেইল ভোট শুরুর রেওয়াজ আছে। এর গড় হিসেবে আর্লি ভোট হয় ২২ দিন আগে থেকে। আর্লি ভোট শুরু হতে পারে নির্বাচনের ৪ দিন আগে থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে। এখানে সাধারণ গড় হচ্ছে ১৯ দিন। ২০ টি স্টেটে এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়াও ছুটির দিন শনিবারে ভোট গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও চারটি স্টেট যেমন ম্যাসাসুসেটস, ক্যানসাস, ক্যালিফোরনিয়া, ভারমন্ট কাউন্টি ক্লার্কের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি যদি মনে করেন যে শনিবারেও ভোটে নেবেন, তাহলে তাই হবে। আর আইন যখন সাপোর্ট দেবে তখন ডেলাওয়ার ও ভার্জিনিয়া ছুটির দিন শনিবারেও ভোট নেবে।
রোববারে ভোট নেয় ৫টি স্টেট। সেগুলো হচ্ছে আলাস্কা, ইলিনয়, মেরিল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক ও ওহাইও। ক্যালিফোরনিয়া, জর্জিয়া, মিশিগান , নেভাদা এবং ম্যাসাচুসেটস—এই ৫ রাজ্য রোববারে ভোট গ্রহণ করবেন কি না তা নির্ধারণ করেন কাউন্টি ক্লার্ক। ফ্লোরিডা রোববারসহ ১০ দিন ভোট নেবার ব্যবস্থা রেখেছে জাতীয় ও স্টেট নির্বাচনে। ডেলাওয়ারও এই ধারা শুরু করবে ২০২২ সালে।
গতকাল ২৭ অক্টোবর আমার এক পরিচিত জন আগাম ভোট দিয়ে এলেন। তিনি খুব খুশি। কারণ প্রায় সব ভোটই পাচ্ছে ডেমোক্র্যেটরা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি এবার সিনেটের ৬টি আসনেও ভোট হচ্ছে। ওই আসনগুলো বর্তমানে রিপাবলিকানদের দখলে । সে-কারণে সিনেটে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। রিপাবলিকান ৫২ আর ডেমোক্র্যাট ৪৮। দিন কয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টে অ্যামি ব্যারেটকে পাশ করিয়ে নিয়েছে তারা ৫২- ৪৮ ভোটে। এবার তাই ডেমোক্র্যাটরা মিনিমাম তিনটি সিনেট আসনে জিততে চায়। তাহলেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে। তাহলে হাউজ এবং সিনেটতাদেরই দখলে আসবে। এখন শুধু হাউজই ডেমোক্র্যাটদের দখলে। এ-কারণেই খুব জোর প্রচারণা চালিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। সেই ৭০ দশকের শেষ ভাগের রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার. এবং রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন ও বারাক হোসেইন ওবামাও এবার জো বাইডেনও কামাল হারিসের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।
আমেরিকান নির্বাচনের একটি ট্রেইন্ড হচ্ছে কোন দল কতো পরিমাণ অর্থ ডোনেশন পেলো। ওই ডোনেশনের ভেতর দিয়ে তারা জনগণের আস্থা আয় করে। আর জনগণের আস্থা অর্জন মানেই তিনি পপুলার ভোটারদের কাছে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ফান্ড তারা রেইজ করতে পেরেছে। শুধু ফ্লোরিডাতে ব্যয় করার জন্য একজন বিলিওনিয়ার একশ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে জো বাইডেন-কামালা হ্যারিসকে। সুইং স্টেটের মধ্যে ফ্লোরিডার অবস্থান খুবই নাজুক উভয় দলের কাছেই। কারণ ওই স্টেটের ভোটার জনগণ প্রায় সমান সমান মতামত দিয়েছে জনমত জরিপে। সে-কারণেই ডেমোক্র্যাটরা সেখানে প্রচারণা তুঙ্গে তুলে দিয়েছে।
নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ৫দিন। এবার রিপাবলিকানদের দখলে থাকা অনেক স্টেটের ভোটাররাই বর্ণবাদিতার ঘোর কাটিয়ে বেরিয়ে আসছে, যা জনমতে প্রতিফলিত হয়েছে। পেনসিলভানিয়া তার একটি। মোট ৬ ভিন্ন মতে ৮টি রাজ্যেই ডেমোক্র্যাটদের ভোট পাওয়ার পজিশন ভালো। গড়ে ডেমোক্র্যাটরা অনেক পয়েন্টে এগিয়ে আছে। সেই বিবেচনায় বলা যেতে পারে প্রেসিডেন্সিতে জো বাইডেন যাচ্ছেন।
১০/২৮/২০২০
Posted ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh